গাজা যুদ্ধের এক বছর

বর্বরতার রেকর্ড ভেঙেছে ইসরায়েল

নিহত প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলে হামাস যে হামলা চালিয়েছিল, তা ছিল 'মহিমান্বিত' এক বছরে ইসরায়েলে ২৬ হাজার রকেট নিক্ষেপ, নিহত ৭২৮ সেনা

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গত এক বছরে পুরো ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ডকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। তারপরও হামলা বন্ধ হয়নি। ইসরায়েলি হামলায় খান ইউনিসে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই ভবনের ছবিটি তোলা হয়েছে সোমবার -রয়টার্স অনলাইন
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলা গাজা যুদ্ধে বর্বরতার রেকর্ড ভঙ্গ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলার মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল। এই সংঘাতের ফলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার মানুষ। ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় ফিলিস্তিনি ছিটমহলটির প্রায় ৪২ হাজার বাসিন্দা নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখের মতো ফিলিস্তিনি। দখলদার দেশটির হামলায় ভূখন্ডটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। হামলার বছর পূর্তি হলেও এখনো যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো প্রতিদিন শোনা গেছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও মৃতু্যর খবর। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১১ হাজারের বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। থামছেই না ইসরায়েলি বর্বরতা আরও ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত এত মানুষের মৃতু্য স্বত্বেও গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলি হামলা থামছেই না। ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আড়াই শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এতে করে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ৮৭০ জনে পৌঁছেছে বলে রোববার অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিকদের অবিলম্বে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির থেকে পালানোর নির্দেশ দেওয়ার পরই সেখানে ভারী বোমাবর্ষণ শুরু করে। এতে অন্তত ১৭ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ৯ জনই শিশু। আইডিএফ মুখপাত্র আভিচায় আদরায়ে বলেছেন, গাজার বেইত হানোউন, জাবালিয়া ও বেইত লাহিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তিনি আরও বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ভূমধ্যসাগর উপকূলে সরু উপত্যকা আল-মাওয়াসিতে নতুন মানবিক এলাকা তৈরি করা হয়েছে। বাসিন্দাদের তাৎক্ষণিকভাবে এলাকা ছেড়ে সেখানে যাওয়া উচিত। আইডিএফ-এর তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে, সালাহ আল-দ্বীন সড়ক দিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়সীমা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা (স্থানীয় সময়)। তবে এর আগেই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ৭ অক্টোবরের হামলা ছিল মহিমান্বিত :হামাস এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হওয়ার দিন এক ভিডিও বার্তায় বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস যে হামলা চালিয়েছিল, তা ছিল 'মহিমান্বিত'। ভিডিও বার্তায় কথা বলেছেন হামাসের জ্যেষ্ঠ মুখপাত্র খলিল আল-হায়া। তিনি বলেছেন, 'শত্রম্নরা পুরো বিশ্বের সামনে এমন একটি বিভ্রম সৃষ্টি করেছিল যে, শ্রেষ্ঠত্ব ও সক্ষমতায় তারা অদ্বিতীয়। তাদের সেই বিভ্রম ভেঙে দিয়েছে গত ৭ অক্টোবরের হামলা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলা এ কারণেই মহিমান্বিত।' তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ, বিশেষ করে গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা তাদের প্রতিরোধ, দৃঢ়তা এবং রক্ত দিয়ে নতুন ইতিহাস রচনা করছেন।' হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের সবাই গত প্রায় এক যুগ ধরে কাতারে বসবাস করছেন। খলিল আল-হায়াও কাতার থেকেই ভিডিও বার্তাটি দিয়েছেন। গত ৩১ জুলাই এক আততায়ীর হামলায় হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার পর থেকে গোষ্ঠীটিতে গুরুত্ব বেড়েছে হায়ার। এক বছরে ইসরায়েলে ২৬ হাজার রকেট, নিহত ৭২৮ সেনা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৬ হাজার রকেট হামলা হয়েছে এবং এসব হামলায় প্রাণ গেছে ইসরায়েলের ৭২৮ সেনার। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সোমবার গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর, লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন ও লেবানন থেকে ইসরায়েলে ছোড়া রকেট, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফের তথ্য অনুসারে, যুদ্ধের শুরু থেকে গাজা উপত্যকায় আইডিএফের হাতে প্রায় ১৭ হাজার হামাস এবং অন্য প্রতিরোধ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাও রয়েছেন। ওইদিন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রায় ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করেন এবং আরও ২৫১ জনকে ইসরায়েল থেকে ধরে এনে গাজায় আটক করে রাখা হয়। ইসরায়েলের দাবি, ধরে আনা এবং নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। আইডিএফের তথ্যে বলা হয়েছে, তাদের সেনাবাহিনী আটজন হামাস ব্রিগেড কমান্ডার এবং পাশাপাশি ৩০ জনের বেশি ব্যাটালিয়ন কমান্ডারকে হত্যা করেছে। এ ছাড়াও হামাসের ১৬৫ জন কোম্পানি কমান্ডার এবং একই পদমর্যাদার হামাস নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। যুদ্ধের শুরু থেকে গাজা উপত্যকায় প্রায় ৪০ হাজার ৩০০টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে ইসরায়েল এবং ইসরায়েলের সেনারা প্রায় চার হাজার ৭০০টি টানেল শ্যাফ্‌ট খুঁজে পেয়েছে।