শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১
ইসরাইলের গাজা আগ্রাসন

অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে যুদ্ধবিরতি

যুদ্ধবিরতি কার্যকরে চারটি কঠিন শর্ত দিলেন নেতানিয়াহু গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য ইসরাইল দায়ী : জাতিসংঘ
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ইসরাইলি হামলায় ঘরবাড়ি সবই হারিয়ে এক ফিলিস্তিনি নারী তার শিশুসন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন খান ইউনিসের একটি কবরস্থানে -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে দফায় দফায় আলোচনা করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। সবশেষ বৃহস্পতিবার কাতার, মিসর ও আমেরিকার মধ্যস্থতায় কাতারের দোহায় আরেক দফা আলোচনা হয়েছে ইসরাইলের সঙ্গে। তবে সেই আলোচনা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চারটি কঠিন শর্তারোপ করায়। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স

নেতানিয়াহুর শর্তগুলো হলো- উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে ভাগ করে গাজায় নতুন করে ইসরাইলি বাহিনী 'নেতজারিম করিডোর' তৈরি করেছে। মধ্য গাজা থেকে উত্তর গাজায় সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের এই করিডোর অতিক্রম ঠেকানো নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো- মিসর সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফিয়া করিডোর এবং মিসর ও গাজার মধ্যকার রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের হাতে থাকবে। গত মে মাস থেকে এই করিডোর ও ক্রসিং নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইল। তৃতীয় শর্ত, গাজায় কতজন ইসরাইলি বন্দি জীবিত আছেন, সে তথ্য দিতে হবে হামাসকে; আর তাদের বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। আর চতুর্থ শর্ত হলো, হামাস মুক্ত করতে চায়, এমন যে কোনো বন্দির মুক্তির বিষয়টি নাকচ করে দেওয়ার অধিকার চায় ইসরাইল। একই সঙ্গে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠাতে চায় দেশটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর এই কঠিন শর্ত আরোপের ফলে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য

ইসরাইল দায়ী : জাতিসংঘ

এদিকে, অবরুদ্ধ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়াকে একটি 'ভয়ানক বিষয়' উলেস্নখ করে জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে রক্ষা করা উচিত। গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজারে পৌঁছার বিষয়ে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এ কথা বলেন।

তিনি এ সময় জোর দিয়ে বলেছেন, আজ সারা বিশ্বের জন্য এটি একটি তিক্ত ও বেদনাদায়ক ঘটনা। এ অকল্পনীয় পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত শিশু-হত্যাকারী ইসরাইলের যুদ্ধংদেহী মনোভাব ও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করা এবং তাদের হত্যা করা যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলের জন্য যুদ্ধের বিজয় নয় এবং কোনো সাফল্যও নয়। তবে এই নৃশংস হত্যাকান্ড ও নজিরবিহীন অপরাধযজ্ঞ দখলদার ইসরাইল ও তার সমর্থক পাশ্চাত্য বিশ্বের জন্য কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে এবং ইতিহাস থেকে তা কখনো মুছে যাবে না।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৪০ হাজার পাঁচজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯২ হাজার ৪০১ জন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর স্বাধীনতাপন্থি সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলের ভূখন্ডে ঢুকে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছিল। হামাসের হামলায় নিহত ইসরাইলির সংখ্যা ছিল প্রায় ১২০০। তা ছাড়া দুই শতাধিক ইসরাইলি নাগরিককে পণবন্দি করে নিয়ে গিয়েছিল হামাস। তার পরেই এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ইরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার পণ করেছেন তিনি। গত অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস হয়েছিল। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি সেনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে