আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট পদপ্রার্থী হিসেবে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল নাম। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম ঘোষণা করা হলো। তিনি কমলা হ্যারিস। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীপদ গ্রহণ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। আর প্রার্থিতা ঘোষণার পর প্রথম ভাষণেই নিজের নীতি স্পষ্ট করেছেন তিনি। গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানও জানিয়েছেন। সব আমেরিকানের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে কমলা হ্যারিস বলেছেন, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে রাখার মতো একজন প্রেসিডেন্ট হতে চান তিনি। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
শিকাগোয় ডেমোক্রেটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার রাতে হ্যারিস দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করেন। এরপর সম্মেলনের মঞ্চে দেওয়া ভাষণে হ্যারিস বলেন, 'জনগণের পক্ষ থেকে, সব আমেরিকানের পক্ষ থেকে; দল, জাতি, লিঙ্গ, ভাষা নির্বিশেষে আমি আপনাদের মনোনয়ন গ্রহণ করছি। আমি জানি বহু রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ এখানে আছে। তারা এই সম্মেলনে চোখ রেখেছেন। আমি আপনাদের বলতে চাই, আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছি। আমি সেই প্রেসিডেন্ট হতে চাই- যিনি সবাইকে একতাবদ্ধ করবেন, তাদের উচ্চাশা পূরণ করবেন, যিনি নেতৃত্ব দেবেন, সবার কথা শুনবেন, বাস্তববাদী হবেন, কার্যকরী হবেন।'
ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'নতুন পথে হাঁটার সুযোগ এসেছে। অতীতের তিক্ততা ভুলে, হতাশা মুছে এগোনোর সুযোগ এসেছে। কোনো দল বা একক গোষ্ঠী হিসেবে নয়, আমেরিকার মানুষ হিসেবে এগোনোর সুযোগ এসেছে। আমাদের এখন আর পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।'
গাজায় যুদ্ধের প্রসঙ্গে কমলা হ্যারিস বলেন, সেখানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার সময় এসেছে। বন্দি মুক্তি দেওয়াটাও জরুরি। তিনি বলেন, 'আমি সবসময়ই ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে। কিন্তু গাজায় গত ১০ মাস ধরে যা হয়েছে, তা বিপর্যয়কর। বহু নিরীহ মানুষ মরেছে। ক্ষুধার্ত, সাহায্যের জন্য মরিয়া মানুষকে বারবার এখান থেকে ওখানে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। গাজার মানুষদের এই দুর্ভোগ হৃদয়বিদারক। প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং আমি এই যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করছি, যাতে ইসরাইল সুরক্ষিত থাকে এবং বন্দিরা মুক্তি পায়, গাজায় মানুষের দুর্ভোগ শেষ হয় এবং ফিলিস্তিনিরা যাতে মর্যাদা, সুরক্ষা, স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে।'
ভাষণে হ্যারিস নভেম্বরের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, আইন ভঙ্গ করার ট্রাম্পের প্রবণতা এই ইঙ্গিতই দেয় যে, আবার নির্বাচিত হলে দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি বেপরোয়া হতে পারেন। স্বৈরশাসকদের কাছে ট্রাম্পের মাথা নত করারও অভিযোগ করেছেন কমলা হ্যারিস। বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মধ্যে চলে আসা সংগ্রামে তার অবস্থান কোথায়, তা যেমন তিনি জানেন, তেমনি আমেরিকার অবস্থান কোথায়, তাও তিনি জানেন।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন গ্রহণের পর জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও হ্যারিস তার ভাষণে তুলে ধরেছেন। প্রেসিডেন্ট হলে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক জোরদার করবেন বলে প্রতিশ্রম্নতি দেন তিনি। ইউক্রেনকেও সমর্থন দিয়েছেন কমলা। বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনকে সমর্থন করে যেতে হবে। তিনি বলেন, 'আমেরিকার নিরাপত্তা এবং মূল্যবোধ রক্ষা করতে আমি কখনো পিছপা হবো না। ইরান এবং অন্যান্য প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা করতেও দ্বিধা করব না।'