শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

পশ্চিমা অস্ত্রেই ধ্বংস রুশ সেতু :মস্কো

কুরস্ক হামলায় ইউক্রেনকে মদদ দিয়েছে পশ্চিমারা :রাশিয়া কুরস্কে হামলা চালানোর আগাম কোনো তথ্য ইউক্রেন দেয়নি :দাবি হোয়াইট হাউসের
যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের সেইম নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতু শুক্রবার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয় ইউক্রেন। এই হামলার জন্য রাশিয়া পশ্চিমাদের দায়ী করেছে -টেলিগ্রাম অনলাইন

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কুরস্ক অঞ্চলের সেইম নদীর ওপর সেতু ধ্বংস করতে ইউক্রেন পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র, সম্ভবত আমেরিকার তৈরি এইচআইএমএআরএস (হাইমারাস) ব্যবহার করেছে। শুক্রবারের হামলায় বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকা কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন বলে রাশিয়া জানিয়েছে। এ হামলা নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি

শুক্রবার রাতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা 'টেলিগ্রাম' অ্যাপে বলেন, 'প্রথমবারের মতো কুরস্ক অঞ্চলে পশ্চিমের তৈরি করা রকেট আঘাত হানল। সম্ভবত আমেরিকান এইচআইএমএআরএস। এ হামলার ফলে গস্নুশকোভো জেলায় সেইম নদীর ওপরের সেতুটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে আর বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজে সহায়তা করতে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা নিহত হয়েছেন।'

শুক্রবার ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রধান অলেকজান্দ্রার সুরস্কি বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ শুরু করার পর থেকে ১১ দিনের মাথায় কুরস্ক অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকায় এক থেকে তিন কিলোমিটারের মতো এগিয়ে গেছে। কিয়েভ দাবি করেছে, ৬ আগস্ট থেকে তাদের সেনারা কুরস্ক অঞ্চলের এক হাজার ১৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৮২টি বসতি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রের বিষয়ে কোনো পক্ষের দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।

রাশিয়ার ভূখন্ডে প্রথম স্থল অভিযান চালাতে ইউক্রেনকে উৎসাহিত করা এবং সমর্থন দেওয়ার জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করেছে রাশিয়া। কিয়েভের 'সন্ত্রাসী আক্রমণ' যুদ্ধের ধারাকে পরিবর্তিত করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছে মস্কো।

আমেরিকা বলেছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনের যুদ্ধে জয়ী হতে দেবে না তারা। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, তারা এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় ইউক্রেনের বাহিনীর অনুপ্রবেশকে একটি সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ বলে মনে করে, আর এটিই সেখানে আমেরিকার তৈরি অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের ন্যায্যতা দেয়।

গত ৬ আগস্ট রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে হঠাৎই অভিযান শুরু করে ইউক্রেনীয় বাহিনী।

কুরস্ক হামলায় ইউক্রেনকে মদদ

দিয়েছে পশ্চিমারা :রাশিয়া

রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে হামলা করতে ইউক্রেনকে মদদ দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। ন্যাটো ও আমেরিকাসহ কিয়েভের মিত্রদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই হামলা শুরু হয়। শুক্রবার এই অভিযোগ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের একজন প্রভাবশালী মিত্র। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।

রুশ সংবাদমাধ্যম 'ইজভেস্তিয়া'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের প্রভাবশালী কর্মকর্তা নিকোলাই পাত্রম্নশেভ বলেছেন, কুরস্ক অভিযান পরিকল্পনায় ন্যাটো ও পশ্চিমাদের বিশেষ বাহিনীর অংশগ্রহণ ছিল। তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও অংশগ্রহণ ছাড়া কিয়েভ কখনোই রুশ ভূখন্ডে অনুপ্রবেশ করত না।' অবশ্য তিনি বক্তব্যের সমর্থনে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনও দাবি করেছেন, রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাতে ইউক্রেনকে সবুজ সংকেত দিয়েছে আমেরিকা নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোটভুক্ত দেশগুলো। তবে আমেরিকা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হোয়াইট হাউস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কুরস্কে হামলা চালানোর আগে আগাম কোনো তথ্য ইউক্রেন তাদের দেয়নি এবং এতে আমেরিকা দায়ী নয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সিনিয়র সহযোগী মিখাইলো পোদোলিয়াক শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখন্ড দখল করতে চায় না। রাশিয়ায় তাদের অনুপ্রবেশের মূল উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো মস্কোকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা।

রাশিয়াকে সুষ্ঠু আলোচনা প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত করতে কুরস্কে কীভাবে সামরিক হাতিয়ার ব্যবহার হচ্ছে, সেটি স্পষ্টতই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে উলেস্নখ করে পোদোলিয়াক বলেন, 'ইউক্রেনের এ হামলা রাশিয়ার জনমতকেও প্রভাবিত করবে। কারণ রাশিয়া স্পষ্টতই ভীত। ইউক্রেনীয় বাহিনীর রুশ ভূখন্ডে ঢুকে পড়ার সক্ষমতা দেখে তারা হতবাক হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার জনগণের মনস্তত্ত্বে নেতিবাচক পরিবর্তন আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রে আরেকটি যুক্তি দাঁড় করাবে।'

তবে রাশিয়া বলেছে, পশ্চিমাদের সমর্থনে রুশ ভূখন্ডে কিয়েভের 'সন্ত্রাসী আক্রমণ' যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করবে না। সেই সঙ্গে এটা স্পষ্ট করে বলেছে, রাশিয়ার ভেতরে পশ্চিমা-সমর্থিত ইউক্রেনীয় আগ্রাসন সর্বাত্মক বৈশ্বিক যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। দেশটির পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্য মিখাইল শেরেমেট শুক্রবার এ কথা বলেন।

মিখাইল শেরেমেট এক বিবৃতিতে বলেন, পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের উপস্থিতি, বেসামরিক অবকাঠামো আক্রমণে পশ্চিমা গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি রাশিয়ার ভূখন্ডে আক্রমণে বিদেশিদের অংশগ্রহণের অকাট্য প্রমাণ। এসব বিবেচনায় যে কেউ উপসংহারে পৌঁছাতে পারে, বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে