ইসরায়েলি আগ্রাসনের এক বছর

রক্ত ঝরা ছাড়া গাজায় লক্ষ্য অর্জন হয়নি

এক বছরে ধ্বংস গাজায় ৭৯ শতাংশ মসজিদ ও তিন গির্জা আবারও গাজার মসজিদে ইসরায়েলি বিমান হামলা, নিহত ২৬

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। এই এক বছরে হামাস নিধনের নামে অবিরাম হামলা চলেছে। তারপরও ইসরায়েল তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বরং তাদের হামলার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। রোববারও গাজার বাসিন্দারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে বেড়িয়েছেন বাঁচার আশায়। ছবিটি রোববার উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকা থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার এক বছর পূর্তি হলো আজ। এই এক বছরে ইসরায়েলি বাহিনী পুরো গাজা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাস নির্মূলের নামে চলা এই অভিযানের এক বছরেও ইসরায়েল শুধু রক্ত ঝরিয়েছে, লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। বরং তাদের হামলায় সাধারণ মানুষই নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই এক বছরে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৪২ হাজার মানুষ। আর আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা, বিবিসি গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তপথ ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। ওই দিন শেষ রাত থেকে কয়েক হাজার রকেট ছোড়ার পর বুলডোজার দিয়ে সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে কয়েকশ হামাস যোদ্ধা এবং শত শত ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যার পাশপাশি ২৩৪ জনকে 'জিম্মি' হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় তারা। জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ) যা এখনো চলছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেকদের অধিকাংশের মতে, ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ দেখছে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চল। গাজার ৭৯ শতাংশ মসজিদ তিন গির্জা ধ্বংস ইসরায়েলি বাহিনী গত এক বছরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৭৯ শতাংশ মসজিদ ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। শনিবার (৫ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তীব্র বোমাবর্ষণে গাজার এক হাজার ২৪৫টি মসজিদের মধ্যে ৮১৪টি মসজিদ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে এবং আরও ১৪৮টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মসজিদের পাশাপাশি তিনটি গির্জাও ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া ৬০টি কবরস্থানের মধ্যে ১৯টি ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, এসব ধর্মীয় সম্পত্তিগুলোর ক্ষতির আনুমানিক আর্থিক ব্যয় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কবর অপবিত্র করার, মৃতদেহ উত্তোলন এবং যারা মারা গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে নৃশংস সহিংসতা করার জন্যও অভিযুক্ত করেছে। যেমন কবর ভেঙে মরদেহ নিয়ে যাওয়া ও মরদেহ বিকৃত করা। মন্ত্রণালয় উলেস্নখ করেছে, উপাসনালয় ধ্বংসের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১১টি প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত সুবিধা ধ্বংস করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ২৩৮ জন কর্মচারীকে হত্যা করেছে এবং স্থল আক্রমণের সময় ১৯ জনকে আটক করেছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গাজার ধর্মীয় স্থানগুলোতে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছে। ইসলামিক সংস্থাগুলোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে 'চলমান ধ্বংসের যুদ্ধ' থামাতে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় তার নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার মসজিদে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২৬ ফিলিস্তিনের গাজায় একটি মসজিদে আবারও অতর্কিত বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলে। এ হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৯৩ জন। গাজার দেই আল-বালাহ এলাকায় আল-আকসা মার্টিয়ার্স হাসপাতালের পাশে সাহদা আল-আকসা মসজিদে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। বহু ফিলিস্তিনি মসজিদটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলার বিষয়ে 'এক্স' পোস্টে ইসরায়েল বাহিনী জানিয়েছে, সাহদা আল-আকসা মসজিদটি নিজেদের কাজের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছিল হামাস। এছাড়া হামাস এটিকে 'কমান্ড ও কন্ট্রোল কমপেস্নক্স' হিসেবেও ব্যবহার করছিল। এজন্য সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ দেয়নি ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দেশে দেশে বিক্ষোভ গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যে রক্তপাত বন্ধের দাবিতে শনিবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বিশ্বের প্রধান শহরগুলোতে বিক্ষোভ করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী মধ্য লন্ডনের মধ্য দিয়ে মিছিল করেছেন। এখান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া হাজার হাজার বিক্ষোভকারী প্যারিস, রোম, ম্যানিলা, কেপটাউন এবং নিউইয়র্ক সিটিতে জড়ো হয়েছিলেন। গাজা ও লেবাননে হামলায় ইসরায়েলকে আমেরিকার সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসের কাছেও বিক্ষোভ হয়েছে। নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে বিক্ষোভকারীরা 'গাজা, লেবানন তুমি উঠবে, জনগণ তোমার পাশে আছে' সেস্নাগান দিয়েছেন। তাদের হাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার দাবি সংবলিত ব্যানার ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় রোববার সকালে কমপক্ষে এক হাজার ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারী মার্কিন দূতাবাসের কাছে জড়ো হয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীরা ওয়াশিংটনকে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার দাবি জানান।