লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসন
স্থল হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত হিজবুলস্নাহ
'ইসরায়েল লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। আমরা আগেও জয়ী হয়েছি, এবারও হবো' ইসরায়েলের বিমান হামলা চলছেই নিহত আরও ১০৫
প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
লেবাননের ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ ইসরায়েলের স্থল আক্রমণের জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছেন গোষ্ঠীটির উপ-নেতা নাইম কাসেম। সোমবার অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ভাষণ দিয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন। ইসরায়েলের সর্বশেষ আক্রমণে হিজবুলস্নাহ প্রধান হাসান নাসরুলস্নাহ নিহত হওয়ার পর এটি ছিল কাসেমের প্রথম বক্তব্য। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা
নাইম কাসেম বলেন, 'আমরা যে কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত এবং ইসরায়েল স্থলপথে প্রবেশ করলে আমরা স্থলযুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত।' তিনি আরও বলেন, 'ইসরায়েল লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। আমরা আগেও জয়ী হয়েছি, এবারও জয়ী হবো।' তিনি ২০০৬ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রসঙ্গ উলেস্নখ করেছেন। ওই সময় হিজবুলস্নাহ সফলভাবে লেবাননের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছিল।
কাসেমের বক্তব্যের সময়ও ইসরায়েল লেবাননের রাজধানী বৈরুতসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালাচ্ছিল। এই আক্রমণ দুই সপ্তাহ ধরে চলমান রয়েছে এবং এতে হিজবুলস্নাহর অনেক নেতা নিহত হয়েছেন। লেবানন সরকারের তথ্যমতে, আক্রমণে প্রায় এক হাজার লেবানিজ নিহত হয়েছে।
এবারের ইসরায়েলি হামলায় হিজবুলস্নাহ সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। হাসান নাসরুলস্নাহ দলটিকে লেবাননের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যেও এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল।
নাইম কাসেম বলেন, 'আমরা খুব শিগগিরই দলের নতুন মহাসচিব নির্বাচন করব এবং নেতৃত্বের শূন্যস্থান পূরণ করব।' তিনি বলেন, শিগগিরই নতুন প্রধান বেছে নেবে হিজবুলস্নাহ। আমাদের যে প্রক্রিয়া আছে, সে অনুযায়ী খুব দ্রম্নত হিজবুলস্নাহর শীর্ষ নেতা নির্বাচিত করব। কাসেম বলেন, ইসরাইলি বাহিনী লেবাননে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও গণহত্যা চালাচ্ছে। আর এতে ইসরায়েলকে সহায়তা করছে আমেরিকা।
এদিকে, নাইম কাসেমের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, লেবাননের টাইর শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের নেতা ফাতেহ শেরিফ আবু আল-আমিন নিহত হয়েছেন। একই হামলায় তার স্ত্রী ও সন্তানও নিহত হন। বৈরুতের কেন্দ্রে ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থার (পিএফএলপি) তিন নেতা নিহত হয়েছেন। এটি ছিল লেবাননের রাজধানী সীমানার ভেতরে প্রথম হামলা।
ইসরায়েল হামলা বন্ধ করার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। বরং লেবাননে স্থল হামলা চালানোর শঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। দেশটির সামরিক বাহিনী এই আক্রমণের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ইসরায়েলি সরকার বলেছে, তারা যে কোনো মূল্যে উত্তর সীমান্তে তাদের নাগরিকদের নিরাপদে ফেরাতে বদ্ধপরিকর।
লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি সোমবার বলেছেন, তার সরকার জাতিসংঘের প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত। জাতিসংঘের প্রস্তাবে লেবাননের দক্ষিণে লিতানি নদীর দক্ষিণ অংশ থেকে হিজবুলস্নাহকে সরিয়ে সেখানে লেবাননের সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে। তবে লেবাননের সেনাবাহিনীর শক্তি নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
লেবাননে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী
হামলা চলছেই, নিহত ১০৫
লেবাননে নিজেদের বর্বর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশজুড়ে সর্বশেষ হামলায় আরও শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাড়ে তিন শতাধিক। লেবাননের রাজনৈতিক নেতারা ইমরায়েলি এই হামলা ও হত্যাকান্ডকে 'গণহত্যা' বলে উলেস্নখ করেছেন।
ইসরায়েলের অবিরাম হামলার কারণে আরও একটি রক্তাক্ত দিনের স্বাক্ষী হয়েছে লেবানন। দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, লাগাতার ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সারাদেশে কমপক্ষে ১০৫ জন নিহত এবং আরও ৩৫৯ জন আহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ সিডনের কাছে আইন আল-দেলবে একটি হামলায় দুটি আবাসিক ভবনকে সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে গেছে এবং এতে ৩২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ঘটনাস্থলে আশ্রয় নেওয়া অনেক বাস্তুচু্যত পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।
ইসরায়েল বলেছে, তারা হিজবুলস্নাহর কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। তবে লেবাননের কর্মকর্তারা বলেছেন, দক্ষিণ লেবানন, বেকা, বালবেক-হারমেল গভর্নরেট এবং বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে বাড়িঘরের পাশাপাশি অন্যান্য ভবনগুলোতে হামলা করা হয়েছে।