শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
লেবাননী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্য

লেবাননে ইসরাইলের হামলা স্রেফ গণহত্যা

ইসরাইল বলেছে, তারা শত শত হিজবুলস্নাহ ঘাঁটিতে হামলা করেছে। তাদের অভিযোগ এই গোষ্ঠীটি আবাসিক এলাকায় নিজেদের অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে
যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হামলার পর লেবাননের কয়েকটি গ্রামে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশে এখন যা হচ্ছে সেটি স্রেফ গণহত্যা। সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহকে লক্ষ্য করে ইসরাইলের ২ দিনব্যাপী টানা বিমান হামলার কারণে দেশটিতে বিপুলসংখ্যক হতাহত নাগরিককে নিয়ে লেবানিজ হাসপাতালগুলোকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. ফিরাস আবিয়াদ বলেছেন, এটা 'পরিষ্কার' যে সোমবারের হামলায় যে সাড়ে পাঁচশ মানুষ নিহত হয়েছেন তাদের অনেকেই নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক।

ইসরাইল বলেছে, তারা শত শত হিজবুলস্নাহ ঘাঁটিতে হামলা করেছে। তাদের অভিযোগ এই গোষ্ঠীটি আবাসিক এলাকায় নিজেদের অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে। মঙ্গলবারের ইসরাইলি হামলায় হিজবুলস্নাহর রকেট ফোর্সের প্রধান নিহত হন।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই গোষ্ঠীটিই লেবাননকে 'খাদের কিনারায়' নিয়ে গেছে।

হিজবুলস্নাহ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে তিনশ'র বেশি রকেট হামলা করে হামলার জবাব দিয়েছে এবং এতে ছয়জন আহত হয়েছে বলে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। যদিও কোনো পক্ষের মধ্যেই পিছিয়ে আসার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বলেছেন, একটি সর্বাত্মক সংঘাতে যাওয়ার 'আগ্রহ কারও মধ্যেই নেই' এবং তিনি সংকটের 'কূটনৈতিক সমাধান এখনো সম্ভব' বলে উলেস্নখ করেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস 'লেবাননকে আরেকটি গাজায় পরিণত করা বিশ্ব মেনে নিতে পারবে না' বলে সতর্ক করেছেন। গাজা যুদ্ধের সূত্র ধরে গত প্রায় এক বছর ধরে ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত লড়াই চলছে এবং এতে শত শত মানুষ মারা গেছেন। নিহতদের বেশিরভাগই হিজবুলস্নাহ যোদ্ধা। এ ছাড়া উভয় পক্ষে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছেন।

হিজবুলস্নাহ বলছে, তারা হামাসের সমর্থনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত এটি তারা বন্ধ করবে না।

উভয় গোষ্ঠীই ইরান সমর্থিত এবং ইসরাইল, যুক্তরাজ্যসহ আর অনেক দেশ তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করে থাকে।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলীয় বেক্কা উপত্যকা জুড়ে ইসরাইলের বিমান হামলার কারণে সোমবার ছিল ২০০৬ সালে ইসরাইল-হিজবুলস্নাহ যুদ্ধের পর এযাবৎকালে প্রাণহানির দিক থেকে সবচেয়ে সংঘাতময় দিন।

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মোট যে ৫৫৮ জন মারা গেছেন, তার মধ্যে ৫০ শিশু, ৯৪ নারী এবং বেশকিছু স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এখন পঞ্চাশটিরও বেশি হাসপাতালে আহত এক হাজার ৮৩৫ জনের চিকিৎসা চলছে বলে জানান তিনি।

বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি দেশটিতে যা হচ্ছে তাকে 'গণহত্যা' হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, 'জরুরি বিভাগে যাদের আনা হচ্ছে আপনি তাদের দিকে তাকালে পরিষ্কার হবে যে তারা বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলিরা যে দাবি করছে, তারা (হতাহত মানুষেরা) সেই যোদ্ধা নন।'

'হামলার শিকার ব্যক্তিদের বিষয়ে আমরা জানি, কারণ আমাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলো তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসছে। তারা বেসামরিক নাগরিক যারা নিজেদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করছিলেন।'

এর আগে ২০০৬ সালের ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহর মধ্যকার যুদ্ধের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করতে গিয়ে লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'নিশ্চিতভাবে আমরা আরও নিষ্ঠুর যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে বেসামরিক নাগরিকদের যেভাবে টার্গেট করা হচ্ছে।'

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসও সোমবারের হামলায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সতর্ক করেছে।

হিজবুলস্নাহ যেখানে অস্ত্র মজুদ করেছে বলে ইসরাইল দাবি করছে, সেখানকার কাছাকাছি ভবনগুলো খালি করার জন্য ইসরাইলি সামরিক বাহিনী লেবাননের মানুষকে অডিও ও টেক্সট বার্তা দিয়েছে।

এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন: 'বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এর প্রভাব ব্যাপক হবে জেনেও, হামলার আগে বেসামরিক লোকদের পালাতে বললেই যথাযথ হয়ে গেল না।'

এদিকে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের সড়কগুলোয় দ্বিতীয়দিনের মতো যানজট দেখা গেছে, কারণ হাজার হাজার মানুষ ইসরাইলের হামলা থেকে বাঁচতে দেশটির উত্তর অঞ্চলের দিকে পালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে ভ্রমণ করতে হচ্ছে।

বৈরুতের একটি আশ্রয় শিবিরে ৬৫ বছর বয়সি মারিয়াম বলেন, একটি ছোট গাড়িতে করে আরও ১২ জন আত্মীয় নিয়ে তাকে সারারাত ধরে যাত্রা করতে হয়েছে।

'আমরা ঘরবাড়ি ছাড়তে চাইনি, কারণ নিজের ঘর ছেড়ে আসা কঠিন। ভোর চারটায় সন্তানদের নিয়ে এখানে এসে পৌঁছেছি। বাচ্চাদের কারণেই আমরা চলে এসেছি।'

ওদিকে, একটি গোয়েন্দা ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে দেশটির বেসামরিক বাস্তুচু্যত নাগরিকদের তাদের বাড়িঘরে ফেরানোর লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইল 'হিজবুলস্নাহর ওপর হামলা অব্যাহত রাখবে।

লেবাননের জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন 'আমাদের যুদ্ধ আপনাদের সঙ্গে নয়' এবং বলেন হিজবুলস্নাহ নেতা হাসান নাসরুলস্নাহই 'আপনাদের খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে।'

তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের ঘরবাড়ি খালি করতে বলেছি, যেখানে বাসিন্দাদের লিভিং রুমে মিসাইল ও গ্যারাজে রকেট রাখা ছিল। যারাই লিভিং রুমে মিসাইল ও গ্যারাজে রকেট রাখবে তাদের ঘর থাকবে না।'

ইসরাইল সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, হিজবুলস্নাহ লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও বেক্কা উপত্যকাকে 'যুদ্ধ এলাকায়' পরিণত করেছে এবং মঙ্গলবার টার্গেটগুলোতে হামলা অব্যাহত ছিল।

ইসরাইলের হামলার পর দ্বিতীয় দফায় আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণের কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছেন তিনি, যেখানে মিসাইল ও রকেট লাঞ্চার মজুদ করা হয়েছিল বলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

হ্যাগারি বলেছেন, হিজবুলস্নাহর মিসাইল ও রকেট ইউনিটের প্রধান ইব্রাহিম কুবাইশি বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহরতলীতে মঙ্গলবার দুপুরের হামলায় কমপক্ষে আরও দুজন কমান্ডারসহ নিহত হয়েছেন।

হিজবুলস্নাহ এক টেলিগ্রাম পোস্টে হামলায় কুবাইশির 'শহীদ' হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে।

তারা বলেছে, তাদের যোদ্ধারা এক ডজনেরও বেশি ইসরাইলি শহর, সামরিক ঘাঁটি ও বিস্ফোরক কারখানা লক্ষ্য করে রকেট ছুড়েছে।

আইডিএফের সামসন ইউনিটে একটি নতুন ধরনের রকেট ছোড়ার দাবি করেছে তারা। খবর বিবিসির

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে