আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্ত থাকার আহ্বানকে উপেক্ষা করে আবারও সংঘাতে জড়িয়েছে হিজবুলস্নাহ ও ইসরাইল। সেইসঙ্গে নিজেদের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ আরও জোরদার করার হুমকি দিয়েছে তারা। ফলে এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি
উত্তর লেবাননে ইসরাইলি হামলার পর হিজবুলস্নাহর ডেপুটি চিফ নাইম কাসেম একটি বার্তা দিয়েছেন। যেখানে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘর্ষ 'একটি নতুন পর্যায়ে' প্রবেশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এদিকে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত তার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রম্নতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা যতক্ষণ না ইসরাইলের উত্তর সম্প্রদায়ের লোকদের তাদের বাড়িতে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে পারি, ততক্ষণ পর্যন্ত সামরিক পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।' কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভিও। তিনি বলেন, 'ইসরাইল তার নাগরিকদের যেই হুমকি দেবে, তাকেই আঘাত করবে।'
যদিও ইসরাইলের সবচেয়ে বড় মিত্র আমেরিকার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, 'একটি বিস্তৃত সংঘাত প্রতিরোধে আমেরিকা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। আমরা একটি বৃহত্তর যুদ্ধকে ভাঙতে আমাদের যথাসাধ্য করে যাচ্ছি।'
এবার লেবাননে স্থল হামলার প্রস্তুতি
নিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী
লেবাননে ব্যাপক বিমান হামলার পর এবার সেখানে স্থল হামলা চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) স্থল অভিযানের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল গের্শন হ্যাকোহেন। ইসরাইলি স্থল বাহিনীর এই সাবেক প্রধান বলেন, 'আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো উপায়ে হোক, পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দাদের তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হবে।
আইডিএফ জেনারেল স্টাফ কর্পসের সাবেক কমান্ডার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর-জেনারেল গের্শন হ্যাকোহেন সোমবার বলেন, যেকোনোভাবেই হোক- আইডিএফের উচিত লেবাননে প্রবেশ করা। হ্যাকোহেন বলেন, হিজবুলস্নাহর সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে ইসরাইল এখন স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইসরাইলের বিমান হামলায়
লেবাননে নিহত ১৮২
ইসরাইলের বিমান হামলায় লেবাননে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১৮২ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৭২৭ জন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪৯ মিনিটে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলায় হতাহতদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের পাশাপাশি যথেষ্ট সংখ্যক নারী, শিশু রয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক।
সোমবার স্থানীয় সময় সকালে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি শহর ও গ্রামে ব্যাপক আকারে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলের বিমান বাহিনী। 'বিবিসি' জানিয়েছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি বিমান থেকে শত শত স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরাইলি হামলার পর রাজধানী বৈরুতের রাস্তায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় চলেছেন। কিন্তু তাদের গন্তব্য কোথায়, সেই বিষয়ে জানা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হামলায় আহতদের উদ্ধারের পর স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শত শত মানুষের অবস্থা খুবই গুরুতর। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৈরুত ও এর আশপাশের এলাকার হাসপাতালগুলোতে আহতদের দ্রম্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে জরুরি ছাড়া অন্য সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখে আহতদের সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, সোমবার লেবাননের তিন শতাধিক স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে। লেবাননের সঙ্গে ইসরাইলের চলমান উত্তেজনায় এখন পর্যন্ত সোমবারের হামলাই সবচেয়ে তীব্র।
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের ওপারেই ইসরাইলের উত্তরাঞ্চল। আইডিএফের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবারের হামলার আগে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় বেসামরিক বাসিন্দাদের মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা দিয়েছিল আইডিএফ। সেই সতর্কবার্তায় তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছিল।
উত্তর ইসরাইলে হিজবুলস্নাহর মুহুর্মুহু
রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
এদিকে, ইসরাইলের হামলায় প্রায় ২০০ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে মুহুর্মুহু রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। সোমবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে ইসরাইলি হামলার পরপরই এই হামলা চালিয়েছে ইরান-সমর্থিত হিজবুলস্নাহ।
এক বিবৃতিতে হিজবুলস্নাহ বলেছে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হত্যার প্রতিশোধে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে কয়েক ডজন রকেট ছুড়েছে হিজবুলস্নাহ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটি ও অস্ত্রাগারকে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট দিয়ে টার্গেট করা হয়েছে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর পৃথক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইল লক্ষ্য করে লেবাননের ভূখন্ড থেকে কমপক্ষে ৩৫টি রকেট ছোড়া হয়েছে। তবে হিজবুলস্নাহর হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য দেয়নি আইডিএফ। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, গালিলির নিম্নাঞ্চলে রকেটের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ৫০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি সামান্য আহত হয়েছেন।
ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কয়েকটি রকেটে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করার দাবি করেছে আইডিএফ। লেবানন থেকে ছোড়া কয়েকটি রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র সীমান্ত সংলগ্ন ইসরাইলের আমিয়া সম্প্রদায় অধু্যষিত এলাকার ফাঁকা স্থানে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।