তীব্র লড়াই

বিশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে মার্কিন নির্বাচন

সাম্প্রতিক জরিপের ফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, কমলা ও ট্রাম্পের সমর্থন প্রায় সমানভাবে ভাগ হয়ে গেছে

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প কমলা হ্যারিস
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই তীব্র হয়ে উঠেছে। দুই দিন পর কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে প্রথম এবং সম্ভবত একমাত্র টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ সমীক্ষাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, ট্রাম্প এখনো প্রায় অর্ধেক ভোটারের দৃঢ় সমর্থন ধরে রেখেছেন। যদিও তিনি একজন অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হারের ফল বদলানোর চেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর পর প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে নামেন কমলা হ্যারিস। দ্রম্নত নিজেকে একজন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তবে জনমত জরিপে দেখা গেছে, তিনি এখনো বড় কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। ফলে নির্বাচনী লড়াই অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। 'নিউ ইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজ'র একটি জরিপ অনুসারে ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প জাতীয়ভাবে ৪৮ শতাংশ সমর্থন পেয়ে হ্যারিসের চেয়ে এক শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। আর কমলা ৪৮ থেকে ৪৭ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন, যা 'মার্জিন অব এরর' সীমার মধ্যে রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জাতীয় ভিত্তিতে বেশি ভোট বা জনপ্রিয়তা দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং রাজ্যভিত্তিক ভোটের ফলের মাধ্যমে হয়। ফলে কিছু নির্দিষ্ট দোদুল্যমান রাজ্যই সাধারণত ফল নির্ধারণ করে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, কমলা উইসকনসিন, মিশিগান ও পেনসিলভানিয়ায় সামান্য এগিয়ে আছেন। নেভাডা, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি অবস্থানে আছেন। সিবিএস নিউজ/ইউগভের আরেকটি জরিপ অনুসারে কমলা মিশিগান ও উইসকনসিনে এক পয়েন্টে এগিয়ে এবং পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের সঙ্গে সমান অবস্থানে আছেন। নির্বাচনটি এরই মধ্যে বিশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। ৮১ বছর বয়সি বাইডেন তার বয়সজনিত উদ্বেগের কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান, ট্রাম্প অল্পের জন্য একটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান এবং নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হলে আবারও তিনি হার স্বীকার করবেন না এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক জরিপের ফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, উভয় প্রার্থীর সমর্থন প্রায় সমানভাবে ভাগ হয়ে গেছে। যা নির্বাচনকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবারের বিতর্কটি একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কারণ এটি দুই প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র নির্ধারিত বিতর্ক। ট্রাম্পকে বিতর্কে তার সাধারণ আক্রমণাত্মক মনোভাব সংযত করতে চাপের মধ্যে থাকতে হবে। কারণ তিনি প্রথমবারের মতো একজন মিশ্র-জাতির প্রার্থীর মুখোমুখি হচ্ছেন, যিনি আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে আছেন। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিসকে এই বিশাল দর্শক শ্রেণির সামনে নিজের পক্ষে সমর্থন আদায় করতে হবে, যা তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে করতে পারেননি এবং অল্প সময়ের প্রচারেও তা খুব বেশি হয়ে ওঠেনি। ট্রাম্প মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। কমলা তার প্রচারে একটি আশাবাদী ও ভবিষ্যৎমুখী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যা ট্রাম্পের সংকটপূর্ণ দাবির বিপরীতে দাঁড়াচ্ছে। ট্রাম্প দাবি করছেন, তিনি না থাকলে দেশ পতনের মুখে পড়বে। তবে কমলাকে নীতিগত দিক থেকে অস্পষ্ট থাকার অভিযোগও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তিনি শেষ পর্যন্ত রোববার একটি ইশতেহারের মতো ঘোষণা প্রকাশ করেছেন, যেখানে শ্রমিক ইউনিয়ন, জীবনযাত্রার ব্যয় ও স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদিকে, কমলাকে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের সময় কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কারণ ট্রাম্প প্রায় প্রতিটি বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন এবং প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে উসকে দিতে ভালোবাসেন। একমাত্র বিতর্কে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় বাইডেন এই কৌশলের মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন। এরই মধ্যে ট্রাম্পের বর্ণবাদী ও লিঙ্গবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছেন কমলা। তার নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করে এবং তাকে 'পাগল' ও 'মার্কসবাদী' বলে কটাক্ষ করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দেশটির পরিবহণ মন্ত্রী পিট বুটিজেজ 'সিএনএন'কে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে অংশ নিতে প্রায় অতিমানবীয় মনোযোগ ও শৃঙ্খলা প্রয়োজন। কমলার প্রচারণা শিবির বিতর্কের পর নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়াসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে প্রচারাভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প শনিবার উইসকনসিনে একটি সমাবেশ করেছেন, যেখানে তিনি ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে আমেরিকায় 'খুনি, শিশু নিপীড়ক ও সিরিয়াল ধর্ষকদের' আমদানি করার অভিযোগ এনে তার শ্বেতাঙ্গ, শ্রমিক শ্রেণির সমর্থকদের উদ্দেশে একটি ভাষণ দেন। ট্রাম্প তার সোস্যাল মিডিয়া পস্ন্যাটফর্ম 'ট্রুথ সোস্যাল'-এ ঘোষণা করেছেন, তিনি আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে এলে, যারা নভেম্বরের নির্বাচনে 'প্রতারণা' করার পরিকল্পনা করছে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করবেন।