শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১
মধ্যপ্রাচ্য সংকট

ইসরায়েলি বাহিনী-হিজবুলস্নাহর তুমুল লড়াই

বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত ৯ হিজবুলস্নাহর হামলায় ৮ ইসরায়েলি সেনা নিহত
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় বৃহস্পতিবার লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতে একটি ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় -রয়টার্স অনলাইন

তুমুল লড়াই চলছে ইসরায়েল-হিজবুলস্নাহর। এই হামলা-পাল্টা হামলায় সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কাও ক্রমে বাড়ছে। বুধবার রাতে ইসরায়েল জানিয়েছে, লেবাননের দক্ষিণে হিজবুলস্নাহর সঙ্গে লড়াইয়ে তাদের আট সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, বুধবার গভীর রাতেই লেবাননের রাজধানী বৈরুতের মধ্যভাগে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় অন্তত ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, যে জায়গায় ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে, সেখানে আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা করা হচ্ছিল। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা

সোমবার মধ্যরাত থেকেই লেবাননে 'গ্রাউন্ড অপারেশন' (স্থল অভিযান) শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। লক্ষ্য ইরানের সমর্থনপুষ্ট শিয়া সশস্ত্র সংগঠন হিজবুলস্নাহর গোপন 'নেটওয়ার্ক'। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের ভূখন্ডে আছড়ে পড়েছে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। এই হামলার পরই ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। স্পষ্ট ভাষায় তিনি জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফল ভুগতে হবে ইরানকে। অন্যদিকে, ইরানকে সতর্ক করেছে আমেরিকাও।

বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে ইসরায়েলের

বিমান হামলায় নিহত ৯

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে বুধবার দিবাগত গভার রাতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা লেবাননের রাজধানীতে একটি সুনির্দিষ্ট বিমান হামলা চালিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা ব্যাপক একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন। বৈরুতের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পার্লামেন্টের কাছে বাশুরা এলাকার একটি ভবনকে লক্ষ্যস্থল করা হয়। এই ভবনটি হিজবুলস্নাহর ইসলামিক স্বাস্থ্য সংস্থার মালিকানাধীন। ২০০৬ সালের পর থেকে বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে এটিই ইসরায়েলের প্রথম হামলা।

লেবাননের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। লেবাননের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রম্নপে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন এবং এর প্রথম তলায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। লেবাননে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক জেনিন হেনিস-পস্নাশকার্ট বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম 'এক্সে' লিখেছেন, 'বৈরুতে আরেকটি নির্ঘুম রাত। শহরকে কাঁপিয়ে দেওয়া বিস্ফোরণগুলো গুনছি। কোনো সতর্কতামূলক সাইরেন নেই। এরপর কী হবে জানি না। সামনে শুধু অনিশ্চয়তা। সর্বব্যাপী ভয় আর উদ্বেগ।'

লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, হিজবুলস্নাহ নেতা হাসান নাসরুলস্নাহ যেখানে নিহত হয়েছেন, বৈরুতের দক্ষিণ অংশের সেই দাহিয়ায় তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে আর জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দক্ষিণ লেবাননের যেসব গ্রামের বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন তাদের পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ফিরতে নিষেধ করেছে। আইডিএফের মুখপাত্র অভিচয় আদ্রে বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম 'এক্সে' ওই এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে, বুধবার দক্ষিণ লেবাননে হিজবুলস্নাহ যোদ্ধাদের চোরাগোপ্তা হামলায় তাদের আট সেনা নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। ইরান সমর্থিত হিজবুলস্নাহ গোষ্ঠীর সঙ্গে গত এক বছর ধরে ইসরায়েলের সীমান্ত সংঘর্ষ চলে আসার মধ্যে লেবানন ফ্রন্টে এটিই ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন।

ইসরায়েলি সেনারা লেবাননের সীমান্ত এলাকায় ঢুকে স্থল হামলা শুরুর পর বুধবার তাদের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি লড়াইয়ের খবর জানায় হিজবুলস্নাহ যোদ্ধারা। তারা দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত শহর মারুন-ই-রাস-এ ইসরায়েলের তিনটি মারকাভা ট্যাংক রকেট হামলায় ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও দাবি করেছে।

ওদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনা নিহতের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করে একটি ভিডিওতে বলেছেন, 'আমরা ইরানের শয়তানের অক্ষচক্রের বিরুদ্ধে একটি কঠিন যুদ্ধের টান টান সময় পার করছি। এই চক্র আমাদের ধ্বংস করে দিতে চায়। কিন্তু তা ঘটবে না। কারণ, আমরা একসঙ্গে পাশে থেকে ঈশ্বরের সাহায্যে সবাই মিলে জয় ছিনিয়ে আনব।'

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের নিয়মিত পদাতিক বাহিনী এবং সাঁজোয়া ইউনিট লেবাননে স্থল অভিযানে যোগ দিচ্ছে। গোলানি ব্রিগেড, ১৮৮ সাঁজোয়া ব্রিগেড এবং ষষ্ঠ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৩৬তম ডিভিশন থেকে ইসরায়েলের আরও পদাতিক বাহিনী এবং সশস্ত্র সেনা সংঘর্ষে যোগ দেওয়া মানে এই অভিযান আর সীমিত কমান্ডো অভিযানে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। যদিও ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, লেবাননে তাদের ঢুকে পড়ে যুদ্ধ করার লক্ষ্য হচ্ছে, সীমান্তে সুড়ঙ্গ ও অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস করা। রাজধানী বৈরুত কিংবা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য বড় নগরী লক্ষ্য করে বৃহত্তর অভিযান চালানোর পরিকল্পনা তাদের নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে