অবশেষে আবগারি দুর্নীতি মামলায় জামিন পেয়েছেন ভারতের রাজধানী দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শুক্রবার তাকে জামিন দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) মামলায় আগেই তিনি অন্তর্র্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন। এবার সিবিআইর মামলায়ও জামিন পেলেন তিনি। ফলে জামিন পাওয়ায় ছয় মাস পর জেল থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন কেজরিওয়াল। তবে গভর্নর ভিকে সাক্সেনার অনুমতি ছাড়া কেজরিওয়াল তার অফিসে বা দিলিস্নর সচিবালয়ে যেতে পারবেন না এবং ফাইলে স্বাক্ষর করতে পারবেন না। তথ্যসূত্র : এনডিটিভি
কেজরিওয়ালের দুটি আবেদনের বিষয়ে শুক্রবার সকালে পৃথক আদেশ দেন বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়া এবং বিচারপতি সূর্য কান্ত।
দিলিস্ন সরকারের মদ নীতি কেলেঙ্কারি মামলায় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গত মার্চে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছিল। তারপর থেকে কারাগারে আছেন তিনি। গত জুনে নিম্ন আদালতে তিনি জামিন পেলেও কারামুক্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে তার জামিন আটকাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি। তাদের যুক্তি শুনে দিলিস্ন হাইকোর্ট এক মৌখিক আদেশে কেজরিওয়ালের জামিন স্থগিত করে। পরে আদালত চত্বর থেকে দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। এই পদক্ষেপের বৈধতা তুলে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন তিনি।
সিবিআইয়ের গ্রেপ্তারিতে কোনো বাধা নেই বলে বিচারপতি সূর্য কান্ত ঘোষণা করলেও বিচারপতি উজ্জ্বল প্রশ্ন তুলেছেন, ইডির মামলায় নিম্ন আদালত জামিন মঞ্জুর করার পরই কেন সিবিআই সক্রিয় হয়ে উঠল? জামিনের বিষয়ে বিচারপতিরা অবশ্য ঐকমত্য পোষণ করে বলেন, অদূর ভবিষ্যতে বিচার শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে কারণে তার জামিন মঞ্জুর করা হয়। একই কারণ দেখিয়ে এর আগে মামলাটির আসামি দিলিস্নর সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া এবং তেলেঙ্গানার রাজনীতিবিদ কে কবিতাসহ অন্যদের জামিন দেওয়া হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, দিলিস্নতে কেজরিওয়ালের আপ সরকার আবগারি নীতি বদলে দিয়ে কয়েকটি কোম্পানিকে বেআইনিভাবে ব্যবসায়িক সুযোগ পাইয়ে দিয়েছে। এই আবগারি নীতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে দিলিস্নর আপ সরকার গত বছর তা বাতিল করে। কিন্তু তার আগেই এ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন দিলিস্নর গভর্নর ভিকে সাক্সেনা।
ইডি এক প্রেসনোটে মদ নীতি কেলেঙ্কারি মামলায় কেজরিওয়ালকে 'ষড়যন্ত্রকারী' বলে অভিহিত করেছে। বর্তমানে বাতিল করা মদ নীতি গঠন করার সময় কেজরিওয়ালসহ আপের নেতা, তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া ও এমপি সঞ্জয় সিং সঙ্গে ষড়যন্ত্রে ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) নেত্রী কে কবিতা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ইডির। এই কথিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এমন একটি নীতি তৈরি করা হয়, যা ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি মদের লবিকে সুবিধা পাইয়ে দেবে, যাকে ইডি 'দক্ষিণ লবি' বলে অভিহিত করেছে। ইডির ভাষ্য অনুযায়ী এর বিনিময়ে 'দক্ষিণ লবি' আপকে ১০০ কোটি রুপি দেবে। কিছু অভিযুক্ত ও সাক্ষীর জবানে কেজরিওয়ালের নাম উঠে আসে বলে তাদের বিভিন্ন রিমান্ড নোট ও চার্জশিটে ইডি উলেস্নখ করেছে।
গ্রেপ্তারের আগে দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেননি কেজরিওয়াল। ফলে তিনিই হয়েছেন দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের সময়ে দলের হয়ে প্রচারের জন্য আম আদমি পার্টির এই প্রধান নেতাকে শীর্ষ আদালত কয়েকদিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি দিয়েছিল। পরে আবার তিনি তিহারে আত্মসমর্পণ করেন।