ইউক্রেনে সোমবার ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর মঙ্গলবারও বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার ইউক্রেন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ক্রিভি রিহ শহরের একটি হোটেল ও দক্ষিণ-পূর্বে জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে ড্রোন হামলায় মোট চারজন নিহত হয়েছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা চালানো হয় সোমবার। এর পরদিনই একই রকম হামলা চালাল মস্কো। এর আগে, রাশিয়ার বোমারু বিমান উড্ডয়ন নিশ্চিত হওয়ায় ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সারাদেশে নতুন করে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করে। ইউক্রেনের পাওয়ার গ্রিডে মস্কোর 'ব্যাপক' হামলা চালানোর এক দিন পর এই সতর্কতা জারি করা হয়। তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স
ক্রিভি রিহ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নিজের শহর। সেখানকার যে ভবনে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে, সেখানেই জেলেনস্কি কমেডি শো করতেন বলে জানিয়েছেন শহরের মেয়র।
ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, পুরো দেশই রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকির মুখে রয়েছে। বেসামরিক ও অন্যান্য অবকাঠামোয় অন্তত ৯০টির বেশি হামলা চালিয়েছে মস্কো। এর মধ্যে ৮১টি ড্রোন, ক্রুজ, ব্যালেস্টিক ও বায়ুচালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তবে রাশিয়ার পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৬০টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিতের দাবি করেছে বিমান বাহিনী।
এর আগে ইউক্রেনীয় পর্যবেক্ষকরা হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকারী রাশিয়ান বিমান শনাক্ত করে। সোমবার ইউক্রেনের অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চলে রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সাতজন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হন। রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের অনুপ্রবেশ শুরু হওয়ার তিন সপ্তাহ পর এই হামলা চালাল মস্কো। কুরস্কে হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন, নিজেদের মাটিতে এই হামলা ও রাশিয়ার অন্যান্য হামলার জবাব দেবে কিয়েভ।
কুরস্কে অগ্রগতি, পূর্বাঞ্চলে পরিস্থিতি
কঠিন : ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
এদিকে, ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কি জানিয়েছেন, কিয়েভের বাহিনী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অগ্রসর হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার তিনি সতর্ক করে বলেছেন, মস্কো পূর্ব পোকরভস্ক ফ্রন্টে তাদের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করছে। সেখানে রুশবাহিনী অগ্রসর হচ্ছে।
এক ভিডিও বার্তায় সিরস্কি বলেন, রাশিয়া পোকরভস্ক ফ্রন্টের কাছে ইউক্রেনের সরবরাহ লাইনগুলোকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। পোকরভস্ক একটি কয়লাখনির শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পরিবহণ কেন্দ্র। শহরটির কৌশলগত মূল্য রয়েছে। তিনি জানান, পোকরভস্ক ফ্রন্টের পরিস্থিতি বেশ কঠিন। শত্রম্ন তাদের জনবল, অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামের সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে, তারা সক্রিয়ভাবে কামান ও বিমান বাহিনী ব্যবহার করছে। সিরস্কি আরও বলেন, ইউক্রেনের তিন সপ্তাহের পুরনো কুরস্ক অভিযানে ১০০টি বসতি দখল করা হয়েছে। মস্কোর সেনারা এই এলাকায় পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করছে এবং কিয়েভের বাহিনীকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে। তবে সেগুলো প্রতিহত করা হচ্ছে। তার ভাষায়, কুরস্ক অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার বাহিনীকে অন্যান্য এলাকা, বিশেষ করে পোকরভস্ক ও কুরাখোভ সেক্টর থেকে সরানো।
সিরস্কি জানান, কুরস্ক অভিযান তাদের একটি উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক বাহিনীকে সরিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার সেনাদের ইউক্রেনের দক্ষিণ থেকে কুরস্ক ফ্রন্টে আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমরা বলতে পারি যে, প্রায় ৩০ হাজার সেনা কুরস্ক ফ্রন্টে পাঠানো হয়েছে এবং এই সংখ্যা বাড়ছে।' তবে তিনি স্বীকার করেন, রাশিয়া পোকরভস্ক ফ্রন্টে তাদের বাহিনীকে শক্তিশালী করছে। সিরস্কি প্রথমবারের স্বীকার করেছেন, কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের অভিযানের সময় ৫৯৪ জন রুশ সেনাকে বন্দি করা হয়েছে।