মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
ইসরাইলি আগ্রাসন

টিকা কর্মসূচির মধ্যেই গাজায় হামলা

গত ৪৮ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬১ জন
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পেলিও টিকা কর্মসূচির মধ্যেই ইসরাইলি বাহিনী গাজায় লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার খান ইউনিসে ইসরাইলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি ভবন দেখছে ফিলিস্তিনি শিশুরা -আল-জাজিরা অনলাইন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান পোলিও টিকা কর্মসূচির মধ্যেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। শুক্রবার ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় গাজা উপত্যকাজুড়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন ফিলিস্তিনি। আর গত ৪৮ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬১ জন। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি

স্থানীয় জনগণ এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গাজার সব এলাকায় সংঘাত হয়েছে। উপত্যকার বৃহত্তম এবং ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবির নুসেইরাতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন দুই নারী এবং দু'জন শিশু। গাজার বৃহত্তম শহর গাজা সিটিতে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন আটজন এবং বাকি নিহতের কেউ খান ইউনিস, কেউ রাফাহ, কেউ বা জেইতুনের বাসিন্দা।

গত ১১ মাস ধরে গাজায় যুদ্ধ হচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী এবং হামাসের মধ্যে। এই যুদ্ধ থামানোর জন্য মাসের পর মাস ধরে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ আমেরিকা, কাতার, মিসর এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধাবসান ও শান্তি স্থাপনে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার প্রায় সবই ব্যর্থ। হামাস এবং ইসরাইল- উভয়ই এ ব্যর্থতার জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর গাজা উপত্যকার শিশুদের জন্য পোলিও টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতি বছর উপত্যকায় এই সময় শিশুদের পোলিও টিকা খাওয়ানো হয় এবং পুরো কর্মসূচি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকে জাতিসংঘের তিন অঙ্গ সংগঠন- বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিস্নউএইচও), ইউনিসেফ ও ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা আনরোয়া।

টিকাদান কর্মসূচি শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ইসরাইলি বাহিনী এবং হামাস। প্রাথমিকভাবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ সেপ্টেম্বর ছিল টিকাদান কর্মসূচির মেয়াদ। তবে ৩ সেপ্টেম্বর গাজার সীমান্তবর্তী শহর রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা জানান, সেখানকার অনেক শিশু টিকা পায়নি। তাই কর্মসূচির মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়।

শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' পোস্ট করা এক বার্তায় জাতিসংঘের সংস্থা আনরোয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'গত ১ সেপ্টেম্বর টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়েছে প্রায় তিন লাখ ৫৫ হাজার শিশুকে। আমাদের লক্ষ্য গাজার এক থেকে ১০ বছর বয়সি সব শিশুকে টিকার আওতায় আনা। গাজায় বর্তমানে এই বয়সি শিশুদের মোট সংখ্যা ছয় লাখ ৪০ হাজারের বেশি।'

গাজায় ৫০ হাজারের বেশি শিশু

তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে

এদিকে, জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা- ইউনিসেফ বলছে, ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের কারণে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। সংস্থাটি অবরুদ্ধ উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের 'প্রকৃত' ঝুঁকি এড়াতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইউনিসেফের শিশু পুষ্টি ও উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক ভিক্টর আগুয়েও বলেন, 'আমরা অনুমান করি, ৫০ হাজারের বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে এবং তাদের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার প্রয়োজন।'

জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাবিস্নউএফপি) গাজার পরিস্থিতিকে 'ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক খাদ্য ও পুষ্টি সংকটের মধ্যে একটি বলে বর্ণনা করার পরপরই এবার ইউনিসেফ এই তথ্য জানাল।

আগুয়েও বলেন, 'এটি মনে রাখা জরুরি, গাজার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, যারা এই ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হচ্ছে তারা শিশু।' গাজায় গত সপ্তাহের সফরের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'আমি দেখেছি কীভাবে বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে কয়েক মাস যুদ্ধ এবং কঠোর বিধিনিষেধের ফলে শিশুদের পুষ্টির জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি দেখা দিয়েছে। একইভাবে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থার পতন ঘটেছে।' তিনি সতর্ক করে বলেন, 'গাজায় দুর্ভিক্ষ এবং বড় আকারের গুরুতর পুষ্টি সংকটের ঝুঁকি বাস্তব। এটি প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় হলো, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং পুরো গাজা উপত্যকায় বড় ধরনের মানবিক সাহায্য প্রবেশাধিকারের উদ্যোগ নেওয়া।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে