রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ইউক্রেন ইসু্য

ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর হুমকি পুতিনের

'কিয়েভকে দীর্ঘপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলে যুদ্ধের প্রকৃতি ও আওতা পাল্টে যাবে'
যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন

পশ্চিমাদের তৈরি দীর্ঘপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখন্ডে আঘাত হানার অনুমতি দেওয়ার অর্থ হবে- ন্যাটো জোট রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে। বৃহস্পতিবার এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। এই ধরনের কিছু হলে তা ইউক্রেন যুদ্ধের প্রকৃতি ও আওতা পুরোপুরি পাল্টে দেবে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কয়েক মাস ধরে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দীর্ঘপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার অনুমতির আবেদন জানাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে মার্কিন এটিএসিএমএস ও ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডোস ক্ষেপণাস্ত্রও আছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অনেক ভেতরে আঘাত হানা যাবে। জেলেনস্কি বলছেন, মস্কোর হামলা চালানোর সামর্থ্য সীমিত করতে তাদের এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা দরকার। গত সপ্তাহের শেষ দিকে 'বিবিসি' জানিয়েছিল, ইউক্রেনকে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে যাচ্ছে আমেরিকা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সরকারি টেলিভিশনে পুতিন বলেছেন, 'এটি শুধু ইউক্রেন সরকারকে এসব অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় আঘাত হানার অনুমতি দেওয়ার প্রশ্ন নয়। ন্যাটো দেশগুলো একটি সামরিক সংঘাতে সরাসরি জড়াবে কি-না, এটি সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন। যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে তা ন্যাটো দেশগুলোর- আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ইউক্রেনের যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছু হবে না। এটি হবে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ আর এটি অবশ্যই সংঘাতের গতি প্রকৃতি ও ধরন উলেস্নখযোগ্যভাবে বদলে দেবে।' এই নতুন হুমকির ভিত্তিতে রাশিয়া 'উপযুক্ত সিদ্ধান্ত' নিতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছেন পুতিন।

সেই 'সিদ্ধান্তগুলো' কী হবে, তা নিয়ে কিছু বলেননি পুতিন। কিন্তু আগে বলেছিলেন, এ ধরনের কিছু হলে পশ্চিমাদের শত্রম্ন দেশগুলোকে পশ্চিমা লক্ষ্যে আঘাত হানার জন্য রাশিয়ার অস্ত্রে সজ্জিত করা হতে পারে। গত জুনে পুতিন বলেছিলেন, আমেরিকা ও তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের ওপর আঘাত হানার মতো দূরত্বে প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে পারে তারা। উলেস্নখ্য, রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। দেশটি তাদের পরমাণবিক নীতি পুনর্বিবেচনা করার প্রক্রিয়ায় আছে। এই নীতি ঠিক করবে রাশিয়া কখন তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কীভাবে ব্যবহার করবে।

পশ্চিমাদের অভিযোগ, রাশিয়া ইরানের কাছ থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র গ্রহণ করেছে আর এর মধ্য দিয়ে মস্কো যুদ্ধের বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। এর জবাব হিসেবে দীর্ঘপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় আঘাত হানার অনুমতি কিয়েভকে দেওয়া উচিত হবে কি-না, তা খতিয়ে দেখছে পশ্চিমা দেশগুলো।

এই বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর মন্তব্যে পুতিন বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ কিয়েভকে দীর্ঘপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা দেশগুলোকে সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলবে, যেহেতু স্যাটেলাইটের লক্ষ্যস্থল বিষয়ক তথ্য ও ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট পথের নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিং ন্যাটোর সামরিক সদস্যদেরই করতে হবে, কারণ ইউক্রেনের এ সক্ষমতা নেই।

ইউক্রেনকে রাশিয়ায় পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া বিষয়ে পশ্চিমাদের দীর্ঘদিন ধরে দ্বিধা আছে। কেননা, এই সিদ্ধান্তকে 'আগুনে ঘি ঢালা'র মতো পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে এবং আমেরিকা, ইউরোপীয় দেশগুলো ও অন্যদের সরাসরি সংঘাতে টানতে পারে। তবে শীতকাল ঘনিয়ে আসায় এবং ইরানের কাছ থেকে রাশিয়া অতিরিক্ত সমর্থন পাওয়ায় পশ্চিমারা নিজেদের মন পরিবর্তন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাশিয়াই পারে ইউক্রেনে সংঘাত

শেষ করতে : স্টারমার

এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে সংঘাত শুরু করেছিল এবং দেশটিই পারে 'তাৎক্ষণিকভাবে' এটি শেষ করতে। রাশিয়ায় পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করাকে মস্কো যুদ্ধের গুরুতর বৃদ্ধি হিসেবে বিবেচনা করবে বলে সতর্ক করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। তার এমন সতর্কবাণীর উচ্চারণের পরই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য এলো।

কিয়েভের মিত্ররা রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার জন্য ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনার করতে একত্রিত হয়েছেন। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দিতে শুক্রবার ওয়াশিংটনে যান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার।

ওয়াশিংটনে তার ফ্লাইটে পুতিনের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে, প্রধানমন্ত্রী স্টারমার দৃঢ় সুরে বারবার বলছিলেন, যুদ্ধটা রাশিয়াই শুরু করেছে। তিনি বলছিলেন, 'রাশিয়া এই সংঘাত শুরু করেছে। রাশিয়া অবৈধভাবে ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। রাশিয়াই অবিলম্বে এই সংঘাত শেষ করতে পারে।' তিনি আরও বলেন, 'আবারও বলছি, এটি রাশিয়াই প্রথম এটি শুরু করেছিল। তারাই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত করেছে। তারাই বেআইনি কাজ করছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে