হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর খবর নাকচ করে দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার তিনি 'ফক্স নিউজ'কে বলেছেন, এসব প্রতিবেদনে 'মিথ্যা বিবরণ' দেওয়া হয়েছে। চুক্তিতে না পৌঁছানোর জন্য হামাসকে দায়ী করেছেন নেতানিয়াহু। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ইসরাইল বেশ কয়েকটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে, কিন্তু হামাস 'প্রত্যেকটিতে ধারাবাহিকভাবে না বলেছে।' তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি
নেতানিয়াহু বলেন, 'তারা কিছুতেই রাজি নন : ফিলাডেলফি করিডরে নয়, জেলে আটক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জিম্মি বিনিময় নয়, কিছুতেই নয়।' তার দাবি, হামাস ইসরাইলকে গাজা থেকে বের করে দিতে চায়, যাতে তারা ছিটমহল দখল করতে পারে।
অথচ মার্কিন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত বুধবার জানান, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের কবজায় থাকা জিম্মিদের মুক্তি ইসু্যতে নতুন যে চুক্তি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ আমেরিকা, মিসর ও কাতার- সেটির কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, 'গাজায় যুদ্ধবিরতি ইসু্যতে হামাস যে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, সেখান থেকে কিছু শর্ত নতুন চুক্তিতে যুক্ত করা হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী এবং চুক্তির অংশীদারদের (ইসরাইল-হামাস) মধ্যে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। চুক্তির ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি ১০ ভাগও শিগগিরই শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।' তিনি আরও জানান, প্রস্তাবিত এই নতুন চুক্তিতে মোট অনুচ্ছেদ থাকছে ১৮টি। হামাস, ইসরাইল এবং মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে ১৪টি অনুচ্ছেদ লিপিবদ্ধের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নেতানিয়াহুর মন্তব্য যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় ব্যাপক হামলা চালায় ইসরাইল। ইসরাইলি হামলায় ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় চেষ্টা চালানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি। হামাসের অভিযোগ, নেতানিয়াহুর কারণে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
গাজায় থামছেই না ইসরাইলি
বর্বরতা, নিহত আরও ১৭
আন্তর্জাতিক মহলের চাপ কিংবা দেশের নাগরিকদের বিক্ষোভ কোনো কিছুতেই থামছে না নেতানিয়াহু বাহিনীর বর্বরতা। গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে দখলদাররা। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বর্বর হামলায় আরও ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ৯০০ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৯৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।
অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লাগাতার এ হামলায় আরও অন্তত ৯৪ হাজার ৪৫৪ জন ব্যক্তিও আহত হয়েছেন।
পশ্চিম তীরের জেনিন থেকে সরে
গেছে ইসরাইলি বাহিনী
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে কয়েক মাসের অন্যতম বড় অভিযান চালানোর পর সেখানকার জেনিন শহর থেকে সরে গেছে ইসরাইলি সেনারা। ৯ দিনের অভিযানে ওই এলাকার হাজার হাজার অধিবাসী নিজেদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচু্যত হয়েছেন। এ অভিযানে সেনারা হামাস, ইসলামিক জিহাদ এবং ফাতাহর মতো ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
জেনিনের অধিবাসী সামহার আবু নাসা বলেন, তারা যখন শহরে ঢুকেছিল, তারা বুলডোজার ব্যবহার করেছে এবং সবকিছু ধ্বংস করতে শুরু করেছিল। কোনোকিছুই তারা বাদ রাখেনি। পানি ও বিদু্যৎসেবা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা।
তবে ইসরাইলের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, রাস্তার নিচে পাতা ৩০টি বিস্ফোরক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরাইলি সেনারা সরে যাওয়ার পর এখন রাস্তা পরিষ্কারের কাজ চলছে।
শত শত ইসরাইলি সেনা ও পুলিশ হেলিকপ্টার ও ড্রোনের সহায়তায় জেনিনের শরণার্থী শিবির ও আশপাশের গ্রামসহ সব জায়গায় অভিযান চালিয়ে পুরো এলাকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, শহরের অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতি করে গেছে ইসরাইলি বাহিনী। তাদের অভিযানে ২১ জন নিহত হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।