ইসরাইলি আগ্রাসন

গাজায় নিহত ১৬ হাজার ৪৮০ ফিলিস্তিনি শিশু

অসংখ্য শিশু তাদের হাত অথবা বাহু হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। টানা ১০ মাস ধরে ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি এই হামলায় নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ১৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি। এমন তথ্যই জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। তথ্যসূত্র : আনাদোলু, আল-জাজিরা গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ১৬ হাজার ৪৮০ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সোমবার জানিয়েছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল থাওয়াবতেহ বলেছেন, 'নিহতদের মধ্যে ১১৫টি বাচ্চাও রয়েছে।' তিনি বলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের কঠোর অবরোধের মধ্যে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় ৩৫ ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, 'গাজায় খাদ্য সরবরাহে ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কারণে খাদ্যের অভাব এবং অপুষ্টির মধ্যে গাজায় অন্তত তিন হাজার ৫০০ শিশু মৃতু্যর ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে।' থাওয়াবতেহ বলেন, 'গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ হাজারের বেশি শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে বা তাদের মধ্যে অন্তত একজনকে হারিয়েছে।' ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার অসংখ্য শিশু তাদের হাত অথবা বাহু হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। পঙ্গুত্ব বরণ করা এসব শিশুকে রোজই ভয়ানক সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দখলদার ইসরাইলের বর্বর হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দৈনিক ১০ জন শিশু তাদের একটি অথবা দুটি পা হারাচ্ছে বলে লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডাবিস্নউএ)। এছাড়াও অসংখ্য শিশু তাদের হাত অথবা বাহু হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরাইল এসবে কোনো তোয়াক্কা করছে না। এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলো গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসাত্মক আক্রমণের কারণে ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর নেতিবাচক মানসিক প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে চলেছে। গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দখলদার ইসরাইলের হামলায় আরও ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। নতুনদের নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ১৩৯ জনে। এছাড়া ১০ মাস ধরে চলা হামলায় আহত হয়েছেন ৯২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকাজুড়ে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এসব হামলায় অন্তত ৩৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে। উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরাইলি হামলা গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। তেল আবিবে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার হামাস ও ইসলামিক জিহাদের এদিকে, ইসরাইলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিব শহরের একটি সিনাগগের কাছে বোমা বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডস ও তাদের মিত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ। রোববার রাতের এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে বর্ণনা করেছে ইসরাইলের পুলিশ ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ জানিয়েছিল, যে ব্যক্তি বোমাটি বহন করছিল, সে নিহত হয়েছে আর একজন পথচারী আহত হয়েছে। ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেছেন, ওই ব্যক্তি বিস্ফোরক ভরা একটি ব্যাকপ্যাক বহন করছিল আর 'আরও বেশি মানুষ আছে এমন এলাকায় পৌঁছতে সক্ষম হওয়ার আগেই' সেটির বিস্ফোরণ ঘটায়। সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন দুটি বলেছে, 'দখলদারদের গণহত্যা ও গুপ্তহত্যার নীতি যতদিন চলমান থাকবে, ততদিন ইসরাইলের ভেতরে এই রকম শহীদি অভিযান ফিরে ফিরে আসবে।' বিবৃতিতে গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলা ও ৩১ জুলাই তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার গুপ্তহত্যার দিকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য রাখা হয়েছে।