ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা সংকেত
হুতির ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ইসরাইলে
হিজবুলস্নাহর সঙ্গে 'ব্যাপক সংঘাত' নিয়ে নেতানিয়াহুর সতর্কতা
প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ইয়েমেন থেকে ইসরাইলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, সেখানে আগুন ধরে যায়। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইয়েমেন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর তেল আবিবসহ মধ্য ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা সংকেত বাজানো হয়। এ সময় বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর জানানো হয়নি। ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য একটি ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যেটি মধ্য ইসরাইল অতিক্রম করে খোলা জায়গায় গিয়ে পড়ে। ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলের জনবসতিহীন এলাকায় আঘাত হেনেছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানার কয়েক মুহূর্ত আগে রোববার স্থানীয় সময় ৬-৩৫ মিনিটের দিকে তেল আবিব ও ইসরাইলের পুরো মধ্যাঞ্চলজুড়ে আকাশ হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। ইসরাইলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এটি পূর্ব দিক থেকে মধ্য ইসরাইলে প্রবেশ করার পর একটি খোলা জায়গায় এসে পড়ে। ওই অঞ্চল থেকে আসা একটানা ভারী শব্দও শোনা গেছে, যাকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী তাদের ছোড়া ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র থেকে এসেছে বলে জানিয়েছে। ইসরাইলের বাসিন্দাদের জন্য তাদের প্রতিরক্ষামূলক গাইডলাইন অপরিবর্তিত রয়েছে বলে বাহিনীটি জানিয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক জানিয়েছেন, ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলের একটি খোলা মাঠ থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। তবে ওই আগুন ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে, না ইসরাইলি ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের কারণে জ্বলে উঠেছে, তা পরিষ্কার হয়নি। অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিও এবং ছবিতে ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলে রুট ওয়ান মহাসড়কের কাছে তৃণভূমিতে আগুন জ্বলতে ও সেখান থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। একটি ছবিতে দেখা গেছে, তেল আবিবের প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্বে মোদিন শহরের এক রেলস্টেশনের এসকেলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরাইলের পুলিশ জানিয়েছে, তারা তেল আবিবের পূর্বে জুডিন নিম্নাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্রের ভেতর থাকা বস্তুর টুকরার খোঁজে তলস্নাশি চালাচ্ছে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি তেল আবিব ও মোদিনের মাঝের একটি খোলা এলাকায় পড়েছে। ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কতটুকু কাজে লেগেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 'টাইমস অব ইসরাইল' জানিয়েছে, ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন হুতি গোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হেজাম আল-আসাদ সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ হিব্রম্ন ভাষায় করা এক পোস্টে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার উলেস্নখ করে ইসরাইলিদের উপহাস করেছেন। হুতি মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরাইলে আঘাত হানার আগে ক্ষেপণাস্ত্রটি দুই হাজার ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। ইয়েমেন থেকে দখলদার ইসরাইলে পৌঁছতে ক্ষেপণাস্ত্রটির সময় লেগেছে সাড়ে ১১ মিনিট। তবে ইসরাইল বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ইয়েমেন থেকে ছোড়া হলেও কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। হামাস ও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ওই সময় থেকে ইসরাইলগামী জাহাজে হামলা চালানো শুরু করে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তাদের হামলার কারণে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। যুদ্ধের শুরুতে হুতিরা শুধুমাত্র ইসরাইলি মালিকানাধীন জাহাজে হামলা চালালেও পরে তারা আমেরিকা, যুক্তরাজ্যের জাহাজকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা শুরু করে। এবার তারা সরাসরি ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুমকি দিয়েছেন, হুতিদের এই হামলার কঠোর জবাব দেবেন তিনি। এ ছাড়া লেবানন সীমান্তে যেসব অবৈধ বসতিস্থাপনকারী আছে, তাদেরও দ্রম্নত ফেরানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। একই দিন লেবানন থেকে ইসরাইলের ভূখন্ড লক্ষ্য করে ৪০টি রকেট ছোড়া হয় ও একটি আত্মঘাতী ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়। এসব রকেট ও ড্রোন হামলায়ও 'কেউ হতাহত হয়নি' বলে দাবি করেছে ইসরাইলি বাহিনী। দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার সাইরেন বেজে ওঠার পর নিরাপদ আশ্রয়স্থলে যাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ির মধ্যে অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহর মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে। হিজবুলস্নাহর দাবি, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তারা ইসরাইলে হামলা চালাচ্ছে। হিজবুলস্নাহর সঙ্গে 'ব্যাপক সংঘাত' নিয়ে নেতানিয়াহুর সতর্কতা এদিকে, অদূর ভবিষ্যতে ইসরাইলকে হিজবুলস্নাহর সঙ্গে 'বড় আকারের সংঘর্ষের' মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার একটি কৌশলগত আলোচনার সময় এ বিষয়ে নিরাপত্তা প্রধানদের সতর্ক করেছিলেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, দেশের উত্তরে এই সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। নেতানিয়াহু মনে করেন, হিজবুলস্নাহর সঙ্গে একটি অনিবার্য সর্বাত্মক সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে ইসরাইল। একটি কূটনৈতিক সমাধান, যা লেবাননের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরাইল প্রায় প্রতিদিনের আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে পারতো, তা অধরাই রয়ে গেছে।