শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইউক্রেনে যাচ্ছে ভারতীয় অস্ত্র

ক্ষুব্ধ রাশিয়া
যাযাদি ডেস্ক
  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইউক্রেনে যাচ্ছে ভারতীয় অস্ত্র

ভারতীয় অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের তৈরি গোলাবারুদ ইউরোপীয় ক্রেতাদের মাধ্যমে ইউক্রেনে পৌঁছে গেছে। মস্কোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও দিলিস্ন এই বাণিজ্য বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে। ভারতীয় ও ইউরোপীয় সরকারের এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের ১১ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ক্রেতাদের শুল্ক-বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স

সূত্র এবং কাস্টমস তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সহায়তায় যুদ্ধাস্ত্র হস্তান্তর প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান। ভারতীয় অস্ত্র রপ্তানি বিধিনিষেধ অনুযায়ী, এসব যুদ্ধাস্ত্র শুধু নির্দিষ্ট ক্রেতার ব্যবহারের জন্য সীমাবদ্ধ থাকে। অনুমোদনহীন হস্তান্তরের ঘটনা ঘটলে ভবিষ্যতে বিক্রয় বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।

ভারতীয় তিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ক্ষুব্ধ রাশিয়া অন্তত দুইবার এই ইসু্য নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে একবার গত জুলাই মাসে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের সময়। তবে রাশিয়া এবং ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়গুলো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে, জানুয়ারিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, ভারত ইউক্রেনে গোলা-বারুদ পাঠায়নি বা বিক্রি করেনি।

দুই ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা এবং দুই প্রতিরক্ষা শিল্পের সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেনের ব্যবহৃত গোলা-বারুদের খুবই সামান্য অংশ ভারত থেকে এসেছে, যা ইউক্রেনের মোট আমদানির এক শতাংশের কম হতে পারে। তবে এই গোলা-বারুদগুলো ইউরোপীয় ক্রেতারা পুনরায় বিক্রি করেছে, নাকি ইউক্রেনকে দান করেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এক স্প্যানিশ এবং এক সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউক্রেনে ভারতীয় যুদ্ধাস্ত্র প্রেরণকারী ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইতালি ও চেক প্রজাতন্ত্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে কিয়েভকে আর্টিলারি শেল সরবরাহ করার উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে এই দেশ দুটি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন 'যন্ত্র ইনডিয়া' নামে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির সাবেক শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই কোম্পানির যুদ্ধাস্ত্রই ইউক্রেন ব্যবহার করছে।

ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ভারত। এ বিষয়ে জানে এমন অন্তত ২০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে 'রয়টার্স'। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ওই কর্মকর্তারা।

ইউক্রেনের প্রধান নিরাপত্তা সমর্থক দিলিস্ন এবং ওয়াশিংটন সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান চীনের পটভূমিতে প্রতিরক্ষা এবং কূটনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করেছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গেও ভারতের উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহ করছে ভারত। এ ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা আরোপে অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ে জানেন, এ রকম ভারতীয় ছয়টি সূত্র জানিয়েছেন, ইউরোপে দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধকে নিজেদের অস্ত্র রপ্তানির নতুন খাত হিসেবে দেখছে ভারত।

থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ভিত্তিক 'স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট'র তথ্য অনুসারে, ভারত ২০১৮-২০২৩ সালের মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র রপ্তানি করেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং গত ৩০ আগস্টের একটি সম্মেলনে বলেছেন, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি রপ্তানি গত অর্থবছরে ২.৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং দিলিস্ন ২০২৯ সালের মধ্যে এটিকে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায়।

ইতালির তালিকাভুক্ত নয়, এমন প্রতিরক্ষা ঠিকাদার 'মেকানিকা পার ইলেটট্রোনিকা এ সের্ভোমেকানিসমি' বার এমইএস ভারতের তৈরি গোলা-বারুদ ইউক্রেনে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন যন্ত্র ইনডিয়ার একজন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা। এমইএস যন্ত্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি গ্রাহক। রোম-ভিত্তিক কোম্পানিটি ভারতের কাছ থেকে ফাঁকা গোলা-বারুদ কিনে সেগুলোতে বিস্ফোরক ভরে ইউক্রেনে পাঠায় বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রয়টার্সের ই-মেইলের কোনো উত্তর দেয়নি এমইএস ও যন্ত্র ইনডিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে