সাইটটি এখন অফলাইনে

রহস্যময় ওয়েবসাইট থেকে কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে গুজব

নিবন্ধে অসংখ্য ভুল তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, এটি ভুয়া

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস
আমেরিকার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনাটি ঘটেছে ২০১১ সালে সান ফ্রান্সিসকো শহরে, যার ফলে ১৩ বছর বয়সি এক কিশোরী শারীরিক অক্ষমতার শিকার হয়েছে। সম্প্রতি এমনই কিছু তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে মার্কিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তথ্যসূত্র : বিবিসি গত ২ সেপ্টেম্বর নিবন্ধটি এমন একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ পেয়েছে, যারা নিজেদের 'কেবিএসএফ-সান ফ্রান্সিসকো নিউজ' নামের গণমাধ্যম বলে দাবি করে থাকে। এরই মধ্যে পোস্টটি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু পোস্টে ডানপন্থি ব্যবহারকারীদের দাবি, এর ভিউ কয়েক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। এই নিবন্ধে অসংখ্য ভুল তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, এটি ভুয়া। আর ওয়েবসাইটটিও এখন অফলাইন হয়ে গেছে। অভিযোগ কী? একটি অনলাইন নিবন্ধ, যার সঙ্গে রয়েছে একটি পাঁচ মিনিট দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। এতে এমন একজন নারীর সাক্ষাৎকার আছে, যিনি নিজেকে ২৬ বছর বয়সি আলিশিয়া ব্রাউন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তার দাবি, তিনি এখন শারীরিকভাবে অক্ষম। তবে, তার পরিচয় নিশ্চিত করার মতো কোনো তথ্য বা তার বর্ণনা আদৌ সত্যি কি-না, সেই প্রমাণ মেলেনি। ভিডিও ধারণ করার সময় তিনি নিচে বসেছিলেন ও ভিডিও'তে তার পায়ের অংশ দেখা যায়নি, এবং তিনি এক অজানা জায়গা থেকে কথা বলছেন। নিবন্ধে তাকে 'আলিশা' ও 'আলিশিয়া' উভয় নামে সম্বোধন করা হয়েছে, তাও কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, ২০১১ সালের জুনে সান ফ্রান্সিসকোতে মায়ের সঙ্গে রাস্তা পার হওয়ার সময় তাকে একটি গাড়ি চাপা দেয়। তিনি আরও যোগ করেন, তাকে চাপা দেওয়া চালক ছিলেন কমলা হ্যারিস। তবে, তিনি এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাননি। এদিকে, ভিডিও'র বর্ণনাকারী দাবি করেছেন, ওই নারী ১১টি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে গেছেন, যেখানে তারা দুটি এক্স-রে'র ছবিও দেখান। তবে, এ ঘটনা ঘটার বা এর সঙ্গে হ্যারিসের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিবন্ধটি দেখতে ভুয়া কেন? এজন্য ওয়েবসাইটের নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট তথ্য খতিয়ে দেখেছে 'বিবিসি ভেরিফাই'। এতে দেখা যায়, ওয়েব ডোমেইনটি মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগের, অর্থাৎ ২০ আগস্ট সেট আপ করা হয়েছিল। এ ছাড়া, সান ফ্রান্সিসকোতে 'কেবিএসএফ' নামের কোনো সংবাদ আউটলেট থাকার হদিসও মেলেনি। ওয়েবসাইটটি এখন অফলাইনে নেওয়া হয়েছে এবং এতে এখন আর প্রবেশ করা যাচ্ছে না। নিবন্ধের শুরুতে দেওয়া ছবিতে একটি বিধ্বস্ত গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের 'ক্লোজ আপ শট' দেখা গেছে, যেখানে গাড়ির পাশে থাকা রোডের একটি কোনায় সম্ভবত একজন পুলিশ অফিসার এবং বেশ কিছু সংখ্যক অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছেন। বিবিসি ভেরিফাই ওই ছবি ডাউনলোড করে অনলাইনে এর আগের বিভিন্ন সংস্করণ খুঁজে দেখেছে, যেখানে তারা একটি 'রিভার্স ইমেজ' সার্চ টুল ব্যবহার করেছে। এতে দেখা যায়, এর আসল পোস্টটি ২০১৮ সালে গুয়ামের মাঙ্গিলাও গ্রামে ঘটে যাওয়া এক সড়ক দুর্ঘটনার নিবন্ধ। পরে এই একই রিভার্স ইমেজ সার্চ টুল ব্যবহার করে ভিডিও'তে দেখানো এক্স-রে'গুলোও পরীক্ষা করা হয়। এতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এইসব ছবি বিভিন্ন মেডিকেল গবেষণা বিষয়ক নিবন্ধ থেকে নেওয়া, যেগুলো পোস্ট হয়েছে ২০১০ ও ২০১৭ সালে। সেইসব নিবন্ধ অনুসারে, প্রথম এক্স-রে'টি চীনের এক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৫৮ বছর বয়সি এক রোগীর। আর দ্বিতীয় এক্স-রে'টি নেদারল্যান্ডসের 'রাডবউড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার'-এ ভর্তি হওয়া এক ১২ বছর বয়সি কিশোরীর।