দ্বিতীয় 'পুনরেকত্রীকরণ দিবস'
ইউক্রেন নিয়ে ঠিক করা সব লক্ষ্য পূরণ করা হবে :পুতিন
পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কিয়েভে রাশিয়ার ড্রোন হামলা
প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে তার দেশ যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা পরিপূর্ণ করা হবে। সোমবার এক ভিডিও বার্তায় পুতিন এ কথা বলেন। রাশিয়ার দ্বিতীয় 'পুনরেকত্রীকরণ দিবস' বা 'রিইউনিফিকেশন ডে' উপলক্ষে তিনি এ বার্তা দেন। মস্কোর পক্ষ থেকে চারটি অঞ্চল- দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসনকে রাশিয়ার সঙ্গে একত্রীকরণ দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয়। তথ্যসূত্র : গার্ডিয়ান, রয়টার্স
মস্কোর পক্ষ থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে গণভোটের মাধ্যমে একত্রীকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। পশ্চিমা বিশ্বে এ নিয়ে ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনা করা হয়। তবে পুতিনের পক্ষ থেকে অধিকৃত এসব অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে চুক্তি করে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অবশ্য এসব অঞ্চলের পুরোপুরি এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান হামলা শুরু করে। অন্যদিকে, কিয়েভ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিয়েভ মনে করে, ন্যাটো বা ইইউ সদস্য হলে তা তাদের জন্য নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে; কিন্তু রাশিয়া এর বিরোধিতা করে আসছে।
যুদ্ধ শুরুর সময় ২০২২ সালে পুতিন বলেছিলেন, এ লড়াইয়ের লক্ষ্য হচ্ছে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিমুক্ত করা। তবে ক্রেমলিনের এই বিবৃতি কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা প্রত্যাখ্যান করে বলে, নিরস্ত্রীকরণের অজুহাতে সাম্রাজ্যবাদ সম্প্রসারণের কৌশল হিসেবে এ সংঘাত চালানো হচ্ছে।
পুতিন ভিডিও বার্তায় বলেন, 'সত্য আমাদের পক্ষে। যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা হবে।' পশ্চিমা অভিজাতদের সমালোচনা করে পুতিন দাবি করেন, 'রাশিয়াকে লক্ষ্য করে পশ্চিমারা ইউক্রেনে তাদের উপনিবেশ ও সামরিক ঘাঁটি বানিয়েছে। তারা ঘৃণা, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও রাশিয়ান সবকিছুর প্রতি শত্রম্নতা উসকে দিচ্ছে। আজ আমরা আমাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছি।'
কিয়েভে ভয়াবহ ড্রোন হামলা
এদিকে, রাশিয়া সোমবার ভোরে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা রুশ হামলা তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট সফলভাবে শহর রক্ষা করেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা ইউক্রেনের রাজধানীতে অসংখ্য বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। কিয়েভে রাশিয়া যেসব ড্রোন পাঠিয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করার দাবি করেছে ইউক্রেন।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান সের্হি পপকো 'টেলিগ্রাম' মেসেজিং অ্যাপে বলেছেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো বলেছেন, ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ একটি আবাসিক ভবনে পড়েছিল, যেখানে জরুরি পরিষেবাগুলো কাজ করছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী সোমবার বলেছে, তারা রাশিয়ার ৭৩টি ড্রোনের মধ্যে ৬৭টি এবং রাশিয়ার ছোড়া তিনটি ক্ষেপণাস্ত্রের একটি গুলি করে ভূপাতিত করেছে। গভর্নর রুসলান ক্রাভচেঙ্কো রাজধানীর আশপাশের অঞ্চলে গুরুতর বা আবাসিক অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হামলার ফলে ওই অঞ্চলের পাঁচটি জেলায় আগুন লেগেছে, তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মাইকোলাইভের গভর্নর ভিতালি কিম বলেছেন, হামলার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আগুন লেগেছে।
রাশিয়া সেপ্টেম্বর জুড়ে কিয়েভ এবং ইউক্রেনে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে, ইউক্রেনের বিদু্যৎ, সামরিক এবং পরিবহণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে এসব হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন।