নিহত ৩৭
বৈরুতে রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলা
হামলার টার্গেট ছিলেন হিজবুলস্নাহর সম্ভাব্য নতুন প্রধান সাফিয়েদ্দিন লেবাননে ইসরায়েলি অভিযানের সাফাই গাইল আমেরিকা ইসরায়েলি হামলা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে লেবানন ছাড়ছেন বিদেশিরা
প্রকাশ | ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
হিজবুলস্নাহকে লক্ষ্য করে লেবাননে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বোমা হামলায় বৈরুত বিমানবন্দরের ঠিক বাইরে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ হামলার টার্গেট ছিলেন হিজবুলস্নাহর সম্ভাব্য নতুন প্রধান হাসেম সাফিয়েদ্দিন। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) মধ্যরাতে এক বৈঠকে ছিলেন হিজবুলস্নাহর সম্ভাব্য নতুন প্রধান হাসেম সাফিয়েদ্দিন। সম্প্রতি গোষ্ঠীটির দীর্ঘমেয়াদি নেতা নিহত হাসান নাসরালস্নাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনি বিবেচিত হচ্ছেন। ইসরায়েলের তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ খবর দিয়েছেন। শুধু এই বৈঠকস্থলই নয়, ইসরায়েল লেবাননে রাতভর হামলা চালিয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৭ জন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বলেন, হিজবুলস্নাহর প্রধান প্রয়াত হাসান নাসরালস্নাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাসেম সাফিয়েদ্দিনকে লক্ষ্য করে বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তবে হামলায় তিনি নিহত হয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। নাসরালস্নাহর চাচাত ভাই সাফিয়েদ্দিন হিজবুলস্নাহর একজন শীর্ষ নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈরুতের কাছে হিজবুলস্নাহর একটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারকে ইসরায়েল টার্গেট করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে সাফিয়েদ্দিনসহ হিজবুলস্নাহর অন্য নেতারা ছিলেন। গত সপ্তাহে নাসরালস্নাহকে হত্যার পর থেকে ইসরায়েল হিজবুলস্নাহর অবশিষ্ট নেতৃত্বকে নির্মূল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, গত শুক্রবার বৈরুতের কাছে ইসরায়েলের ভারী বোমাবর্ষণে নিহতদের মধ্যে তিনি ছিলেন না।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বৈরুত এবং শহরের বাইরে বিস্ফোরণের প্রচন্ড শব্দ শোনা গেছে, যার ফলে ১০ কিলোমিটার দূরের দালান-কোঠাও কেঁপে ওঠে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় 'ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি' জানিয়েছে, পরপর ১০টির বেশি হামলা চালানো হয়েছে। লেবাননের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলীতে এটিই ছিল সবচেয়ে ভয়ানক আক্রমণগুলোর অন্যতম।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বৃহস্পতিবার গভীররাতে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত বুর্জ আল-বারাজনে একটি অঞ্চল খালি করার নির্দেশ দিয়েছিল। মধ্যরাতের দিকে সেই এলাকায় একাধিক বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে। যা বৈরুতের জনবহুল দাহিয়া এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়েছিল। এটি ছিল গত অক্টোবরের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ওই এলাকায় সবচেয়ে বড় হামলা।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭ জন নিহত ও ১৫১ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বৈরুতে ৯ নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন। রাজধানী শহরের কেন্দ্রস্থলে রাতভর একাধিক হামলা চালানো হয়েছিল।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া লেবাননে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আক্রমণে এক হাজার ৩০০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের অভিযানের তিন সপ্তাহেরও কম সময়ে ১২ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছেন। একটি মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, লেবাননের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো উপচে পড়ছে।
লেবাননে ইসরায়েলি অভিযানের
সাফাই গাইল আমেরিকা
মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা থাকলেও লেবাননে ইসরায়েলি স্থল অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়েছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন মনে করে, লেবাননে হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের স্থল ও বিমান হামলা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) এ কথা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, লেবাননে ইসরায়েলি অভিযান সম্প্রসারিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
একটি নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ম্যাথিউ মিলার বলেন, সব যুদ্ধই স্বাভাবিকভাবে পরিবর্তনশীল ও অনিশ্চিত। তাই ইসরায়েলের এই অভিযানের সমাপ্তি কখন ঘটবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে ইসরায়েলের লক্ষ্য হিজবুলস্নাহর অবকাঠামো ধ্বংস করা এবং সীমান্তে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাস্তুচু্যত ইসরায়েলিদের আবার তাদের বাড়িতে ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ইসরায়েল গত মঙ্গলবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সেনা পাঠিয়েছে। দুই সপ্তাহের তীব্র বিমান হামলার পর এই অভিযানে তুমুল লড়াই চলছে। এই সংঘাতে ইরান সরাসরি জড়িত হয়েছে এবং এতে আমেরিকাকেও টেনে আনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মিলার আরও বলেন, 'আমরা শেষ পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতি এবং কূটনৈতিক সমাধান দেখতে চাই। তবে আমরা মনে করি, ইসরায়েল এখন সন্ত্রাসীদের শাস্তি দেওয়ার সঠিক কাজটিই করছে।'
লেবানন ছাড়ছেন বিদেশিরা
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের স্থল অভিযান ও বৈরুতসহ বিভিন্ন স্থানে হিজবুলস্নাহর ঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলা বাড়ার ফলে ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা দেশটি থেকে চলে যেতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাজধানী বৈরুতে হিজবুলস্নাহর অবস্থানগুলোয় ইসরায়েলি হামলার পর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সরকার তাদের নাগরিকদের লেবানন থেকে দ্রম্নত সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কয়েকটি দেশ বিমানযোগে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিলেও অন্যরা জাহাজ বা ফেরিতে করে দেশ ছেড়েছেন।