ডেমোক্রেটদের সম্মেলন
নিজেকে কী মনে করেন, ট্রাম্পকে তীব্র ভর্ৎসনা বাইডেনের
আবেগে কেঁদে ফেলা বাইডেন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'কঠিন সময় শেষ হয়েছে, এখন ভালো সময়' মঞ্চে হঠাৎ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস
প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে আমেরিকার শিকাগোয় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন। সোমবার রাতে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বেশ কয়েক হাজার আমন্ত্রিত অতিথিও অংশ নিয়েছেন। চারদিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম দিন শীর্ষ ডেমোক্রেট নেতাদের সঙ্গে সপরিবারে যোগ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় দলের জাতীয় এই সম্মেলনে শেষবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন তিনি। তথ্যসূত্র : বিবিসি
বাইডেন যখন মঞ্চে উঠছিলেন, তখন দর্শক সারির সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান দেখান। একইসঙ্গে, উপস্থিত নেতাকর্মীরা সমস্বরে বলে ওঠেন 'ধন্যবাদ জো'। এ ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বেশ আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে আবেগে কেঁদেও ফেলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'কঠিন সময় শেষ হয়েছে, এখন ভালো সময়।'
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করেছেন বলেও জানান তিনি। বাইডেন বলেন, 'আমেরিকা, আমি আমার সর্বোচ্চটা তোমাকে দিয়েছি।' একইসঙ্গে, গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমালা হ্যারিসকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'গণতন্ত্রকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আমরা আমেরিকার আত্মাকে রক্ষা করার জন্য লড়ছি।'
সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে বাইডেন বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে বেড়াচ্ছেন যে, আমরা না-কি হারতে চলেছি। কিন্তু বাস্তব সত্যি হলো- আমরা নই, হারতে যাচ্ছেন তিনি। ট্রাম্প প্রায়ই বলে বেড়ান, ডেমোক্রেটিক পার্টির অধীনের গত চার বছর ছিল আমেরিকার পরাজয়ের বছর। কিসের ভিত্তিতে তিনি এসব কথা বলেন? আমাকে এমন একটি রাষ্ট্রের নাম বলুন তো, যেটি মনে করে যে, আমরা আর বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সক্ষম নই? যদি আমরা সক্ষম না হই, তাহলে কে সক্ষম? আমাদের সেনাদের, যারা এই দেশের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে যাচ্ছেন, তাদের তিনি একাধিকবার ভীতু এবং পরাজিত বলেছেন; কিন্তু তিনি নিজে কী? একবার তিনি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন?'
ট্রাম্পের 'আমেরিকা প্রথম' নীতিরও কঠোর সমালোচনা করেন জো বাইডেন। বলেন, 'তার এই নীতি বৈশ্বিকভাবে আমেরিকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে, ইউরোপের সঙ্গে আমেরিকার দূরত্ব বাড়িয়েছে এবং রাশিয়াকে আরও আগ্রাসী করে তুলেছে। আর মুখে আমেরিকা প্রথম বললেও তিনি ভস্নাদিমির পুতিনের সামনে মাথা নত করেছেন। আমি কখনো এমনটা করিনি এবং কমলা হ্যারিসও করবেন না।'
প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে দলের জাতীয় সম্মেলনে এটাই তার শেষ ভাষণ। ফলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে হঠাৎ সরে যাওয়া বাইডেন ভাষণে কী বলেন, সেদিকেই নজর ছিল সবার।
বাইডেন মঞ্চে ওঠার আগে আকস্মিকভাবে সেখানে হাজির হয়ে নজর কাড়েন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ দিতেই হঠাৎ এই আগমন বলে জানান তিনি। কমলা বলেন, 'জো, আপনার ঐতিহাসিক নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ।'
বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিনে তিনি মঞ্চে উঠবেন বলে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু প্রথম দিনেই হুট করে হাজির হওয়ায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা বেশ অবাক হন। হাজার হাজার নেতাকর্মী উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে কমলা হ্যারিসকে সম্মেলনে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে স্স্নোগান চলতে থাকে- 'যখন আমরা লড়াই করি, আমরা জিতে যাই।' অল্প সময় মঞ্চে অবস্থানকালে কমলা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ধন্যবাদ দেওয়ার বাইরে তেমন কিছু বলেননি। রীতি অনুযায়ী, সম্মেলনের শেষ দিনে তিনি আবারও মঞ্চে উঠবেন বলে জানা যাচ্ছে। সেদিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষণ দেবেন তিনি।
আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল জো বাইডেনের। কিন্তু গত জুনের শেষের দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক টেলিভিশন বিতর্কে কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপর ভোটার জরিপে বাইডেনকে বেশ পিছিয়ে পড়তে দেখা যায়। ফলে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী না হওয়ার জন্য নিজ দলের ভেতরেই চাপে পড়েন তিনি এবং একপর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে আসেন। এমন পরিস্থিতিতে এক মাসের কম সময় আগে নির্বাচনী দৌড়ে যোগ দেন কমলা হ্যারিস।
হিলারি ক্লিনটন যা বললেন
কমলা হ্যারিস চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর মঞ্চে হাজির হন ডেমোক্রেটিক পার্টির আরেক প্রভাবশালী নেতা হিলারি ক্লিনটন। তিনি যখন মঞ্চে উঠছিলেন, তখন দর্শক সারি থেকে 'হিলারি, হিলারি' আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। কমলা হ্যারিসের মতো তিনিও ভাষণ শুরু করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বাইডেন হোয়াইট হাউসের মর্যাদা ফিরিয়ে এনেছেন বলেও মন্তব্য করেন হিলারি ক্লিনটন। সাবেক ফার্স্টলেডি বলেন, 'আজীবন আপনি যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, মানুষের পাশে থেকেছেন, সেটার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জো বাইডেন।' একইসঙ্গে, কমলা হ্যারিসকে বিজয়ী করার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি। হিলারি বলেন, 'তিনি (কমলা হ্যারিস) প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করছেন। তার দৃঢ় সংকল্প আমাকে এবং লাখ লাখ মানুষকে আরও বড় স্বপ্ন দেখার সাহস জোগায়।'
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু সেবার তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন। কাজেই এবারের নির্বাচনে জিতলে কমলা হ্যারিস প্রথম মার্কিন নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ড গড়বেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ
এদিকে, সোমবার সম্মেলন চলাকালে আশপাশের এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মানুষকে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। সম্মেলন শুরুর আগ থেকেই তারা বিভিন্ন স্থানে সমবেত হতে থাকেন। গাজাযুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ শেষে পদযাত্রাও করেন তারা। ইসরাইলকে সাহায্য করা বন্ধের পাশাপাশি গাজায় দ্রম্নত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। একইসঙ্গে, ডেমোক্রেটদের জাতীয় সম্মেলন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিনেও বড় বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
উলেস্নখ্য যে, গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে আমেরিকায় গত কয়েক মাস ধরেই বিক্ষোভ হতে দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া ওই বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে কিছু কিছু স্থানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। কয়েক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছে তাদের। এতে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষক-শিক্ষার্থী।