আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের জ্যাকসন হাইটস এলাকার রাস্তাগুলো এখন অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। যেখানে সেখানে যৌনকর্মীরা খোলামেলাভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা চোর-ছিনতাইকারীরা অবাধে চালাচ্ছে লুটপাট। গত ৫ মাসে সেখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। তথ্যসূত্র : নিউইয়র্ক পোস্ট
কুইন্সের ৯১ স্ট্রিটের কাছে রুজভেল্ট অ্যাভিনিউতে অবৈধ উন্মুক্ত মাইগ্র্যান্ট মার্কেট এলাকা কয়েক ডজন যৌনকর্মী রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এলাকাটিতে যৌনকর্মীদের সংখ্যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর স্থানীয় চোররা এতটাই দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে যে, তারা চুরি করে ধরা পড়লে দোকানদারদের প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও দোকানদাররা জানান, চুরি করলে চোররা এখন বলে, 'আপনি সমস্যায় পড়বেন বা আমরা ফিরে আসছি এবং আপনাকে দেখে নেবো।'
রুজভেল্ট অ্যাভিনিউতে অবস্থিত ব্রাভো সুপার মার্কেটের ম্যানেজার জেসুস ডিয়াজ বলেন, 'এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আগে যখন আমরা চোর ধরতাম, তারা বলত দুঃখিত আমি আর কখনো চুরি করব না। কিন্তু এখন তারা রেগে যায় এবং আমাদের ওপর হামলা চালাতে চায়। আমরা পুলিশকে ফোন করে বলি- চোর ধরেছি, কিন্তু পুলিশ আসতে চায় না, তারা এই চোরদের গ্রেপ্তারও করতে চায় না।'
এদিকে, 'মার্কেট অফ সুইটহার্ট' নামে পরিচিত বাজারটি এখন আরও বিকশিত হয়েছে এবং রাস্তাজুড়ে দ্বিগুণ যৌনকর্মী দেখা যাচ্ছে। এক গহনার দোকানদার বলেন, 'অনেক সুন্দরী নারী আমার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি শুধু তাদের বলি, সরাসরি সামনে না দাঁড়িয়ে যেন দরজা বন্ধ না করে। আমি আর কী করতে পারি? আগে এখানটা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল, কিন্তু এখন খুব খারাপ অবস্থা।'
যৌনকর্মীরা রাস্তা দখল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, গ্রাহকদের কাছে গিয়ে তাদের নিয়ে আশপাশের অ্যাপার্টমেন্টে তৈরি অস্থায়ী 'ব্রোথেলে' প্রবেশ করছে। জুলাই মাসে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দোকানদাররা সেখানে অসহায় অবস্থায় ছিল। তাদেরকে এ সময় ক্রুদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।
জ্যাকসন হাইটসের রুজভেল্ট অ্যাভিনিউয়ের দোকানদাররা অভিযোগ করেন, অভিবাসীরা তাদের চুরি করা পণ্যগুলো ফুটপাতে 'ডিসকাউন্টে' বিক্রি করছে। পাওয়ার টুল থেকে শুরু করে মাউথওয়াশ পর্যন্ত সবকিছুই চুরি করে ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে, আর দোকানদাররা তাদের কিছুই বলতে পারছেন না।
অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- পুলিশ কিছুই করে না, কিছুই না! এক মোবাইল ফোনের দোকানদার বলেন, ড্রাগস, পতিতাবৃত্তি, মদ সবকিছুর অবৈধ ব্যবসাই এখানে চলছে। একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমাদের দিন অতিবাহিত করতে হয়।
'মি. ফার্মাসিয়া' নামে একটি ফার্মেসির ফার্মাসিস্ট জেনি লিয়াল বলেন, 'স্থানীয়রা এখানে ফুটপাতের অবস্থা দেখে আমাদের ফার্মেসিতে আসতে চায় না। ফুটপাতে ৫০ জনের বেশি অবৈধ বিক্রেতা দখল করে বসে আছে। আমাদের বিক্রি মারাত্মকভাবে কমে গেছে।' তিনি বলেন, 'পুলিশ আসে, কিছুদিন পর আবার ফিরেও যায়। দুই সপ্তাহ আগে পুলিশ একবার এসে সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়েছিল, কিন্তু আজকে ওরা আবার ফিরে এসেছে। গত দুই মাসে এই এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তারা এখন নিজেদের এখানকার কমিউনিটির অংশ হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে।'
স্থানীয় বাসিন্দা বিল বলেন, 'আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি, এখানকার পরিস্থিতি এখন এমনই। এটার উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছি না, আমাদের এখন এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আর কোনো উপায় নেই আমাদের হাতে। আমরা পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিলাম, পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারাও পুলিশকে পরোয়া করছে না।'