গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে ১৭৩টি ভাষণে অন্তত ১১০ বার 'ইসলামোফোবিক' মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনই দাবি করেছে আমেরিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন 'হিউম্যান রাইটস ওয়াচ'। বুধবার, ১৪ আগস্ট একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা। সংগঠনের এশিয়া ডিরেক্টর এলাইন পিয়ার্সন বলেছেন, 'ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি নেতারা তাদের প্রচারে স্পষ্টতই মিথ্যা অভিযোগ করেছেন মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পর্কে। মোদি প্রশাসনের অধীনে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এক দশকের আক্রমণ এবং এই ধরনের বৈষম্যমূলক বক্তৃতাগুলো মুসলমান, খ্রিষ্টান এবং অন্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনকে আরও স্বাভাবিক করে তুলেছে।' তথ্যসূত্র : দ্য ওয়্যার, দ্য হিন্দু
উলেস্নখ্য, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলেছিল প্রধানমন্ত্রীর 'মঙ্গলসূত্র' মন্তব্য। রাজস্থানের একটি সভায় গিয়ে তিনি বলেন, 'কংগ্রেস বলেছিল- দেশের সম্পদের ওপর মুসলমানদের অধিকার সবার আগে। দেশের সম্পদ বণ্টন করা হবে তাদের মধ্যে, যাদের পরিবারে বেশি সন্তান রয়েছে। কংগ্রেসের ইশতেহারেই বলা হয়েছে, মা-বোনদের সোনার গহনার হিসাব করে সেই সম্পদ বিতরণ করা হবে। মনমোহন সিংয়ের সরকার তো বলেই দিয়েছে, দেশের সম্পদে অধিকার মুসলমানদেরই। আপনাদের মঙ্গলসূত্রটাও বাদ দেবে না।' এখানেই শেষ নয়। এছাড়াও নানা জনসভায় মোদিকে এই ধরনের মন্তব্য করতে শোনা যায়।
যদিও পরে মোদি দাবি করেন, তার মন্তব্যের অপব্যাখ্যা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি স্তম্ভিত। কে বলল অনুপ্রবেশকারী আর বেশি সন্তানের প্রসঙ্গ তোলা মানেই মুসলমানদের কথা বলা হচ্ছে? এই সমস্যা দরিদ্র হিন্দু পরিবারেও রয়েছে। আমি কখনো হিন্দু বা মুসলমানের নাম নিইনি। আমি কখনই হিন্দু-মুসলমানে বিভেদ সৃষ্টি করব না এবং এটা আমার গ্যারান্টি।' তার আরও দাবি ছিল, হিন্দু-মুসলমান নিয়ে কথা বললে সামাজিক জীবনে আর থাকতে পারবেন না।
সেই সময় কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী মোদিকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, 'গত ১০ বছর ধরে তো হিন্দু-মুসলমানই করে আসছেন। সারা পৃথিবীর সামনে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছেন উনি। আজকে কি সেটা অস্বীকার করতে চাইছেন? হঠাৎ করে তিনি কী করে দাবি করেন যে, ওই মন্তব্যগুলো করেননি?' নির্বাচনের সময়ের সেই বিতর্কই যেন নতুন করে উঠে এলো হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে।
অবিশ্বাস্য রকমের মিথ্যাবাদী মোদি!
এর আগেও এমন অভিযোগ এসেছিল মোদির বিরুদ্ধে। ১৯৯৫ সাল। ওই বছর ভারতে বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারনেটসেবা চালু হয়। অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাকি ১৯৮৮ সালের দিকেই ই-মেইল ব্যবহার করতেন। ২০১৯ সালের মে মাসে হিন্দিভাষী টেলিভিশন চ্যানেল 'নিউজ নেশন'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
মোদির সাক্ষাৎকারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে টুইটারে মোদিকে একেবারে 'ধুয়ে দেওয়া' হয়। সমালোচকদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিরা ছিলেন। কেউ কেউ মোদিকে আখ্যায়িত করেছেন, অবিশ্বাস্য রকমের মিথ্যাবাদী বলে। আবার কেউ বলছেন জাতিকে লজ্জায় ডুবিয়েছেন তিনি। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আর বিশ্বাস করা যায় না বলেও তখন মন্তব্য আসে।