আজকের যায়যায়দিন

নয়াদিলিস্নতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে নিযুক্ত কূটনীতিকদের ভোট দেখাতে কাশ্মীর উপত্যকায় নিয়ে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। বুধবার শ্রীনগরসহ আশপাশের কয়েকটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কেমন হয়েছে, তা দেখে তারা নয়াদিলিস্ন ফিরেছেন।

ভোট দেখতে উপত্যকায় যান যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মেক্সিকো, গায়ানা, দক্ষিণ কোরিয়া, পানামা, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, স্পেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, তানজানিয়া, আলজেরিয়া, রুয়ান্ডা প্রভৃতি দেশের কূটনীতিকরা।

শ্রীনগরে নেমে প্রথমেই কূটনীতিকরা যান বদগাম কেন্দ্রে। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুলস্নাহ। এই প্রথম বিদেশি কূটনীতিকদের কাশ্মীরের ভোট দেখতে আমন্ত্রণ জানানো হলো। এর আগে কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখাতে বিদেশিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

শ্রীনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল জি-২০ সম্মেলনও। কিন্তু ভোট দেখাতে কখনো ভারত সরকার বিদেশি কূটনীতিকদের কাশ্মীরে আমন্ত্রণ জানায়নি।

বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার দ্বিতীয় দফার ২৬ আসনের ভোট। এদিন নির্ধারিত হয় এনসির ওমর আবদুলস্নাহ, জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সভাপতি রবীন্দ্র রায়না, কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা, আপনি পার্টির সভাপতি আলতাফ বুখারির ভাগ্য। এই দফায় ভোট দেন ২৬ লাখ ভোটার। মোট প্রার্থীসংখ্যা ২৩৯।

ওমর আবদুলস্নাহ এবার দুটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের খাসতালুক বলে পরিচিত গান্দারবাল ও বাদগাম থেকে। গান্দারবালে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিডিপির সম্পাদক বসির আহমেদ মীর। এখানে জেলবন্দি ধর্মপ্রচারক সরজান বরকতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাকে সমর্থন করছে জামায়াতে ইসলামী ও বারামুলস্নার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রশিদের দল আওয়ামী ইত্তেহাদ পার্টি (এআইপি)। গত লোকসভা ভোটে বারামুলস্নায় এই ইঞ্জিনিয়ার রশিদের কাছেই ওমর আবদুলস্নাহ হেরেছিলেন দুই লাখের বেশি ভোটে। রশিদ তখন কারাবন্দি ছিলেন। এখনো কারাবন্দি। তবে আদালত তাকে ভোটে প্রচারের জন্য জামিন দিয়েছেন।

ওমর আবদুলস্নাহর দ্বিতীয় আসনে (চানাপুরা) প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিডিপি নেতা আগা সঈদ মুনতাজির মেহদি। চানাপুরা আসনেও লড়াই জমজমাট। এখান থেকে দাঁড়িয়েছেন আপনি পার্টির নেতা আলতাফ বুখারি। তাকে শক্ত লড়াইয়ের মুখে ফেলেছেন এনসির ব্যবসায়ী নেতা মুস্তাক গুরু, পিডিপির মহম্মদ ইকবাল টুমব্রম্ন ও বিজেপির হিলাল আহদেন ওয়ানি।

বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ভোটে উদ্দীপনা ছিল প্রবল। এবারের ভোট ঘিরে এত আগ্রহ আগে দেখা যায়নি। এত প্রার্থীর সমারোহও আগে দৃশ্যমান ছিল না।

ভোটের প্রচারে কোনো জায়গা থেকে কোনো রকম বাধা-বিপত্তির খবর পাওয়া যায়নি।

\হজম্মু এলাকার পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের ঘটনা ঘটলেও বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গিরা কারও কোনো প্রচারে বাধা দেয়নি।

এই প্রথম ভোট বয়কটের নিদানও শোনা যায়নি। যে জামায়াতে ইসলামী এতকাল হুরিয়ৎ কনফারেন্সের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে এসেছে, তারাই এবার কেন্দ্রীয় সরকারের মদদে ভোটে লড়ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

তবে বিতর্ক যে একেবারেই নেই, তা নয়। সেই বিতর্ক ভোট দেখতে বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে।

ওমর আবদুলস্নাহ সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, 'এই সরকার চিরকাল বলে এসেছে জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে কাউকে নাক গলাতে দেবে না। বিদেশিরা নানা সময় এখানকার পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। প্রতিবারই সরকার তাদের অনভিপ্রেত চর্চা না করার উপদেশ দিয়েছে। সেই সরকার এখন বিদেশি কূটনীতিকদের নিয়ে আসছে ভোট দেখাতে। গাইডেড টু্যর। এখন এই কূটনীতিকরাই যদি পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের অপছন্দের মন্তব্য করেন, তা হলে কী জবাব দেওয়া হবে?'

ওমর আবদুলস্নাহ আরও বলেন, 'সরকার বিদেশের কূটনীতিকদের ডেকে আনছে, অথচ বিদেশি সাংবাদিকদের আসতে দিচ্ছে না! এমনকি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি সাংবাদিকদেরও ভোট দেখতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।'