হিজবুলস্নাহ কমান্ডারসহ নিহত ৩১
লেবাননে রাতভর ইসরাইলি বিমান হামলা
হিজবুলস্নাহর হামলার ভয়ে পালাচ্ছে সাধারণ ইসরাইলিরা মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন নেতানিয়াহু : ম্যাখোঁ
প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের আশপাশে বিমান হামলা চালিয়ে এক রাতেই আরও অন্তত ৩১ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইল। শুক্রবার রাতে এই হামলা চালানো হয় বলে শনিবার জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তিন শিশু ও সাত নারী রয়েছেন। হিজবুলস্নাহ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তাদের সিনিয়র নেতা ইব্রাহিম আকিল এবং আরেক শীর্ষ কমান্ডার আহমেদ ওয়াহবিসহ তাদের ১৬ জন সদস্য রয়েছেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি
আকিল হিজবুলস্নাহর এলিট ফোর্স 'রাদওয়ান' ইউনিটের শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন। এছাড়া ১৯৮৩ সালে বৈরুতে মার্কিন দূতাবাসে যে ভয়াবহ হামলা হয়েছিল, তাতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। 'গালিলে বিজয়' নামের ওই হামলা মার্কিন ও লেবানিজ নাগরিকসহ নিহত হয়েছিলেন মোট ৬৩ জন। ২০১৯ সালে তার মাথার দাম ৭০ লাখ ডলার ঘোষণা করেছিল আমেরিকা।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ বলেছে, 'গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার ইসরাইলের বিমান বাহিনী বৈরুতে হামলা চালিয়েছে। এতে হিজবুলস্নাহর এলিট ফোর্স রাদওয়ান ইউনিটের শীর্ষ কমান্ডার এবং গালিলে বিজয় হামলার অন্যতম সদস্য ইব্রাহিম আকিল নিহত হয়েছেন।'
মাত্র দুদিন আগে, অর্থাৎ গত মঙ্গলবার হিজবুলস্নাহর সদস্যদের ব্যবহৃত হাজার হাজার পেজারে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর পরের দিনই হিজবুলস্নাহর শত শত ওয়াকিটকি বিস্ফোরিত হয়। পরপর হামলায় কমপক্ষে দুই শিশুসহ ৩৯ জন নিহত এবং তিন হাজারের বেশি লোক আহত হন।
লেবাননের পরিবহণ মন্ত্রী আলী হামিহ জানিয়েছেন, হামলার পর এখনো অন্তত ২৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি বলেন, 'ইসরাইল এই অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ধসে পড়া ভবনগুলো খনন করতে উদ্ধারকারীদের সাহায্য করার জন্য মন্ত্রণালয় যানবাহন এবং সরঞ্জাম পাঠিয়েছিল। আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নারী ও শিশুদের বের করছি।' দাহিয়ের স্থানীয় বাসিন্দা অ্যালেইন ফেঘালি বলেন, 'আমরা ভয় পাচ্ছি না, তবে একটা কার্যকর সমাধান আমরা চাই। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।'
লেবাননের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রদর্শিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শনিবার সকালে দাহিয়ের হামলাস্থলে উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ সরাতে কাজ করছেন স্থানীয় জনতাও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার অনেক সময় ধরে বৈরুতের আকাশে উড়েছে আইডিএফের ড্রোন।
দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়ে এলাকাটিতে হিজবুলস্নাহর শক্ত অবস্থান রয়েছে। 'বিবিসি'র সংবাদদাতা হুগো বাচেগা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই খুবই উদ্বেগের। হামলার স্থানটি জনবহুল এলাকায় অবস্থিত। সেখানে হিজবুলস্নাহর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন তারা। ঘটনাস্থলে কোনো সাংবাদিককে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
১৮ বছর আগে হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইসরাইল। কয়েক বছর দুই পক্ষের সংঘাতের পর পরিস্থিতি থিতিয়ে আসছিল অনেকটাই; কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখন্ডে হামাসের অতর্কিত হামলা ফের ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে আসে। হামাস যোদ্ধাদের হাতে আটক জিম্মিদের উদ্ধারে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজা উপত্যকায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। অন্যদিকে, হামাসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ইসরাইল-লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে ইসরাইলও।
হিজবুলস্নাহর চোরাগোপ্তা হামলার প্রতিক্রিয়ায় ১৮ বছর আগে এই গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইসরাইল। কয়েক বছর দুই পক্ষের সংঘাতের পর পরিস্থিতি থিতিয়ে আসছিল অনেকটাই; কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখন্ডে হামাসের অতর্কিত হামলা ফের ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহকে মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে আসে।
হিজবুলস্নাহর হামলার ভয়ে পালাচ্ছে
সাধারণ ইসরাইলিরা
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শুক্রবার রাতভর বিমান হামলার পর থেকে হিজবুলস্নাহর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছে সাধারণ ইসরাইলিরা। দেশটির উত্তরাঞ্চলের অধিবাসীদের হিজবুলস্নাহর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী উত্তর ইসরাইলের ১২টি বসতির অধিবাসীদের জন্য এই নতুন দিকনির্দেশনা জারি করেছে। এতে উত্তরে বসবাসরত ইহুদিবাদীদের ঘরের বাইরে অপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনীর ঘোষণায় বলা হয়েছে, তারা আগামী দিনগুলোতে উত্তর ফ্রন্টে, অর্থাৎ দক্ষিণ লেবাননে ব্যাপক মাত্রায় অভিযান চালাবে।
ইসরাইলের '১২ নম্বর' টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, ইহুদিবাদী সেনাবাহিনী উত্তরাঞ্চলের খবরাখবর প্রচারের ওপর পূর্ণ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং সাধারণ মানুষকে ওই অঞ্চলে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তারা বলছে, প্রাণ বাঁচাতে চাইলে কেউ যেন উত্তর ইসরাইল সফর না করে।
মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন
নেতানিয়াহু : ম্যাখোঁ
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকেই দায়ী করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, লেবাননে সাম্প্রতিক সহিংসতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইসরাইল ওই অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম 'ইয়েডিওথ আহরোনোথ'র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। তবে ম্যাখোঁর এমন সতর্কতার জবাবে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরাইলের পরিবর্তে হিজবুলস্নাহর ওপর চাপ দেওয়া উচিত।