বাইডেন-স্টারমার বৈঠক
রাশিয়ায় দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় 'না'
যুদ্ধের পরিধি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পশ্চিমারা
প্রকাশ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে ইউক্রেনকে সবুজ সংকেত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের বৈঠক শেষে তেমন আভাসই পাওয়া গেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা, বিবিসি
ইউক্রেনকে দূরপালস্নার 'স্টর্ম শ্যাডো' মিসাইল ব্যবহারের অনুমতি দিতে বাইডেনকে রাজি করানোর চেষ্টা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। তিনি বলেছেন, 'একাধিক বিষয়ে আমাদের মধ্যে দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইসু্য নিয়ে আলোচনা করেছি।'
এদিকে, হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রাশিয়ায় প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করছে উত্তর কোরিয়া ও ইরান। এ বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।'
২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে ইউক্রেনে সর্বাত্মক অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় নিয়মিত বোমাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে রাশিয়া। রাশিয়ার সামরিক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রাগার, শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র- সবই রুশ ভূখন্ডের বেশ অভ্যন্তরে অবস্থিত। সেসব স্থানেই হামলা চালাতে চেয়েছিল ইউক্রেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মিত্রদের কাছে রুশ ভূখন্ডে দূরপালস্নার পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলার অনুরোধ জানিয়ে আসছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, কেবল এভাবেই যুদ্ধের সমাপ্তি টানা সম্ভব।
এর আগে ইউক্রেনকে এ অনুমতি দিতে বিরত থাকার জন্য পশ্চিমাদের সতর্ক করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, এমন পদক্ষেপ নিলে রাশিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়াবে ন্যাটো জোট। যুদ্ধের পরিধি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রাশিয়ার অভ্যন্তরে এখন পর্যন্ত দূরপালস্নার হামলা চালানোর অনুমতি কিয়েভকে দেয়নি পশ্চিমারা।
গত মাসে ইউক্রেনীয় বাহিনী কুরস্ক অভিযান শুরুর পর যুক্তরাজ্য তাদের বিবৃতিতে জানায়, আত্মরক্ষার্থে ব্রিটিশ অস্ত্র ব্যবহারের 'সুস্পষ্ট' অধিকার ইউক্রেনের রয়েছে। এমনকি, রাশিয়ার অভ্যন্তরেও তা ব্যবহারে বাধা নেই। তবে স্টর্ম শ্যাডোর মতো দূরপালস্নার অস্ত্র ইউক্রেনের সীমানার বাইরে ব্যবহারের বিষয়ে মন্তব্য করা হয়নি।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কিয়েভকে দূরপালস্নার অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু বাকি মিত্রদের মতো ইউক্রেনের সীমানার বাইরে সেগুলো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা তারাও দিয়ে রেখেছে।
এদিকে, বাইডেন-স্টারমার বৈঠকের আগে, পৃথক এক বিবৃতিতে মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, রুশ ভূখন্ডে দূরপালস্নার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলায় ইউক্রেনের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ওয়াশিংটন এগুলো শিথিল করবে না।
স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র
স্টর্ম শ্যাডো হলো একটি অ্যাংলো-ফরাসি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যার সর্বোচ্চ পরিসীমা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। ফরাসিরা এই ক্ষেপণাস্ত্রকে 'স্ক্যাল্প' বলে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এরই মধ্যে এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠিয়েছে। তবে তারা কিয়েভকে শর্ত দিয়েছে, তারা কেবল নিজেদের সীমানার ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া হয়। এরপর তা শব্দের গতির কাছাকাছি দ্রম্নততায় লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুটে যায়। ভূমির লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এই ক্ষেপণাস্ত্রে উচ্চ বিস্ফোরকযুক্ত ওয়ারহেড আছে। সুকঠিন বাংকারসহ গোলাবারুদের নিরাপদ ভান্ডার ধ্বংস করার আদর্শ অস্ত্র হিসেবে স্টর্ম শ্যাডোকে বিবেচনা করা হয়। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া।
তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র বেশ ব্যয়বহুল। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে প্রায় এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের অর্থ ব্যয় হয়। তাই শত্রম্নর বিরুদ্ধে হামলায় এই অস্ত্র হিসাব করে ব্যবহার করা হয়। যেমনটা ইউক্রেনে হামলার ক্ষেত্রে রাশিয়া করে।
এই অস্ত্র শত্রম্নপক্ষের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত-বিপর্যস্ত করে দিতে সক্ষম। এই অস্ত্রের প্রভাব ব্যাপক। যেমন দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেভাস্তোপোলে রাশিয়ার কৃষ্ণসাগর নৌবহরের সদর দপ্তরে হামলায় এ অস্ত্র ব্যবহার করেছিল ইউক্রেন। তারা পুরো ক্রিমিয়াকে রুশ নৌবাহিনীর জন্য অনিরাপদ করে তোলে এই অস্ত্রের সাহায্যে।
সামরিক বিশ্লেষক ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা জাস্টিন ক্রাম্প বলেন, স্টর্ম শ্যাডো ইউক্রেনের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর অস্ত্র। এই অস্ত্র রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনীয় অঞ্চলের সুরক্ষিত লক্ষ্যবস্তুতে যথাযথভাবে আঘাত হানছে। জাস্টিন ক্রাম্প বলেন, এটা কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, কিয়েভ রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য পশ্চিমাদের কাছে তদবির করে আসছে। বিশেষ করে তারা গস্নাইড বোমা হামলা চালানোর জন্য রাশিয়ার ব্যবহৃত বিমান ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করতে চায়।