ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন কবে থামবে, তার উত্তর এখনো অধরা। এর মাঝে 'আগুনে ঘি' ঢেলেছে ইরানের বুকে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার মৃতু্য। যা নিয়ে বদলার আগুনে ফুঁসছে ইরান। তেহরানের মদদে ইহুদি ভূখন্ডটিতে হামলা তীব্র করেছে হুতিরা। প্রবল আক্রমণ করছে লেবাননের হিজবুলস্নাহও। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিমান বহনকারী রণতরী পাঠিয়েছে আমেরিকা। ইরানকে চাপে ফেলে গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে ওয়াশিংটন। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি
গত জুলাই মাসে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে গিয়ে নিহত হন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এই হত্যার বদলা নিতে ইসরাইলের ওপর আক্রমণের নির্দেশ দেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি। ফলে যে কোনো সময় ইসরাইলের ওপর ভয়ংকর হামলা চালাতে পারে তেহরান। এর জেরে আগস্ট মাসের গোড়াতেই তড়িঘড়ি 'ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট' নামে একটি যুদ্ধবিমান বহনকারী রণতরী পাঠিয়েছিল মার্কিন সেনা। এবার মধ্যপ্রাচ্যে গেছে 'ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন'। ফলে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন রণতরীর সংখ্যা দুটিতে পৌঁছাল।
ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন রণতরীতে রয়েছে এফ-৩৫ এবং এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমান। এছাড়া, এই স্ট্রাইক গ্রম্নপে রয়েছে ডেস্ট্রয়ার ও ফ্রিগেটের বড় বহর। এই নৌবহরটি পরিচালনার দায়িত্ব মার্কিন সেনার সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) কাঁধে। লোহিত সাগর থেকে শুরু করে এডেন উপসাগর, দক্ষিণ চীন সাগরেও মোতায়েন রয়েছে সেন্টকম। বুধবার এনিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়- পেন্টাগন। আগস্ট মাসের শুরুতেই জানা গিয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন কর্মকর্তা ও ইসরাইলকে সহায়তা করতে যুদ্ধজাহাজ ও ফাইটার জেট পাঠাচ্ছে আমেরিকা।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে আমেরিকা 'জোরালো' প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার অংশ হিসেবেই গত রোববার ইসরাইল সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন। এরপর মিসর ও কাতারে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় হামাস প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেনি। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দোহা থেকে ওয়াশিংটন ফিরে আসার মাধ্যমে তার এবারের সফর শেষ হয়। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে দুই পক্ষকে রাজি করাতে এটি ছিল মধ্যপ্রাচ্যে তার নবম সফর। এবারও চুক্তি অনিশ্চিত রেখেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন মধ্যপ্রাচ্য ছেড়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস। তারপর থেকেই গাজায় রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে হামাসের সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনীর। কিন্তু এই যুদ্ধ এবার মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে বড় আকার নিচ্ছে। হামাসকে সমর্থন করে ইসরাইলের বুকে হামলা চালাচ্ছে লেবাননের হিজবুলস্নাহ। ইয়েমেনের হুতিরাও। এবার ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চলেছে ইরান। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরেক ভয়ংকর যুদ্ধের মেঘ ঘনাচ্ছে। এবারও তেল আবিবের পাশে দাঁড়াতে পারে আমেরিকা। ফলে গাজা যুদ্ধ ঘিরে ওই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইসরাইলে কখন হামলা চালানো
হবে, জানাবে না ইরান
তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে এবার ইরান ইসরাইলে যে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার দিনক্ষণ সম্পর্কে তেল আবিবকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হবে। ইরানের ইসলামি বিপস্নবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি মোহাম্মাদ নায়িনি এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইরানের এবারের প্রতিক্রিয়া ইসরাইলের বিরুদ্ধে এর আগে চালানো অভিযানগুলোর মতো হবে না।
জেনারেল নায়িনি বলেন, ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করতে গিয়ে ইসরাইল কয়েকটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যার একটিও অর্জিত হয়নি। ইসরাইল মনে করেছিল, তারা গাজা উপত্যকার যুদ্ধে যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, হানিয়াকে হত্যা করে তা পুষিয়ে নেবে। কিন্তু তাদের সে ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে গাজায় হামাসের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে গত ৩১ জুলাই তেহরানে ইসরাইলের গুপ্তহত্যার শিকার হন হামাসের পলিটবু্যরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া। ইরানের সর্বোচ্চ নেতাসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় সেনা কমান্ডাররা তাদের অতিথি ইসমাইল হানিয়াকে গুপ্তহত্যায় ইসরাইলি পদক্ষেপের প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেন।
আইআরজিসির মুখপাত্র বলেন, ইরানের সেনা কর্মকর্তারা 'অ্যাকশনে' যাওয়ার আগে সতর্কতার সঙ্গে এর সবগুলো দিক পর্যালোচনা করে দেখছেন। তারা ইসরাইলের সব হিসাব-নিকাশ ব্যর্থ করে দিতে সুনির্দিষ্ট ও সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।