তীব্র লড়াই
মিয়ানমারের রাখাইনে নৌঘাঁটি দখলে নিল আরাকান আর্মি
ঘাঁটিটি থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ
প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনের একটি নৌঘাঁটি দখলে নিয়েছে দেশটির রাখাইনভিত্তিক জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। এক মাসের তীব্র লড়াইয়ের পর গত সপ্তাহে তারা ওই ঘাঁটিটি দখলে নেয়। তথ্যসূত্র : ইরাবতী, এএফপি
জাতিগত আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, তারা এক মাসের তীব্র লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের থান্ডওয়ে শহরের এনগাপালি বিচের পর্যটন কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত জান্তার নেভি সিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি দখল করেছে।
জান্তার শক্ত এই ঘাঁটিটি আনুষ্ঠানিকভাবে সেন্ট্রাল নেভাল ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ ডিপো (সিএনডিএসডি) নামে পরিচিত। জান্তাবিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর দখল করা দেশটির নৌ-বাহিনীর প্রথম কোনো সদর দপ্তর এটি।
মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং গত বছরের জানুয়ারিতে মং শোয়ে লে গ্রামে অবস্থিত সিএনডিএসডি পরিদর্শনের সময় জেনারেল স্টাফ, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আরাকান আর্মি বলছে, নৌ-বাহিনীর শক্ত এই ঘাঁটিটি দখলের জন্য তারা গত ৭ আগস্ট তাদের অভিযান শুরু করে। অভিযানের শুরুতে তারা কাছাকাছি গ্রামে ঘাঁটি রক্ষাকারী সামরিক পোস্টগুলোতে আক্রমণ করেছিল। মূলত প্রশিক্ষণ সদর দপ্তরটি রক্ষার জন্য সংঘাতপীড়িত অন্যান্য স্থান থেকে সেনাদের এখানে আনাসহ এক হাজার ২০০ জনের বেশি সেনা মোতায়েন করেছিল জান্তা। মোতায়েনকৃত এসব সেনার মধ্যে নৌ-প্রশিক্ষণার্থীরাও ছিলেন।
আরাকান আর্মি বলেছে, নৌবাহিনীর জাহাজ এবং বিমান ব্যবহার করে ঘাঁটির চারপাশে আরাকান আর্মির সেনাদের ওপর বোমাবর্ষণও করেছিল জান্তা। এরপর গত শুক্রবার আরাকান আর্মি দাবি করে, তাদের বাহিনী ৪০০ জনের বেশি সরকারি সেনাকে হত্যা করেছে এবং ঘাঁটিটি থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে। নৌ-বাহিনীর জাহাজগুলো মৃত ও আহত জান্তা সেনাদের উদ্ধার করে এবং তাদের আইয়েরওয়াদি অঞ্চল এবং রাখাইনের রাজধানী সিতওয়েতে নিয়ে যায়।
তবে সংঘর্ষের জায়গায় রেখে যাওয়া সরকারি সেনাদের মৃতদেহ কবর দেয় আরাকান আর্মির সেনারা। এ ছাড়া থান্ডওয়ে ট্রেইনিং সেন্টার হারানোর পর সিতওয়ের জান্তা ঘাঁটিগুলো থেকে কাছাকাছি পাউকতাও শহরে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন বেসামরিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। এতে করে সেখানকার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জাতিগত এই সেনাবাহিনী জানিয়েছে। এছাড়া উত্তর রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মংডু শহর দখল করার জন্য সপ্তাহব্যাপী আক্রমণে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ অব্যাহত রেখেছে আরাকান আর্মি।
উলেস্নখ্য, ২০২১ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি অভু্যত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং এই অভু্যত্থানের নেতৃত্ব দেন। মিয়ানমারের বর্তমান সামরিক সরকারের প্রধানও তিনি।
জান্তার ক্ষমতা দখলের পরপরই বিক্ষোভ শুরু হয় মিয়ানমারে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে সেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে আসে জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী। ২০২৩ সালে নভেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জান্তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে যুদ্ধে নামে গোষ্ঠীগুলো। সেই যুদ্ধ এখনো চলছে এবং এরই মধ্যে দেশের বড় এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে জান্তা।