ভয়ংকর হচ্ছে যুদ্ধ
রাশিয়ায় নাইন-ইলেভেন স্টাইলে ড্রোন হামলা ইউক্রেনের
পাল্টা হিসেবে কিয়েভে এক ঝাঁক রুশ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
যতদিন যাচ্ছে আরও ভয়ংকর হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। চলছে হামলা-পাল্টা হামলা। এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সারাতভের প্রধান শহর সারাতভের একটি বহুতল আবাসিক ভবনে নাইন-ইলেভেন স্টাইলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। রোববার এই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুৎনিক। সারাতভ প্রাদেশি প্রদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামলায় এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছেন। আহত নারীর অবস্থা গুরুতর। তথ্যসূত্র : এএফফি, রয়টার্স, বিবিসি
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সারাতভের এক বহুতলে ধাক্কা মারল ড্রোন। আর তাতেই মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল বহুতলের একাংশ। একই সময় খানিক দূরে আকাশে উড়ছে আরও একাধিক ড্রোন। কয়েক সেকেন্ডের ওই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরেই চমকে উঠেছে গোটা বিশ্ব। সোমবার সকালে রাশিয়ার সারাতভের ৩৮ তলার এক ভবনে আঘাত হানে ইউক্রেনের ওই ড্রোন। বহুতলটির নাম 'ভোল্?গা স্কাই'। শহরের সবচেয়ে উঁচু বহুতল সেটি। ড্রোন হামলায় এখনো নিশ্চিতভাবে কোনো হতাহতের খবর জানা যায়নি। তবে কোনো কোনো সূত্র বলছেন, ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন দুইজন।
এদিকে, ইউক্রেনের আক্রমণের বদলা নিতে আবারও কিয়েভে ভয়ংকর হামলা চালিয়েছে এক ঝাঁক রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র। কিয়েভের নানা প্রান্তে আছড়ে পড়েছে বোমাও। এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু বাড়ি ও ভবন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন ও তার আশপাশের এলাকার ভিডিও শেয়ার করেছেন অনেকেই।
সোমবারও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে এদিন সকালে ব্যস্ত সময়ে চালানো এই হামলায় মধ্য কিয়েভে বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। অবশ্য ভোরে দুই দফা ড্রোন হামলার পর রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী।
এদিকে, কিয়েভের বিমান বাহিনী ইউক্রেনীয়দের জানিয়েছে, রাশিয়ার টিইউ-৯৫ কৌশলগত বোমারু বিমান আকাশে রয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়টিও তারা নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের রাজধানীর বাইরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে সক্রিয় করা আকাশ প্রতিরক্ষার শব্দও শোনা গেছে।
পোলিশ সশস্ত্র বাহিনীর 'অপারেশনাল কমান্ড' সোশ্যাল 'এক্সে' বলেছে, রাশিয়া আক্রমণ শুরু করার পর পোলিশ এবং সহযোগী বিমানগুলো সক্রিয় করা হয়েছিল। মূলত ইউক্রেনের পশ্চিমে এবং পোলিশ সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোকে লক্ষ্য করেও এদিন হামলা চালায় রাশিয়া। গত কয়েক মাসে ইউক্রেনে আক্রমণে ধার বাড়িয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনীয়রা বেশ কিছুদিন ধরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কা করছিল। ইউক্রেনীয় দূতাবাস গত সপ্তাহে ইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবসের আগে-পরে হামলার উচ্চ ঝুঁকির বিষয়ে একটি সতর্কতাও জারি করেছিল। মূলত গত শনিবারই ইউক্রেন এই দিবসটি পালন করেছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনও রাশিয়ায় আঘাত হানার জন্য দূরপালস্নার ড্রোন হামলা বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ইউক্রেন মূলত মস্কোতে পাল্টা আঘাত করার চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক দৃশ্যত প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে টেলিগ্রামে বলেছেন, 'আমাদের শক্তি ধ্বংস করার আকাঙ্ক্ষার জন্য রাশিয়ানদের চড়া মূল্য দিতে হবে, তাদের অবকাঠামোকেও।'
উলেস্নখ্য, ২০২২ সালে ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বিশেষ সামরিক অভিযান ঘোষণা করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। বাঁধভাঙা পানির মতো ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রুশ বাহিনী। তারপর থেকে চলছে লড়াই। দীর্ঘসময় ধরে যুদ্ধ করার ফলে গত কয়েক মাস ধরে রণক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল কিয়েভকে। কিন্তু এখন তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যেভাবে পুতিন বাহিনী ইউক্রেনে ঢুকে অভিযান শুরু করেছিল, এবার সেভাবেই কুরস্কে ঢুকে আক্রমণ শানাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। কুরস্কে দুই বাহিনীর লড়াই তুমুল চলছে।