শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
হামলা-পাল্টা হামলা

পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পথে ইসরাইল-হিজবুলস্নাহ

লেবাননে ইসরাইলি অভিযানের ফলে গাজার দিক থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরে গেছে
যাযাদি ডেস্ক
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পথে ইসরাইল-হিজবুলস্নাহ

ইসরাইলের দাবি, সীমান্তে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে হিজবুলস্নাহর ওপর হামলার প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত করছেন তিনটি কারণের দিকে। এক বছর আগে লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ উত্তর ইসরাইলের সীমান্ত এলাকায় গোলাবর্ষণ শুরু করলে প্রায় ৬০ হাজার ইসরাইলিকে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়। তথ্যসূত্র : ডিডবিস্নউ নিউজ

আমেরিকা, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ হিজবুলস্নাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিজবুলস্নাহর সশস্ত্র শাখাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। হিজবুলস্নাহর দাবি, গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের সমর্থনে তারা রকেট হামলা চালাচ্ছে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধে অন্তত ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পথে ইসরাইল-হিজবুলস্নাহ

লেবাননে ইসরাইলের হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইসরাইলের বিমান হামলা, যোগাযোগ ডিভাইসের বিস্ফোরণে লেবাননজুড়ে সাত শতাধিক মানুষ মারা গেছেন, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল পরিস্থিতিকে 'প্রায় পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ' বলে আখ্যা দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক 'চাথাম হাউস'র মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক সানাম ভাকিলের মতে, বর্তমান সামরিক অভিযান ও সংঘাতের বিপজ্জনক মোড় প্রধানত 'ইসরাইলের উত্তরে বাস্তুচু্যত নাগরিকদের নিজের এলাকায় ফেরত চাওয়ার ন্যায্যতা বা আবরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।' তার মতে, লেবাননে ইসরাইলের বর্তমান হামলার পেছনে আরও কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রথমত, ইসরাইল তার সীমান্তে গাজা ও হিজবুলস্নাহ ফ্রন্টকে আলাদা করার চেষ্টা করছে। ভাকিল মনে করেন, ইসরাইল গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জন করতে পারেনি এবং গাজার কারণে হিজবুলস্নাহর কাছ থেকেও শান্তিচুক্তি আদায় করে নিতে পারেনি। অন্যদিকে, ইরান ও ইরান-সমর্থিত হিজবুলস্নাহ, হামাস এবং ইয়েমেন-ভিত্তিক হুতিদের মতো একাধিক সশস্ত্র সংগঠন নিয়ে গঠিত 'প্রতিরোধ অক্ষ' তাদের বাহিনীগুলোকে একত্রিত করে ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধের পরের ঘটনা

ভাকিল বলেন, দ্বিতীয়ত, লেবাননের হিজবুলস্নাহর কারণে চিরস্থায়ী নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে ইসরাইল। ২০০৬ সালে হিজবুলস্নাহ ও ইসরাইলের মধ্যে মাসব্যাপী যুদ্ধ জাতিসংঘের ১৭০১ রেজু্যলেশনের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে চলা প্রথম যুদ্ধের পর এটিকে দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধ বলা হয়। জাতিসংঘের শর্তগুলো ছিল, তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, দক্ষিণ লেবাননে লেবানিজ সেনা ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েন, একই এলাকা থেকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং হিজবুলস্নাহর প্রত্যাহার, সেই সঙ্গে হিজবুলস্নাহর নিরস্ত্রীকরণ।

তবে শর্ত অনুযায়ী, হিজবুলস্নাহ লেবাননের লিতানি নদী পর্যন্ত পিছু হটেনি। সীমান্ত থেকে নদীটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শিয়া মিলিশিয়াটির সদস্যরা অস্ত্রও ত্যাগ করেনি। বরং পরের বছরগুলোতে ইরানের সমর্থনে হিজবুলস্নাহর সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত যোদ্ধার সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে।

এর ফলে হিজবুলস্নাহ যোদ্ধারা ভবিষ্যতে ইসরাইলি নাগরিকদের তাদের ভূখন্ড থেকেই অপহরণ করতে পারে, এমন আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ভাকিলের মতে, ইসরাইল আরও একবার হিজবুলস্নাহকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১৭০১ মেনে নিতে বাধ্য করতে চাইছে।

গাজা যুদ্ধ থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা

তৃতীয় কারণ হিসেবে ভাকিল মনে করেন, লেবাননে এই অভিযানের ফলে, গাজার দিক থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরে গেছে। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পরও হামাসের হাতে ৯০ জনের বেশি ইসরাইলি জিম্মি রয়ে গেছেন। তারপরও লেবাননের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মনোযোগ গাজা থেকে সরে গেছে বলে মনে করেন তিনি। ভাকিলের মতে, গাজা থেকে বের হয়ে আসার কোনো কৌশল ইসরাইলের নেই এবং তারা কী পরিকল্পনা করছে, সেটাও স্পষ্ট করেনি। ইসরাইল-ফিলিস্তিনি প্রক্রিয়ার কথাও তারা বলছে না। তার দৃষ্টিতে, লেবাননের যুদ্ধ গাজায় কৌশলের অভাব থেকে দৃষ্টি সরানোর একটি প্রচেষ্টা।

লেবাননে স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা

ইসরাইলি জনগণ ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে। বৈরুত-ভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর পরামর্শদাতা লরেঞ্জো ট্রম্বেটা বলেছেন, ইসরাইলের দৃষ্টিকোণ থেকে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ খুব বেশি এবং প্রতি সপ্তাহে তা তীব্রতর হচ্ছে। তার ধারণা, ইসরাইলি সরকারের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে। ট্রম্বেটা মনে করেন, এটা অর্জনের একটা উপায় হতে পারে উত্তর ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, তবে ইসরাইল তা অর্জনে সক্ষম হবে কি-না, সেটা বলা কঠিন। ট্রম্বেটার প্রশ্ন, ইসরাইলের স্থল অভিযান শুরু হবে কি-না বা কখন হবে, কে জানে! হিজবুলস্নাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকলে ইরান কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে