ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসন

পশ্চিম তীরে অভিযান বন্ধ করুন :গুতেরেস

পশ্চিম তীরে মসজিদের ভেতর পাঁচ ফিলিস্তিনিকে হত্যা গাজায় আরও ৬৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল

প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এই অভিযান এরই মধ্যেই 'বিস্ফোরণে উন্মুখ পরিস্থিতিকে' আরও উসকে দিচ্ছে বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন তিনি। অন্যদিকে, পশ্চিম তীরে অভিযানের মধ্য দিয়ে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কমিশনার জনেজ লেনারসিক। দখলকৃত পশ্চিম তীরের পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে বলে এক 'এক্স' পোস্টে মন্তব্য করেছেন লেনারসিক। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, গার্ডিয়ান পশ্চিম তীরে বুধবার রাত থেকে কথিত 'সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান' শুরু করে ইসরাইল। ২০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে পশ্চিম তীরে এদিন সবচেয়ে বড় আগ্রাসন চালায় ইসরাইলের বর্বর বাহিনী। এজন্য জেনিন, তুলকারেম এবং তুবাসে শত শত সেনা মোতায়েন করা হয়। ইসরাইলি এ আগ্রাসনে শিশুসহ অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হন। গুতেরেস এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তেল আবিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, জেনিনসহ কয়েকটি শহরে এখনো অভিযান চলছে। জেনিনের টেলিযোগাযোগ এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি টেলিযোগাযোগ সংস্থা 'জাওয়াল'। পশ্চিম তীরে মসজিদের ভেতর পাঁচ ফিলিস্তিনিকে হত্যা পশ্চিম তীরের তুলকেরামের একটি মসজিদের ভেতর পাঁচ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইলের সেনারা। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, নিহত সবাই সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। মসজিদের ভেতর থাকা ওই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের গোলাগুলি হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। ইসরাইল দাবি করেছে, ইরানের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে যেন ফিলিস্তিনিরা হামলা না চালাতে পারে, সেজন্য পশ্চিম তীরে তারা কথিত অভিযান চালাচ্ছে। আইডিএফ জানিয়েছে, মসজিদের ভেতর যে পাঁচজন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন গত জুনে এক বেসামরিক ইসরাইলির ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া আরও যে চারজন নিহত হয়েছেন তারা সশস্ত্র যোদ্ধা ছিলেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনাহ বুধবার বলেন, পশ্চিম তীরে ইসরাইলি হামলা, একই সঙ্গে গাজার যুদ্ধ 'ভয়ংকর ও ঝুঁকিপূর্ণ ফল' বয়ে আনবে। গাজায় আরও ৬৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল এদিকে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একদিনে আরও ৬৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি তান্ডবে আরও ৭৭ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় প্রতিদিন অন্তত ৫৩ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এ সময় দৈনিক গড়ে ৭২ ফিলিস্তিনি নারী-পুরুষ প্রাণ হারিয়েছেন দখলদারদের হামলায়। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ১০ হাজার গাজাবাসী। ধারণা করা যায়, তাদের কেউই আর বেঁচে নেই। 'ওয়াফা নিউজ এজেন্সি' জানিয়েছে, নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং দেইর আল-বালাহতে বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে দুই শিশু এবং এক নারী নিহত হয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে হামলার পর দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং দেইর আল-বালাহ থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারের বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত জাতিসংঘের মিশন সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে, জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় সহায়তা কার্যক্রম এবং কর্মীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। একই সঙ্গে সেখানে পোলিওর প্রাদুর্ভাব বন্ধ করার জন্য ভ্যাকসিন কার্যক্রম জরুরিভাবে প্রয়োজন বলেও জানানো হয়। সম্প্রতি বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির (ডাবিস্নউএফপি) একটি গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ???'জাতিসংঘের মানবিক কনভয়' স্পষ্টভাবে লেখা থাকার পরও ইসরাইলি বাহিনী কমপক্ষে ১০ বার ওই গাড়িতে গুলি চালিয়েছে। ফলে গাজায় নিজেদের স্টাফদের চলাচল স্থগিত করেছে ডাবিস্নউএফপি। উলেস্নখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ৪০ হাজার ৬০২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৯৩ হাজার ৮৫৫ ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।