কমলা-ট্রাম্প
সত্যিই কি বিতর্কে জিতেছেন কমলা
ট্রাম্পকে বিচলিত করতে গিয়ে নিজের নীতিমালা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলতে পারেননি
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল) প্রধান দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে কে জিতেছেন তা নিয়ে কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক জনমত জরিপের ফল প্রকাশ হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও এ নিয়ে নিজেদের মত দিচ্ছেন। জনমত জরিপ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বেশির ভাগেরই রায় হলো- বিতর্কে কমলাই জিতেছেন। বিতর্কে দর্শকদের ওপর 'সিএনএন' পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, কমলা হ্যারিস জয়ী হয়েছেন। ৬৩ শতাংশ মানুষ তাকে জয়ী বলে মনে করছেন। আর ট্রাম্পকে জয়ী মনে করছেন ৩৭ শতাংশ মানুষ। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা নিবন্ধিত ভোটারদের ওপর 'ইউগভ' পরিচালিত অপর এক জরিপেও দেখা গেছে, বেশির ভাগ মানুষ কমলা হ্যারিসকে জয়ী বলে মত দিয়েছেন। এমনকি রক্ষণশীলদের টিভি নেটওয়ার্ক 'ফক্স নিউজ'র বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন কমলা। বিতর্কের পর সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা ভোটারদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো জরিপের ফল এখনো প্রকাশ হয়নি। জরিপের ফল প্রকাশ হতে কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। আর প্রার্থীরা কে কেমন করলেন, তার ওপর ভিত্তি করে ভোটারদের অনেকে তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলবেন কিনা, তাও নিশ্চিত নয়। তবে কমলা হ্যারিস কি আসলেই জিতেছেন, নাকি ট্রাম্পের দুর্বলতাই তাকে বিজয়ী করে তুলেছে? এ ব্যাপারে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে 'আল-জাজিরা'। তারা বিতর্ক, রাজনৈতিক বক্তব্য, মনস্তত্ত্ব এবং যোগাযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তাদের অনেকে বলেছেন, ট্রাম্পের দুর্বল জায়গাগুলোতে খোঁচা দিয়ে সাফল্য পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। আবার অনেকে বলছেন, ট্রাম্পকে বিচলিত করে দেওয়ার কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন কমলা। আর তা করতে গিয়ে তিনি ভোটারদের নিজের নীতিমালা কী হবে, সে সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলতে পারেননি। আমেরিকার হফসট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টোমেকা এম রবিনসন বলেন, তিনি (কমলা) বিতর্কে জিতেছেন এবং এমনি এমনিই যে জিতে গেছেন, এমনটা নয়। ট্রাম্প সম্পর্কে রবিনসনের মত হলো, রিপাবলিকান এই নেতা বিভিন্ন বিষয়ে নিজের অবস্থানে অটল থাকতে পারেননি। তিনি মনে করেন, অবৈধ অভিবাসী এবং প্রজনন বিষয়ক (গর্ভপাতের অধিকার) একই ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য না দিয়ে ট্রাম্পের উচিত ছিল প্রেসিডেন্ট হলে তার নীতিমালা কী হবে তা নিয়ে বলা। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম বিষয়ক অধ্যাপক ট্যামি আর ভিজিলও বলেছেন, ট্রাম্পের দুর্বলতাগুলোকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন কমলা। তবে তিনি তার নীতিমালা সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। ভিজিল বলেন, 'কমলা বিতর্কে জিতেছেন। কারণ, তিনি ভালো করেই জানতেন যে, ঠিক কোন জায়গায় খোঁচা দিলে ট্রাম্প তার চিরাচরিত রূপে নিজেকে প্রকাশ করতে শুরু করবেন। তিনি যা বলেন, তা খুব কম সময়েই সত্য হয়। তিনি চান কথাগুলোকে দর্শকরা আবেগ দিয়ে বিবেচনা করুক, যুক্তি দিয়ে নয়। মঙ্গলবার রাতেও তিনি একই কাজ করেছেন।' অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও অসংলগ্ন ছিলেন ট্রাম্প বিশেষজ্ঞদের অনেকে আবার আগের বিতর্কে ট্রাম্পের আচরণের সঙ্গে গত মঙ্গলবার রাতের বিতর্কে তার আচরণের তুলনা করছেন। আগের বিতর্কে ট্রাম্পের মুখোমুখি হয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে ট্রাম্পের কাছে বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ার পর বাইডেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নিক বিউচ্যাম্প বলেন, প্রথম বিতর্কে বাইডেন নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে এনেছিলেন। ট্রাম্প ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করে, শান্ত থেকে এবং বেশির ভাগ সময় নিজের বার্তা দেওয়ার মধ্য দিয়ে কাজটি আরও সহজ করে তুলেছিলেন। অপরদিকে, কমলা-ট্রাম্প বিতর্কে কমলা একনাগাড়ে ট্রাম্পকে খোঁচা দিচ্ছিলেন, বিদ্রূপ করছিলেন এবং ছোটখাটো অপমান করে যাচ্ছিলেন। আর এতে ট্রাম্প কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তিনি ক্রমাগত রেগে যেতে থাকেন এবং অসংলগ্ন আলোচনা করতে থাকেন। কমলা সম্পর্কে বিউচ্যাম্প বলেন, তিনি (কমলা) নিজের সম্পর্কে, নিজের মূল্যবোধ সম্পর্কে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি। বরং তিনি ট্রাম্পকে বেসামাল করে দেওয়ার চেষ্টাতেই ব্যস্ত ছিলেন। মিথ্যা নিয়ে ট্রাম্পের কিছু আসে যায় না সত্যতা যাচাই সংক্রান্ত সংস্থাগুলো ট্রাম্পকে ভুল প্রমাণের মতো অনেক তথ্য পেলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, বিতর্কে কে জিতেছেন, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ভুল এবং অযৌক্তিক সব দাবি করেন তা নতুন কিছু নয়, তা অনেক আগেই প্রমাণিত। বরং তার এসব কথাবার্তার কারণে অন্য অন্য রাজনীতিকদের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই প্রার্থীর কাছ থেকে দুই ধরনের আচরণ যখন আশা করা হয়, তখন বিতর্কের ফল নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়।