ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মুক্তি ইসু্যতে নতুন যে চুক্তি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিল মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ আমেরিকা, মিসর ও কাতার- সেটির কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের একজন জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বুধবার বলেন, 'গাজায় যুদ্ধবিরতি ইসু্যতে হামাস যে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, সেখান থেকে কিছু শর্ত নতুন চুক্তিতে যুক্ত করা হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী এবং চুক্তির অংশীদারদের (ইসরাইল-হামাস) মধ্যে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। চুক্তির ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি ১০ ভাগও শিগগিরই শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।' তিনি আরও জানান, প্রস্তাবিত এই নতুন চুক্তিতে মোট অনুচ্ছেদ থাকছে ১৮টি। হামাস, ইসরাইল এবং মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এরই মধ্যে ১৪টি অনুচ্ছেদ লিপিবদ্ধের কাজ শেষ হয়েছে। তথ্যসূত্র : আনাদলু, আল-জাজিরা, এএফপি
গত ২ জুন গাজায় যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত তিন স্তরের একটি চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই নতুন চুক্তিটি সম্পাদনার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। নতুন চুক্তিতে হামাসের বিভিন্ন শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা হলেও গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের যে শর্ত গোষ্ঠীটি দিয়েছিল, তা রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে বলা হয়েছে, শুধু গাজার জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে ইসরাইলি সেনাদের। অবশ্য, বাইডেন যে চুক্তিটি প্রস্তাব করেছিলেন, সেখানেও এ ব্যাপারটির উলেস্নখ ছিল। তবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজার কোন্ কোন্ এলাকায় ইসরাইলি সেনা থাকবে, তা চুক্তিতে নির্দিষ্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
গত ২ জুন ওয়াশিংটনে এক ভাষণে বাইডেন বলেছিলেন, প্রথম স্তরে গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হবে। এই পর্বে রাফাহসহ গাজার অন্য জনবহুল এলাকাগুলো থেকে সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পাশাপাশি ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি কয়েকশ' ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময় নিজেদের কব্জায় থাকা কয়েকজন বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস। এই দফায় যেসব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং নারীরা প্রাধান্য পাবেন। সেই সঙ্গে এই ছয় সপ্তাহের প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে অন্তত ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক। হামাস এবং ইসরাইলের মন্ত্রিসভা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী এই পর্যায়ে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে। যদি এই আলোচনা ছয় সপ্তাহ সময়সীমার মধ্যে শেষ না হয়, তাহলে পরিকল্পনার প্রথম পর্ব বা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়বে।
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস ও ইসরাইল- দুইপক্ষের ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে শেষ হবে গাজায় শান্তি পরিকল্পনার প্রথম স্তর বা পর্যায় এবং এরপর শুরু হবে পরিকল্পনা দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেবে হামাস এবং এর বিনিময় গাজার বাসিন্দারা পাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। পরিকল্পনার তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ভবন-রাস্তাঘাট-অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
তবে এই চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়ায় হামাসের অংশগ্রহণ নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন ওই মার্কিন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, 'আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। তবে এই চুক্তি সম্পাদনের কাজে ইসরাইল আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। সেই তুলনায় হামাসের অংশগ্রহণ কিছুটা হতাশাজনক ছিল।'
মোসাদ প্রধানের প্রস্তাব সরাসরি
নাকচ করল হামাস
এদিকে, অবরুদ্ধ গাজার ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নেয়ার মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বার্নেয়া মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনীকে 'চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে'। যা হামাসের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়।
হামাসের এই নেতা জানান, হামাস চায়, দখলদার বাহিনী প্রথম পর্যায়েই ফিলাডেলফি করিডোর থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করুক। কারণ, চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য গ্যারান্টি নেই।
সম্প্রতি মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নেয়া মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছেন, ইসরাইল দ্বিতীয় পর্যায়ে বন্দিবিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে ফিলাডেলফি করিডোর থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু করিডোরটির ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার বিষয়ে অবিচল।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় অবশ্য এ তথ্য অস্বীকার করেনি। তবে জানিয়েছে, ইসরাইলি মন্ত্রিপরিষদ এখনো চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য নয়। এ বিষয়ে ইসরাইলের 'মাকান' চ্যানেল ওয়েবসাইট জানিয়েছে, আমেরিকা, মিসর ও কাতার সম্প্রতি একটি যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় নিয়ে একটি কাঠামো তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু করেছে। ইসরাইলি ওয়েবসাইটটি জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা শুক্রবারের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মাধ্যমে মৌলিক বিষয়গুলো প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছে। এ কারণেই মূলত বার্নেয়া গত সোমবার দোহায় গিয়েছিলেন। যেখানে আগামী দিনগুলোতে আলোচনা চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে।