পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র নিয়ে ২৪ বছর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রথম সুনির্দিষ্টভাবে ফিরিয়ে আনা একটি পুরনো কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) বায়ুমন্ডলে প্রবেশের পর রোববার প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। মহাকাশে ধ্বংসাবশেষ কমানোর লক্ষ্যে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ) প্রথম এ উদ্যোগ নিয়েছে। তথ্যসূত্র : এএফপি
২০০০ সালে উৎক্ষেপণের পর থেকে 'সালসা' উপগ্রহটি ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের ওপর আলোকপাত করতে সাহায্য করেছে। ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের শক্তিশালী চৌম্বকীয় ঢাল পৃথিবী সৌর ঝড়ের আঘাত থেকে সুরক্ষা দেয় এবং এই চৌম্বকীয় ঢাল না থাকলে আমাদের গ্রহটি প্রাণের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
ইএসএ জানায়, সালসা উপগ্রহটি প্রথম পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, এর অর্থ হলো- এটি একটি নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে পৃথিবীতে ফিরে আসবে, কিন্তু এটি বায়ুমন্ডলে পুনঃপ্রবেশের কারণে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে থাকা বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের টিম (দল) এরই মধ্যে ৫৫০ কেজির স্যাটেলাইটটি চিলির উপকূলে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একটি প্রত্যন্ত ও জনবসতিহীন অঞ্চলে পুড়ে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য গত-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
উপবৃত্তাকার কক্ষপথের কারণে সালসার বায়ুমন্ডলে পুনঃপ্রবেশ সম্ভব হচ্ছে। পৃথিবীর চারপাশে ঘূর্ণনে এটি আড়াই দিন সম নেয়। ঘূর্ণনকালে এটি এক লাখ ৩০ হাজার কিলোমিটার দূরে সরে যায় এবং আবার মাত্র কয়েকশ কিলোমিটার কাছাকাছি চলে আসে।
ইএসএ'র সৌরজগতের অভ্যন্তরীণ মিশন অপারেশন ইউনিটের প্রধান ব্রম্ননো সুসা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সালসা তার শেষ দুটি প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর প্রায় ১১০ কিলোমিটারের মধ্যে এসেছিল। তিনি বলেন, 'এর পরের ঘূর্ণনে এটি ৮০ কিলোমিটারে নেমে আসবে, যা বায়ুমন্ডলর অঞ্চল। ফলে সেখানেই এটি পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'
যখন একটি উপগ্রহ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ওপর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করতে শুরু করে, তখন বায়ুমন্ডলীয় কণাগুলোর সঙ্গে তীব্র ঘর্ষণে তাপের সৃষ্টি হয়, এতে উপগ্রহটিতে আগুন ধরে যায় এবং এটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। কিছু টুকরা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে পারে।
ইএসএ আশা করছে, মোটামুটি একটি ছোট গাড়ির আকারের সালসা উপগ্রহটি বায়ুমন্ডলের কয়েকশ মিটারের মধ্যে পুনঃপ্রবেশ করতে পারে।
স্যাটেলাইটটি (কৃত্রিম উপগ্রহ) জ্বলতে দেখার জন্য একটি বিমান ১০ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ে যাবে এবং এর পতনশীল ধ্বংসাবশেষ ট্র্যাক করবে, যা তার আসল ভরের মাত্র ১০ শতাংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সালসা হলো ইএসএ'র 'ক্লাস্টার মিশন'র তৈরি চারটি উপগ্রহের অন্যতম। যেটি নিঃশেষ হতে চলেছে। অন্য তিনটি ২০২৫ ও ২০২৬ সালে অনুরূপ ভাগ্য বরণ করে। ইএসএ আশা করছে, এই পুনঃপ্রবেশগুলো থেকে তারা শিখবে যে, কোনো ধরনের পদার্থ বায়ুমন্ডলে অদাহ্য, যাতে 'ভবিষ্যতে আমরা এমন উপগ্রহ তৈরি করতে পারি, যা এই প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ বাষ্পীভূত হয়ে যাবে।
বিজ্ঞানীরা আমাদের গ্রহকে প্রদক্ষিণরত মহাকাশ-বর্জ্য সম্পর্কে সতর্ক করছেন। এমন বিপুলসংখ্যক বিকল স্যাটেলাইট এবং অন্য মিশনের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। গত বছর ইএসএ ২০৩০ থেকে তার মিশনের জন্য একটি 'শূন্য বর্জ্য' সনদে স্বাক্ষর করেছে।