লেবাননে প্রবেশ করতে গত তিন-চারদিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েলের সেনারা। শনিবার (৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে আদাইসেহ নামের একটি সীমান্তবর্তী গ্রাম দিয়ে আবারও এই চেষ্টা চালিয়েছিল তারা। তবে হিজবুলস্নাহর প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি
আদাইসেহ গ্রামে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হিজবুলস্নাহর যোদ্ধাদের তীব্র লড়াই হয়। ওই সময় ইসরায়েলি সেনারা পিছু হটে। যেসব সেনা লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে। আদাইসেহ গ্রামের লড়াই নিয়ে দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য জানাতে রাজি হয়নি। এমনকি অভিযানে গিয়ে কত সেনা হতাহত হয়েছে সে ব্যাপারেও মুখ খোলেনি আইডিএফ।
গত দুই সপ্তাহ ধরে গাজার যুদ্ধ অনেকটাই লেবাননের দিকে চলে গেছে। যদিও গাজায় হামলা অব্যাহত আছে। যুদ্ধের অভিমুখ লেবাননের দিকে ঘুরলে হিজবুলস্নাহর প্রধান হাসান নাসরুলস্নাহসহ অনেক উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের হত্যা করে ইসরায়েল। এছাড়া পেজার এবং ওয়াকি-টকিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হিজবুলস্নাহর কয়েক হাজার যোদ্ধাকে আহত করেছে।
ধারণা করা হয়েছিল, এসব হামলার জেরে হিজবুলস্নাহ সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়তে পারবে না। তবে ইসরায়েলি সেনারা স্থল হামলা চালাতে যখন লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা চালানো শুরু করে, তখনই হিজবুলস্নাহর যোদ্ধারা তাদের লক্ষ্য করে গুপ্ত হামলা শুরু করে। এতে করে স্থল হামলার প্রথমদিনই ইসরায়েলের চৌকস ব্রিগেডের আট সেনা নিহত হয়।
এখন পর্যন্ত লেবাননে স্থল আগ্রাসন চালাতে গিয়ে নিজের ৯ সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অথচ হিজবুলস্নাহ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাদের একদিনের হামলায় ১৭ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।
এদিকে, গত ১ অক্টোবর লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে হিজবুলস্নাহর অন্তত ২৫০ জন যোদ্ধা। নিহতদের মধ্যে গোষ্ঠীটির বিভিন্ন পর্যায়ের কমান্ডার ছিলেন ২১ জন, বাকিরা সবাই সাধারণ যোদ্ধা। এছাড়া গত চার দিনে লেবাননে হিজবুলস্নাহর দুই হাজারের বেশি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি সেনারা। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
ইরানের সমর্থনপুষ্ট হিজবুলস্নাহ বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। লেবাননভিত্তিক এই গোষ্ঠীটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংসের জন্য প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পাড়েই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। এই অঞ্চলটি হিজবুলস্নাহর প্রধান ঘাঁটি এবং গোষ্ঠীটির অধিকাংশ সামরিক স্থাপনার অবস্থান এই অঞ্চলে। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুলস্নাহ। পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করে ইসরায়েলও।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় লেবাননে
নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ল
গাজার পাশাপাশি লেবাননেও তীব্র বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গত এক বছর ধরে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪১ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে। অপরদিকে, লেবাননে নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার (৪ অক্টোবর) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, এ নিয়ে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৮০২ জনে। পাশাপাশি এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ৯৬ হাজার ৮৪৪ জন ফিলিস্তিনি।
অন্যদিকে, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ জন লেবানিজ নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১৫১ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, এ নিয়ে গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১১ জনে। পাশাপাশি এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ৯ হাজার ৫৩৫ জন লেবানিজ।
ইরাকি ড্রোন হামলায় দুই ইসরায়েলি
সেনা নিহত, আহত ২৪
অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সেনাদের একটি ঘাঁটিতে ইরাক থেকে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ড্রোন হামলায় দুই ইসরায়েলি সেনা নিহত ও আরও ২৪ জন আহত হয়েছে। 'টাইমস অব ইসরায়েল'সহ দেশটির গণমাধ্যমগুলো হতাহতের এ ঘটনা স্বীকার করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী-আইডিএফ জানিয়েছে, শুক্রবার ইরাক থেকে আসা দুটি ড্রোনের একটি আকাশেই ধ্বংস করা সম্ভব হলেও অপরটি একটি সেনাঘাঁটিতে আঘাত হানে। এর আগে ইরাকের ইসলামি প্রতিরোধ ফ্রন্ট অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সেনা অবস্থান লক্ষ্য করে তিনটি ড্রোন নিক্ষেপের খবর দিয়েছিল।