মণিপুরের তিন জেলায় কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা
এক সপ্তাহের বেশি সময় বন্দুকযুদ্ধ, ড্রোন ও রকেট হামলার পর এবার ভারতের মণিপুর রাজ্যের তিনটি জেলায় কারফিউ জারি করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি গোটা রাজ্যের ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিবর্তনের' কারণে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ইম্ফল পূর্ব ও পশ্চিম এবং থৌবাল জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের বাসা থেকে বেশি দূরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইম্ফল পশ্চিমের কাকওয়ায় মঙ্গলবার কারফিউ চলাকালে মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ভারতের একটি সংবাদ সংস্থায় সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। একদিকে শিক্ষার্থীরা পাথর ছুড়ছেন, অপর দিক থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা আবারও বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রায় এক বছর আগেও সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এর থেকে মনে করা হচ্ছে, আগামী কয়েক দিনে রাজ্যে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার। গত সোমবার মণিপুরে পৃথক ঘটনায় কুকি-জো সম্প্রদায়ের নেজাহোই লুংডিম নামের একজন নারী ও লিমখোলাল মেট নামের একজন সাবেক সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। লিমখোলাল ভারতীয় সেনাবাহিনীর আসাম রেজিমেন্টের হাবিলদার ছিলেন। দুইজনেই দক্ষিণ মণিপুরের কাংপোকপি জেলার বাসিন্দা। ভারতের প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, লুংডিমের দেহে বোমার স্‌িপস্নন্টারের চিহ্ন ছিল। কাংপোকপির থাংবুহ গ্রামের একটি গির্জার বাইরে তার দেহ পাওয়া যায়। সন্দেহ করা হচ্ছে, রোববার রাতে আঁততায়ীরা থাংবুহ গ্রামের কাছে একটি সিআরপিএফ ক্যাম্পে হামলা চালালে ক্রসফায়ারে মারা যান লুংডিম। এদিকে লিমখোলাল মেটের দেহ সোমবার ইম্ফল পশ্চিম জেলার সেকমাই গ্রামে পাওয়া যায়। বাজারে যাওয়ার সময় তাকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, কাংপোকপির মটবুংয়ের বাসিন্দা লিমখোলাল মেট রাতে ভুলবশত গ্রামে (সেকমাই) প্রবেশ করেছিলেন। সম্ভবত সেখান থেকেই তাকে অপহরণ করে পরে হত্যা করা হয়। ১ সেপ্টেম্বর থেকে মণিপুরে জাতিগত সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। নেজাহোই লুংডিম ও লিমখোলাল মেটে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোমবার ইম্ফলে বিক্ষোভ করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মণিপুর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অপসারণ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের সুরক্ষার দাবিতে থাউবাল ও ইম্ফলসহ বিভিন্ন অংশে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। এর জেরে গোটা রাজ্যে ব্যাপক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। গত কয়েক দিনের সংঘাতের জেরে গত সোমবার মণিপুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভারতের পতাকা নামিয়ে মেইতেই সম্প্রদায়ের পতাকা টাঙিয়ে দেয় শিক্ষার্থী ও বিক্ষুব্ধ জনতা। থৌবাল জেলায় ডেপুটি কমিশনারের দপ্তরের ছাদেও মেইতেই সম্প্রদায়ের পতাকা টাঙিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা মণিপুর সচিবালয় ও রাজভবনে জড়ো হন। এ সময় তারা সাম্প্রতিক ড্রোন ও রকেট হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। মণিপুর পুলিশের মহাপরিচালক ও নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিও তোলেন তারা। রাজভবনের দিকে মিছিল করার সময় নিরাপত্তা বাহিনী তাদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে। এতে কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিন জেলায় কারফিউ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। এদিকে সর্বশেষ বুধবার সকাল থেকে নতুন করে কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি, যদিও রাজধানী ইম্ফলে উত্তেজনা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। ইম্ফলের সিনিয়র সাংবাদিক ওয়াই রূপাচন্দ্র সিং বলছেন, মঙ্গলবার রাত পর্যন্তও তিনি অশান্তির খবর পেয়েছেন। কিন্তু বুধবার দুপুর পর্যন্ত নতুন করে কোনো ঘটনা হয়নি। রাস্তায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ টহল চলছে বলে জানাচ্ছেন তিনি। রাজ্যে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আরও দুই হাজার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে ওই রাজ্যে পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজভবন থেকে মঙ্গলবার রাতে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ছাত্রদের একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি সনদ পেশ করেছে।