বন্দি নিহত হওয়ার জের
যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবিতে ইসরাইলে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ
ধর্মঘটে অংশ নিলে বেতন বন্ধ ইসরাইলি মন্ত্রীর হুমকি ইসরাইলি বিমান হামলাতেই ছয় বন্দির মৃতু্য হয়েছে : হামাস
প্রকাশ | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবিতে রোববার বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ইসরাইলি। গাজায় আরও ছয় বন্দির নিহত হওয়ার ঘটনায় এদিন তারা রাস্তায় নেমে আসেন এবং বিক্ষোভে অংশ নেন। এছাড়া ইসরাইলের প্রধান শ্রমিক ইউনিয়নও গাজায় বন্দি মৃতু্যর ঘটনায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তথ্যসূত্র : আল জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি
প্রায় ১১ মাস আগে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলের শুরু হওয়া সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে রোববার রাতে বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে। বিক্ষোভকারীরা 'এখন! এখন!' স্স্নোগান দেন এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি করে বাকি বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। অনেক ইসরাইলি তেল আবিবে রাস্তা অবরোধ করেন এবং পশ্চিম জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বাইরেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
গাজায় বন্দিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে 'জিম্মি ও নিখোঁজ পরিবার ফোরাম'। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, গাজায় আরও ছয় বন্দির এই মৃতু্য নেতানিয়াহুর লড়াই থামাতে এবং তাদের প্রিয়জনকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার চুক্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার সরাসরি ফল হিসেবেই সামনে এসেছে। ফোরামটি বলেছে, 'হামাসের বন্দিদশায় প্রায় ১১ মাস অত্যাচার, নির্যাতন এবং অনাহারে বেঁচে থাকার পরও গত কয়েক দিনে তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।'
এদিকে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য সরকারকে চাপ দিতে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ইসরাইলের বৃহত্তম ট্রেডস ইউনিয়ন ফেডারেশন 'হিস্তাদ্রম্নত'। গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর প্রথমবারের মতো এই পদক্ষেপ নিল তারা। ইসরাইলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র তেল আবিবের পৌর পরিষেবাগুলোও সোমবারের এই ধর্মঘটে বন্ধ থাকবে। ইসরাইলের 'ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন' বলেছে, তারা এই ধর্মঘটকে সমর্থন করেছে এবং বন্দিদের জীবিত ফিরিয়ে আনতে সরকার তার 'নৈতিক দায়িত্ব' পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে।
ধর্মঘটে অংশ নিলে বেতন বন্ধ ইসরাইলি মন্ত্রীর হুমকি
এদিকে, ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যারা শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নেবেন, তাদের বেতন দেওয়া হবে না। চরম ডানপন্থি এই মন্ত্রী আদালতকে ধর্মঘট বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি তিনি হিস্তাদ্রম্নতের চেয়ারম্যান আর্নন বার-ডেভিডকে হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের স্বার্থে কাজ করার জন্যও অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, 'এটা ভেবে আমার খুব খারাপ লাগছে যে, এই কঠিন সময়ে ইসরাইলের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে সহযোগিতা করতে এবং সেনাবাহিনীকে সমর্থন করার বদলে আর্নন বার-ডেভিড কার্যকরভাবেই সিনওয়ারের স্বপ্ন পূরণে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ইসরাইলি কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করার পরিবর্তে হামাসের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করাকে বেছে নিয়েছেন এই শ্রমিক নেতা।
ইসরাইলি বিমান হামলাতেই ছয় বন্দির মৃতু্য হয়েছে :হামাস
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে নতুন করে মারা যাওয়া ছয় বন্দি ইসরাইলের বিমান হামলাতেই নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ইসরাইল গাজা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে দাবি করছে যে, হামাস তাদের হত্যা করেছে।
হামাস নেতা ইজ্জাত আল-রিশক রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, 'গাজায় পাওয়া পণবন্দিদের আমরা হত্যা করিনি। তারা নিহত হয়েছেন জায়নবাদীদের বিরামহীন বোমা হামলায়।'
আমেরিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি ইসরাইলি পণবন্দিদের জীবন নিয়ে সত্যিই যত্নবান হন, তবে তার উচিত এই শত্রম্নদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করা এবং অবিলম্বে আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগ করা।'
জোর দিয়ে হামাসের এই নেতা বলেন, খোদ বাইডেনের চেয়ে হামাস এসব পণবন্দির জীবন নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তিনি যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাস ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উভয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।