এই মুহূর্তে সংঘাতের একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন। জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এক বছর ধরে রাজ্যের অন্তত ১০টি শহরের নিয়ন্ত্রণ করছে। এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিদ্রোহীদের দমনে মিয়ানমারের সেনারা এখন খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তথ্যসূত্র : সিএনএন
ত্রাণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির অধিকৃত অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখার চেষ্টা করছে জান্তা। তারা এমন কৌশল ব্যবহার করে যা বারবার জাতিসংঘের কর্মকর্তা এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলো যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
একজন সিনিয়র ত্রাণ কর্মকর্তা বলেন, 'তারা (জান্তা) খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা অনেকটাই পরিষ্কার।'
একাধিক ত্রাণকর্মীর বিবরণ থেকে জানা যায়, রাখাইন রাজ্যে ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জাতিসংঘের একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা এবং রাখাইনে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য কর্মীরা জানিয়েছেন, সামরিক জান্তা রাখাইনের রাস্তা ও নৌপথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মানবিক গোষ্ঠীকে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে।
রাখাইন অঞ্চলের বাসিন্দা খিন মার চো তার চার বছর বয়সি ছেলের জন্য উদ্বিগ্ন। কারণ তিনি পশ্চিম মিয়ানমারের একটি জনাকীর্ণ মঠে অস্থায়ী বাস্তুচু্যতি শিবিরে খাবার সংগ্রহের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। সেনারা রাখাইন রাজ্যের বাইইন ফিউ গ্রামে আক্রমণ করেছিল। সেনারা খিন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। তারা সব পুরুষকে আটক করে এবং খিনের ভাই ও অন্য প্রতিবেশীদের গুলি করে।
খিন মার চো-এর মতো বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা সেনাদের হামলার পর আঞ্চলিক রাজধানী সিতওয়ের ঠিক বাইরে মঠে পালিয়ে যান। সেখানে একজন সন্ন্যাসী প্রায় ৩০০ মানুষকে খাদ্য সরবরাহের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এই মানুষগুলো শিবিরের ভেতরে আশ্রয় চেয়েছেন, কারণ তাদের চারপাশে তিন বছরের গৃহযুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে।
'এমনও দিন আছে, যেদিন আমরা ক্ষুধার্ত থাকি, আমাদের কোনো খাবার থাকে না। আমি আমার বাচ্চাকে মানুষের দান করা খাবারের চেয়ে বেশি কিছু খাওয়াতে পারি না। কারণ আমার চাকরি বা আয় নেই এবং পরিবারের সব পুরুষ সদস্যকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।' পরিস্থিতির বর্ণনা করে খিন মার চো এমন কথাই বলেন।