গাজায় ইসরাইলি হামলা

জাতিসংঘের ছয় কর্মীসহ নিহত ১৮

প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় শরণার্থী শিবিরে রূপান্তরিত জাতিসংঘ পরিচালিত আরেকটি স্কুলে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে ফিলিস্তিনি শরণার্থী-বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডাবিস্নউএ-র ছয় কর্মীসহ অন্তত ১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-জাওনি স্কুলে বুধবারের এই হামলার সময় বিস্ফোরণের ধাক্কায় নারী ও শিশুরা টুকরা টুকরা হয়ে যান। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা ইউএনআরডাবিস্নউএ বলেছে, গাজার ১১ মাসের যুদ্ধে এক ঘটনায় তাদের 'সবচেয়ে বেশি কর্মী নিহত' হয়েছেন এই হামলায়। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, স্কুলটিতে প্রায় ১২ হাজার উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। স্কুল ভবনটিতে ইসরাইলি বাহিনী আকাশপথে দুইবার হামলা চালায়। আশ্রয় শিবিরটি জাতিসংঘ পরিচালনা করত, আর নিহতদের মধ্যে তাদের ব্যবস্থাপকও আছেন। ইউএনআরডাবিস্নউএ জানায়, গত অক্টোবরে গাজায় ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো স্কুলটিতে হামলা চালানো হলো। সামাজিক মাধ্যম 'এক্সে' করা পোস্টে তারা লিখেছে, 'গাজায় কেউ নিরাপদ নয়। কেউ রেহাই পাচ্ছে না।' ঘটনাস্থল থেকে 'আল-জাজিরা'র সাংবাদিক জানান, স্কুলটিতে 'ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ' চালানো হয়েছে। সেখানে বাতাসে রক্তের গন্ধ ভেসে আসছে। পুরো এলাকাটি ধ্বংসস্তূপ ও আবর্জনায় ভরে আছে। তিনি বলেন, 'লোকজন যখন খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখনই হামলাটি চালানো হয়। কোনো সরঞ্জাম না থাকায় জরুরি বিভাগের কর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আটকেপড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।' হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এক ফিলিস্তিনি নারী জানিয়েছেন, এই হামলায় তিনি তার ছয় সন্তানের সবাইকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এই শিশুরা কি সন্ত্রাসী ছিল? আলস্নাহ ওদের শাস্তি দিন। ইসরাইলিরা আমাদের বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে, আমাদের লোকজনকে হত্যা করছে ও অনাহারে রাখছে; নারীরা বিধবা আর শিশুরা এতিম হচ্ছে।' বেঁচে যাওয়া আরেক ব্যক্তি জানান, স্কুলের যে অংশটিতে হামলা চালানো হয়েছে, ওই অংশটিতে শুধু নারীরা থাকতেন। তিনি বলেন, 'হঠাৎ বিশাল একটি বিস্ফোরণ ঘটল, এতে নারী ও শিশুরা টুকরা টুকরা হয়ে উড়ে যান। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো স্কুলটিতে হামলা চালাল ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। এটি একটি নিরাপদ এলাকা হওয়ার কথা ছিল।' ইসরাইলি সামরিক বাহিনী স্কুলটিতে হামলা চালানো কথা নিশ্চিত করেছে। সেখানে হামাসের একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারকে তারা লক্ষ্যস্থল করেছে বলে কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছে তারা। জাতিসংঘ কর্মী হত্যায় জবাবদিহির অভাব অগ্রহণযোগ্য : গুতেরেস গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘ কর্মী ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারীদের হত্যায় জবাবদিহির অভাবকে 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বুধবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন সম্পর্কে গুতেরেস বলেন, 'গাজায় যা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। সেখানে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন হচ্ছে। বেসামরিকদের জীবনের নিরাপত্তা এখানে একদম অনুপস্থিত।' আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনের আগে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বিগত বছরকে 'অত্যন্ত কঠিন' বলে উলেস্নখ করেছেন তিনি। এদিকে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করে আসছে, বেসামরিকদের জানমালের ক্ষতি হ্রাস করতে তারা সবসময় সতর্ক। আর গাজায় হতাহতের অন্তত এক-তৃতীয়াংশই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য। বেসামরিক নাগরিক হত্যা বিষয়ে তাদের দাবি, হামাস নিরস্ত্রদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করায় এত প্রাণহানি হয়। এই অভিযোগ হামাস বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মানবিক সহায়তা প্রদানে নিয়োজিত ব্যক্তিও নিহত হয়েছেন। তাদের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ জাতিসংঘের কর্মী। গুতেরেস বলেছেন, এসব প্রাণহানির যথাযথ তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিত। তিনি বলেছেন, 'আমাদের আদালত আছে। কিন্তু আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর প্রবণতা দেখা যায় না। জবাবদিহি না থাকার এই সংস্কৃতি একদমই কাম্য নয়'। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত, 'ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস' (আইসিজে), জুলাই মাসে তাদের রায়ে বলেছিল, ফিলিস্তিনিদের এলাকায় ইসরাইলি আগ্রাসন সম্পূর্ণ অবৈধ। এটি তাৎক্ষণিক বন্ধ হওয়া উচিত। ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে আগামী সপ্তাহে এই ইসু্যতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সেনা প্রত্যাহার করতে ইসরাইলকে ছয় মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া যাবে।