লেবাননে হামলা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাংশের শহরতলীতে রোববার ভোরে বিমান থেকে আবারও ভারী বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে লেবাননের রাজধানী বারবার কেঁপে উঠছিল। বেশ কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বিস্ফোরণের লাল-সাদা রঙের ঝলকানি দেখা গেছে। ইসরায়েল বলেছে, তাদের বিমান বাহিনী বৈরুতের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ইরান সমর্থিত হিজবুলস্নাহ গোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি অস্ত্রাগার ও সামরিক অবকাঠামোয় ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রোববার হামলার আগে এলাকার নাগরিকদের আগাম সতর্কতাসহ বেসামরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
হিজবুলস্নাহর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৈরুতের শহরতলীতে কয়েকদিন ধরে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় হিজবুলস্নাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুলস্নাহ নিহত হওয়ার পর গত কয়েক দিনের এসব হামলায় তার উত্তরসূরি হাসেম সাফিয়েদ্দিনও নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবার লেবাননের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, সাফিয়েদ্দিনের সঙ্গে গত শুক্রবার থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ইসরায়েলের দাবি, হিজবুলস্নাহর সম্ভাব্য নতুন এই নেতার অবস্থানকে লক্ষ্যস্থল করে হামলা চালিয়েছে তারা। তবে সাফিয়েদ্দিনকে নিয়ে হিজবুলস্নাহ এ পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।
নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈরুতের কেন্দ্রস্থলের দক্ষিণে দাহিয়া আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের টানা হামলার কারণে উদ্ধারকর্মীরা সেখানে যেতে পারছেন না। তাই ওই স্থলে কী ঘটেছে, তা এখনো অনুমান করা যাচ্ছে না।
'লেবাননে ৪৪০ হিজবুলস্নাহ যোদ্ধা নিহত'
লেবাননে ইসরায়েলের স্থল বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গত ছয় দিনে সেখানে নিহত হয়েছেন ৪৪০ জন হিজবুলস্নাহ যোদ্ধা। নিহত এই সেনাদের মধ্যে ৩০ জন গোষ্ঠীটির বিভিন্ন পর্যায়ের কমান্ডার ছিলেন। শনিবার রাজধানী জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি। সংবাদ সম্মেলনে হাগারি বলেন, 'আমরা হিজবুলস্নাহ'র সন্ত্রাসীদের লেবাননের উত্তর দিকে ঠেলছি। সন্ত্রাসীদের একটি অংশ এলাকা থেকে পালিয়েছে, বাকিরা আমাদের সেনা সদস্যদের কাছে পরাজিত ও নিহত হয়েছে।'
একই দিন এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেন, 'প্রতিরক্ষা বাহিনী হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে। লক্ষ্যপূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযানে কোনো বিরাম আসবে না, হিজবুলস্নাহকেও কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পারে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এই অঞ্চলটি হিজবুলস্নাহর প্রধান ঘাঁটি এবং গোষ্ঠীটির অধিকাংশ সামরিক স্থাপনার অবস্থান এখানে। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুলস্নাহ। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও।
হিজবুলস্নাহর জ্বালানি ডিপো ধ্বংস
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়ে হিজবুলস্নাহর জ্বালানি ডিপো ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে গোটা এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার গভীররাতে দখলদার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ওই ভয়াবহ হামলা চালায়।
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো বৈরুত শহরের দক্ষিণ উপকণ্ঠে শিয়া সংগঠন হিজবুলস্নাহর ভূগর্ভস্থ স্থাপনা এবং গুদামগুলিতে কমপক্ষে ১৬টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। শনিবার রাতে হামলার সময় শহরে একের পর এক শক্তিশালী বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া গেছে।
লেবাননের সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি জায়গায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক গুদামে আঘাত হেনেছে ইসরায়েল। হামলায় বিশেষ করে, রফিক হারিরি বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার হাইওয়েতে শিয়া ইউনিটগুলির একটি পেট্রল ডিপো ধ্বংস করা হয়েছিল।
অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ করে যাচ্ছেন। আগুন পার্শ্ববর্তী ভবনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর বিমান বৈরুতে আবাসিক এলাকাগুলোতেও দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতেও হামলা চালাচ্ছে।
হিজবুলস্নাহর ক্ষেপণাস্ত্রে ইসরায়েলের
হাইফা শহর লন্ডভন্ড
ইসরায়েলের হাইফা শহর পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম। সেখানে প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের সমাগম হয়ে থাকে। সম্প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এই হাইফা পরিণত হয়েছে এক ভুতুড়ে শহরে। দেখে মনে হবে এটি একটি পরিত্যক্ত নগর।