ইসরায়েলি হামলা
নাসরুলস্নাহর নিথর দেহ উদ্ধার, শরীর অক্ষত
তার শরীরে সরাসরি আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই ইরানি গুপ্তচরের বিশ্বাসঘাতকায় প্রাণ গেছে নাসরুলস্নাহর
প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুলস্নাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দাহিয়েহতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলায় প্রাণ হারান নাসরুলস্নাহ। রোববার মেডিকেল ও নিরাপত্তার একটি সূত্র নাসরুলস্নাহর মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই এবং এটি অক্ষত অবস্থায় আছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা
হিজবুলস্নাহ একটি বিবৃতিতে শনিবার নাসরুলস্নাহর মৃতু্যর বিষয়টি আনুষ্ঠানিক জানায়। তবে তার মৃতু্য কীভাবে হয়েছে, অথবা কখন তাকে দাফন করা হবে, সে বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে মরদেহ উদ্ধারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছেন, তার শরীরে সরাসরি আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তারা ধারণা করছেন, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার পর 'বস্নান্ট ট্রমায়' নাসরুলস্নাহর মৃতু্য হয়েছে। বস্নান্ট ট্রমা হলো- কোনো কিছুর আঘাতে শরীরের বাইরে বড় ধরনের কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় না। কিন্তু শরীরের ভেতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইরানি গুপ্তচরের বিশ্বাসঘাতকায়
প্রাণ গেছে নাসরুলস্নাহর
ফরাসি সংবাদমাধ্যম 'লে প্যারিসিয়েন' জানিয়েছে, এই বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলকে নাসরুলস্নাহর অবস্থান সম্পর্কে গোপন তথ্য জানিয়ে দেয় এক ইরানি গুপ্তচর। এরপরই ইসরায়েল তাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই ইরানি গুপ্তচর ইসরায়েলকে জানায়, শুক্রবার বৈরুতে হিজবুলস্নাহর সদর দপ্তরে উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন নাসরুলস্নাহ। তিনি যখন মাটির নিচে অবস্থিত সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন, এর কিছুক্ষণ পরই বিমান হামলা চালানো হয়। এতে ব্যবহার করা হয় বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, যা হিজবুলস্নাহর সদর দপ্তরকে ধসিয়ে দেয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'নিউইয়র্ক টাইমস' জানিয়েছে, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। সম্প্রতি তারা হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে যেসব সাফল্য পেয়েছে, সেগুলো এসব গোয়েন্দা কার্যক্রমের কল্যাণেই এসেছে। তারা হিজবুলস্নাহ সম্পর্ক গোপন তথ্য সংগ্রহে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে। যার মধ্যে অন্যতম হলো গুপ্তচর নিয়োগ করা।
এ ছাড়া ইসরায়েলি সিগন্যাল গোয়েন্দা এজেন্সি ইউনিট ৮২০০ এমন কিছু অত্যাধুনিক সাইবার টুলস তৈরি করে, যেগুলো দিয়ে খুব ভালোভাবে হিজবুলস্নাহর যোদ্ধাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ডিভাইসে আঁড়ি পাতা যেত। এ ছাড়া গোয়েন্দাদের নতুন দলটি তৈরি করা হয় সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকে। যেন সেনা এবং বিমান বাহিনীর কাছে তারা সেগুলো দ্রম্নত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাসান নাসরুলস্নাহকে হারানোর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে, গোষ্ঠীটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ার সম্ভাবনার পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদে এর রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলকে পরিবর্তন করবে। তবে ইসরায়েল বিরোধী এই সংগঠনটিকে সহজে ধ্বংস করা যাবে না। কারণ, তারা এরই মধ্যে লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির এখনো হাজার হাজার যোদ্ধা আছে। তাদের অনেকেরই সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা প্রতিশোধ নেওয়ার দাবি করেছে। এ ছাড়া সংগঠনটির এখনো যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যার অনেকগুলোই দূরপালস্নার। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার মতো অস্ত্র আছে, যা তেল আবিব ও অন্য শহরগুলোতে পৌঁছতে পারে।
তবে হাসান নাসরুলস্নাহর হত্যাকান্ডের পর তাদের মধ্যে ইসরায়েলি অনুপ্রবেশ ঠেকানোর বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে হিজবুলস্নাহ। এই অনুপ্রবেশই চিরশত্রম্ন ইসরায়েলকে তাদের অস্ত্র গুদাম ধ্বংস করে দিতে, যোগাযোগ যন্ত্রপাতিতে বিস্ফোরণ ঘটাতে ও অভিজ্ঞ নেতাদের হত্যা করার সুযোগ করে দিয়েছে। অথচ বছরের পর বছর ধরে এসব তথ্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গোপন রাখা হয়েছিল। এই অনুপ্রবেশ সক্ষমতার ওপর ভর করেই ইসরায়েল হিজবুলস্নাহর নেতৃত্বদানকারী পরিষদের অর্ধেক সদস্যকে হত্যা ও তাদের শীর্ষ সামরিক কমান্ডকে ধ্বংস করে দেয়।
নাসরুলস্নাহ হত্যাকান্ডের আগের দিনগুলোতে এবং এর পরের কয়েক ঘণ্টায় বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স' লেবানন, ইসরায়েল, ইরান ও সিরিয়ার বহু কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। তারা লেবাননের শক্তিশালী আধাসামরিক শিয়া গোষ্ঠীটির সাপস্নাই চেইন ও কমান্ড গঠনসহ অন্য ক্ষেত্রগুলোতে যে ক্ষতি ইসরায়েল করেছে, এর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। এই স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার সময় সবাই তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছেন।
ইসরায়েলের চিন্তাভাবনার সঙ্গে পরিচিত এক কর্মকর্তা নাসরুলস্নাহর ওপর আঘাত হানার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে জানান, হিজবুলস্নাহর বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে ইসরায়েল ২০ বছর ব্যয় করেছে, তাই যখনই তারা চাইবে, গোষ্ঠীটির সদর দপ্তরসহ নাসরুলস্নাহর ওপর আঘাত হানতে পারবে।