শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
নাসরুলস্নাহ নিহতের জের

ইসরাইলজুড়ে হিজবুলস্নাহর রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টি

অত্যাধুনিক রকেট 'ফাদি-৩' দিয়ে ইসরাইলের রামাত ডেভিড বিমানঘাঁটি এবং বিমানবন্দরসহ বহু লক্ষ্যবস্তুতে হামলা
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শুক্রবার রাতভর বিমান হামলা চালানোর পর শনিবারও তা অব্যাহত ছিল। ছবিটি শনিবার বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলী থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর প্রধান হাসান নাসরুলস্নাহ নিহতের জেরে সংগঠনটির যোদ্ধারা ইসরাইলের পুরো উত্তরাঞ্চলজুড়ে ব্যাপকভাবে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হিজবুলস্নাহর যোদ্ধারা ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর বিমান ঘাঁটিগুলো এবং বহু অবৈধ ইহুদি বসতি লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। শনিবার সূত্রের বরাত দিয়ে ইরানি সংবাদ সংস্থা 'ইরনা' জানিয়েছে, হিজবুলস্নাহ শুক্রবার রাত থেকে অধিকৃত ফিলিস্তিনের দিকে কমপক্ষে ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, হিজবুলস্নাহ অত্যাধুনিক রকেট 'ফাদি-৩' দিয়ে ইসরাইলের রামাত ডেভিড বিমানঘাঁটি এবং বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে সিরিজ হামলা চালিয়েছে। লেবাননে ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুলস্নাহ শনিবার জানিয়েছে, মধ্য ইসরাইলে কাবরি এলাকায় ফাদি-১ রকেট দিয়ে হামলা করেছে।

ইসরাইলি মিডিয়া হাইফার উত্তর-পূর্বে এবং পূর্ব, পশ্চিম ও মধ্য আল-জলিল এলাকাজুড়ে অসংখ্য বসতিতে সাইরেন বেজে যাওয়ার খবর জানিয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা আল-জলিলের ওপর লেবানন থেকে উৎক্ষেপণ করা ১০টি রকেট শনাক্ত করেছে এবং তাদের বাধা দেওয়ার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে।

এ ছাড়া অধিকৃত ফিলিস্তিনেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ইসরাইলের শতাধিক শহর এবং বসতিতে সাইরেন বেজে উঠেছে, ১০ লাখের বেশি ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী আশ্রয়কেন্দ্রে লুকিয়ে আছে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, শনিবার সকালে লেবানন থেকে একটি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের কেন্দ্রের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। ইসরাইলি বাহিনী দাবি করেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি খোলা এলাকায় আঘাত হেনেছে এবং এতে কেউ হতাহত হয়নি। একটি ইসরাইলি সূত্র জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি তেল আবিবের কাছে আঘাত হানে। এ ছাড়া হাইফার নিকটবর্তী এলাকায় কমপক্ষে পাঁচটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলো হিজবুলস্নাহর নেতা হাসান নাসরুলস্নাহ নিহত, লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিয়া এবং লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় বেকায় ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চালানো হয়। ইসরাইলি বাহিনী শুক্রবার রাতে দাহিয়ায় ৩০টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে।

নির্ঘুম রাত কাটল বৈরুতবাসীর

আশ্রয়ের খোঁজে বাস্তুচু্যতরা

এদিকে, ইসরাইলি বিমান বাহিনীর (আইএএফ) টানা হামলায় শুক্রবার আতঙ্কিত, নির্ঘুম রাত কেটেছে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বাসিন্দাদের। শুক্রবার প্রায় সারা রাত ধরে বৈরুতের বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফেলেছে আইএএফ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা 'এনএনএ' জানায়, শুক্রবার রাতজুড়ে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় বৈরুতের বিভিন্ন এলাকায় নিহত হয়েছেন অন্তত ছয়জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৯১ জন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু আবাসিক ভবন।

হিজবুলস্নাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুলস্নাহকে লক্ষ্য করে শনিবার সন্ধ্যায় এই হামলা পরিচালনা করেছিল আইএএফ। এই হামলায় নাসরুলস্নাহও নিহত হন।

এদিকে, শুক্রবার রাতে বৈরুতে যখন বোমা-গোলা নিক্ষেপ করছিল ইসরাইলের বিমান বাহিনী, সে সময় বাসা-বাড়ি থেকে আতঙ্কে ছুটে বেরিয়ে আসছিলেন সাধারণ লোকজন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'সিএনএন'র একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে লেবাননে অবস্থান করছে। তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত ৩টার সময় লোকে লোকারণ্য ছিল বৈরুতের বিভিন্ন সড়ক, পার্ক, যাত্রী ছাউনি প্রভৃতি। তুলনামূলকভাবে বেশি ভিড় ছিল সাগর তীরবর্তী মেরিন ড্রাইভ এবং এর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে। যারা জড়ো হয়েছিলেন, তাদের প্রায় সবাই ইসরাইলি বিমান বাহিনীর বোমা হামলা থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে এসেছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, অনেকে সড়কের পাশের বেঞ্চি কিংবা ডিভাইডারের ওপর বসে কথা বলছেন, কেউ বা বেঞ্চি কিংবা ফুটপাতের ওপর ঘুমাচ্ছেন। নারীদের অনেকেই ব্যস্ত ছিলেন শিশুদের ঘুম পাড়াতে, খোলা আকাশের নিচেই।

লেবাননের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা হামরা স্ট্রিটের একটি বড় আকারের ভবন খালি পড়ে ছিল। বোমা হামলার আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়ে আসা লোকজনদের অনেকেই ফটক ভেঙে সেই ভবনটির ভেতর ঢুকে পড়েন। যারা বাড়িঘর থেকে বেরিয়েছেন, তাদের প্রায় কেউই সামান্য কাপড়-চোপর, কম্বল এবং প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিসপত্র ছাড়া কিছুই সঙ্গে আনতে পারেননি। তবে এত বড় দুর্যোগের মধ্যেও তারা সাহস হারিয়ে ফেলেননি।

৬০ বছর বয়সি এক নারী বলেন, 'আমি আমার জীবনে এই প্রথম এমন অবস্থা দেখছি। এর আগে কখনো বৈরুতে বিমান হামলা ঘটেছে বলে আমি জানি না। আমরা ঠিক আছি এবং আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, আমাদের বাড়িঘরও ঠিক আছে। আমি কোনো দুশ্চিন্তা করছি না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে