রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
গাজায় যুদ্ধবিরতি

চুক্তি নিয়ে আমেরিকাই আশাবাদী নয়

হামলায় গাজার সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা পরিবারসহ নিহত জর্ডান থেকে আসা বন্দুকধারীর গুলিতে তিন ইসরাইলি নিহত
যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও জর্ডানের মধ্যে সীমান্ত ক্রসিংয়ে রোববার তিন ইসরাইলিকে এক বন্দুকধারী গুলি করে হত্যা করার পর সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়। 'অ্যালেনবি' নামের এই সীমান্ত ক্রসিংটি মূলত ইসরাইলি, ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকরা ব্যবহার করেন -রয়টার্স অনলাইন

হামাসসহ গাজার ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি করার বিষয়ে আমেরিকা আশাবাদী নয় বলে দাবি করেছেন কয়েকজন ইসরাইলি ও মার্কিন কর্মকর্তা। তবুও ওয়াশিংটন শিগগিরই একটি নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করতে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা। আমেরিকা বর্তমানে একটি নতুন প্রস্তাব খসড়া করছে, যা তেল আবিব এবং মধ্যস্থতাকারীদের কাছে উপস্থাপন করা হবে। যদিও এই চুক্তি চূড়ান্ত করার সম্ভাবনা খুব কম বলে জানা গেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি, আনাদলু

ইসরাইলি ও মার্কিন কর্মকর্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরাইলের পাবলিক ব্রডকাস্টার 'কান' জানিয়েছে, আমেরিকা এই প্রস্তাবকে 'শেষ সুযোগের প্রস্তাব' হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এটি রোববার বা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উপস্থাপন করা হতে পারে। প্রস্তাবের অন্যতম প্রধান বিষয় হলো- গাজার ফিলাডেলফিয়া করিডোর। যেটি মূলত মিসর এবং গাজার মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত।

এছাড়া বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে আলোচনার মধ্যে ইসরাইলি কারাগারে বন্দি বয়স্ক ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা নিয়েও বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে হামাস তাদের পুরনো শর্তগুলো থেকে পিছু হটছে না এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক বন্দির মুক্তির দাবির বিষয়ে অটল। ইসরাইলের অনুমান, গাজায় হামাসের হাতে এখনো ১০০ জনের বেশি ইসরাইলি বন্দি রয়েছে। যাদের মধ্যে কিছু বন্দির মৃতু্য হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমেরিকা, কাতার এবং মিসর মাসের পর মাস চেষ্টা করেও ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে একটি বন্দি বিনিময় এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার ফলে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ বন্ধে অনীহাই মূলত এই মধ্যস্থতাকারী প্রচেষ্টাগুলোকে ব্যাহত করেছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা পরিবারসহ নিহত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলায় শীর্ষ এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। নিহত ওই কর্মকর্তার নাম আবু আল-আব্দ মুরসি। তিনি গাজার সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। শনিবার রাতে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে ইসরাইলি হামলায় তিনি প্রাণ হারান। নৃশংস এই হামলায় তার পরিবারও নিহত হয়েছে।

উত্তর গাজার সিভিল ডিফেন্সের ডেপুটি ডিরেক্টর আবু আল-আব্দ মুরসি জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের আল-আলমি এলাকায় বোমা হামলায় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিহত হন।

এদিকে, ইসরাইলি বিমান হামলায় শনিবার গাজায় কমপক্ষে আরও ৩১ জন নিহত হয়েছেন। বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হওয়া ইসরাইলি হামলায় এক মা ও তার ছেলের মৃতু্য হয়েছে। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলায় আরও পাঁচজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ইসরাইলি যুদ্ধবিমান আবারও গাজার একটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে। বাস্তুচু্যত বহু পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলায় অন্তত আট ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ৯০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৯৪ হাজারের বেশি।

জর্ডান থেকে আসা বন্দুকধারীর গুলিতে

তিন ইসরাইলি নিহত

ওদিকে, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও জর্ডানের মধ্যে সীমান্ত ক্রসিংয়ে রোববার তিন ইসরাইলিকে এক বন্দুকধারী গুলি করে হত্যা করেছেন। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, ওই বন্দুকধারী হঠাৎ একটি ট্রাকে করে জর্ডানের দিক থেকে কিং হোসেন সেতুর কাছে (যা অ্যালেনবি ব্রিজ ক্রসিং নামেও পরিচিত) ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। এতে ঘটনাস্থলেই তিন ইসরাইলি প্রাণ হারায়। এ সময় ইসরাইলি বাহিনীর (আইডিএফ) পাল্টা গুলিতে নিহত হন ওই বন্দুকধারীও। তবে তার পরিচয় প্রকাশ করেনি ইসরাইল।

আইডিএফের দাবি, হামলাকারীর গুলিতে নিহত তিনজনই ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, নিহত তিনজনের বয়স ৫০ বছর।

অ্যালেনবি ক্রসিংটি মূলত ইসরাইলি, ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকরা ব্যবহার করেন। ইসরাইল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামাসের গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামলা চালানোর পর থেকে সেখানে সহিংসতা বেড়েছে।

নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ

এদিকে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর না করায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবি তুলেছেন।

বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ব্যানার, ইসরাইলি পতাকা এবং হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের ছবি হাতে নিয়ে নেতানিয়াহুর বাসভবনের চারপাশে জড়ো হন। তাদের দাবি, গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে বন্দি বিনিময় দ্রম্নত বাস্তবায়ন করতে হবে।

এই বিক্ষোভ ইসরাইলে চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনার প্রতিফলন। যেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন দিন দিন বেড়েই চলছে। বিক্ষোভকারীদের মতে, গাজায় চলমান সংঘর্ষে মানবিক বিপর্যয় বাড়ছে এবং বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সংঘর্ষের অবসান ঘটানো প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে