শ্রীলংকর আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে সবুজ সংকেত দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে শ্রীলংকায়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনে প্রার্থিতা করবেন রনিল বিক্রমাসিংহেসহ মোট ৩৯ জন প্রার্থী। এই প্রার্থীদের মধ্যে দুইজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীও রয়েছেন। দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ অধু্যষিত শ্রীলংকায় বর্তমানে মোট ভোটার রয়েছেন এক কোটি ৭০ লাখের বেশি। তথ্যসূত্র : রয়টার্স
বৃহস্পতিবার রনিল বিক্রমাসিংহে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'এই মুহূর্তে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা। এই কাজটি আমরা শুরু করেছি; কিন্তু শেষ করতে হলে জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে ভোটাররা আমাকে সমর্থন করবেন।'
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেরই আগামী নির্বাচনে রনিলের জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। ৭৫ বছর বয়সি রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট হন ২০২২ সালের ২২ জুলাই। এক সপ্তাহ ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট থাকার পর এই পদে আসেন তিনি। তার আগে ওই বছরের ১১ মে রনিলকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন তার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হন গোতাবায়া রাজাপাকসে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার বড়ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে। গোতাবায়া-মাহিন্দা সরকার গঠনের পরের বছর শুরু হয় করোনা মহামারি। সেই মহামারিকালে পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে নেতৃত্ব দিতে চরম ব্যর্থতা, সরকারি তহবিল থেকে বেহিসেবি অর্থ ব্যয় এবং সরকারের ভুল নেতৃত্বের ফলে দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকে যায়। এতে ২০২১ সালের শেষদিক থেকে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে শ্রীলংকা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ আমদানির মতো অর্থও ছিল না দেশটির।
এ অবস্থার এক পর্যায়ে সাধারণ জনগণের চরম বিক্ষোভের মুখে ২০২২ সালের জুলাই মাসে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান গোতাবায়া। তিনি দেশত্যাগের পর পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতাদের ভোটে শ্রীলংকার নতুন প্রেসিডেন্ট হন রনিল এবং গোতাবায়া সরকারের সাংবিধানিক মেয়াদের বাকি দুই বছর পূর্ণ করেন।
এই দুই বছর ছিল শ্রীলংকার সংকটে জর্জরিত মৃতপ্রায় অর্থনীতির স্থিতিশীলতার পথে যাত্রার বছর। রনিলের আমলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২৯০ কোটি জরুরি ঋণ পায় দেশটি সরকার। এ ছাড়া ভারত, চীন ও জাপানসহ বিভিন্ন মিত্র দেশও ঋণ ও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে।
২০২৩ সালে দুই দশমিক তিন শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল শ্রীলংকার অর্থনীতি। তার আগের বছর ২০২২ সালে সংকোচনের হার ছিল সাত দশমিক তিন শতাংশ। বর্তমানে অবশ্য সেই পর্যায় পার করেছে শ্রীলংকা। দেশটির অর্থনীতিবিদদের ধারণা, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে অর্থনীতির। তবে তারপরও দেশটির বকেয়া বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ থাকবে অন্তত এক হাজার ২৫০ কোটি ডলার।