আদানিকে নিয়ে কেনিয়ায় বিক্ষোভ ভারতের বিরুদ্ধে জনরোষের শঙ্কা
প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
নতুন করে বিরোধিতার মুখে পড়েছে ভারতের আদানি গোষ্ঠী। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে এক বিমানবন্দর অধিগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। কিন্তু এর প্রতিবাদে কেনিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আন্দোলনে নেমেছে দেশটির বিমান উড্ডয়ন পরিচালনাকারী কর্মী সংগঠন কেনিয়া এভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। এতে ভারতের বিরুদ্ধে কেনিয়ায় জনরোষ তৈরি হতে পারে।
এই বিক্ষোভে নতুন বিপদের গন্ধ পাচ্ছে ভারতের বিরোধী দল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের আশঙ্কা, এ ঘটনা কেনিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ইন্ধন দিতে পারে। মঙ্গলবার তিনি নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, আদানিদের বিরুদ্ধে কেনিয়ার মানুষের এই আন্দোলন ভারত ও ভারতের সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষে পরিণত হতে পারে, এমন আশঙ্কা আছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, নাইরোবিতে জোমো কেনিয়াত্তা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অধিগ্রহণ করতে আদানি গোষ্ঠী সেখানে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলেছে। সে দেশের সংবাদমাধ্যমের খবর, এরপরই কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। আদানি গোষ্ঠীর হাতে এই বিমানবন্দর পরিচালনার ভার গেলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে, এ আশঙ্কায় গত সোমবার ধর্মঘট করে ইউনিয়ন। এমনিতেই তারা চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। তার ওপর এখন আদানি গোষ্ঠীর হাতে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণভার গেলে তা হবে 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'য়ের মতো।
জয়রাম রমেশের দাবি, এটা ভারতের জন্য চিন্তার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আদানির সখ্যের কথা সবাই জানেন। ফলে কেনিয়ার বিমানকর্মীদের এই আন্দোলন সহজেই ভারত ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষে পরিণত হতে পারে।
কেনিয়ার সরকার অবশ্য বিমানকর্মীদের আশ্বস্ত করেছে, বিমানবন্দর বিক্রি হচ্ছে না। এটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ; কার হাতে যাবে তা-ও চূড়ান্ত নয়।
কংগ্রেস নেতা বলেছেন, সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোয় আদানি গোষ্ঠীর প্রকল্প নিয়ে জন-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের কথা বলেছেন তিনি। বলেন, বাংলাদেশে বিদু্যৎ রপ্তানি করতে আদানি গোষ্ঠী দেশটির সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল, সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে তার প্রভাব ছিল, যার পরিণতিতে শেষমেশ শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়।
এদিকে, কেনিয়ার এই বিমানবন্দর পরিচালনাসহ বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে ভারতের আদানি গোষ্ঠী। ৩০ বছরের মেয়াদে বিমানবন্দর পরিচালনা করতে চেয়েছে তারা। চলতি বছরের শুরুতে তারা মোট ৭৫ কোটি ডলারের প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে আছে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, ট্যাক্সিওয়ে সংস্কার ও দুটি নতুন দ্রম্নতগতির ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ। এসব প্রকল্প ২০২৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রস্তাব রয়েছে। সেই সঙ্গে আরও কিছু কাজের জন্য আদানি আরও ৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্রকল্প প্রস্তাব দেয়।
দ্য ইস্ট এশিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠী একই সঙ্গে নাইরোবি শহরে ব্যবসাকেন্দ্র ও হোটেল-মোটেল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। ৩০ বছর এই বিমানবন্দর পরিচালনার পর আদানি গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষের কাছে এটি বুঝিয়ে দেবে। উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে যে মূল্য নির্ধারিত হবে, তার বিনিময়ে এই বিমানবন্দর বুঝিয়ে দেবে আদানি গোষ্ঠী।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ট সেলার হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। এরপর আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে ধস নামে। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় আদানির অবস্থান ছিল পাঁচের মধ্যে। এক পর্যায়ে তার অবস্থান ২০-এর ঘরে নেমে যায়।
এরপর আদানি অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও বিতর্ক তার পিছু ছাড়ছে না। ভারতের বিরোধী দলগুলো বরাবরই নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সখ্যের সমালোচনা করেন। এবার তারা আদানি গোষ্ঠীর কারণে ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার অভিযোগ তুলল।