শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

হামলার সিদ্ধান্তে অটল ইরান

যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান

ইসরাইলে হামলা থেকে পিছু হটতে বলার পশ্চিমা আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তার শপথগ্রহণের দিনই তেহরানে অতিথি হয়ে আসা হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হত্যার জবাব দেওয়ার অধিকার তার দেশের রয়েছে।

মঙ্গলবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের নেতারা ইরানকে পিছু হটতে বলার যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে রাজনৈতিক যুক্তির অভাব রয়েছে এবং তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার গত সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান। ইউরোপীয় নেতারা হামাসের হাতে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার ও গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধা দূর করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তারা ইরান ও তার মিত্রদের ইসরাইলে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে বলেন। তাদের মতে, এতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যাবে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তেহরানকে হামলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

হোয়াইট হাউস সতর্ক করে বলেছে, ইরান ও তাদের সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দ্রম্নতই ইসরাইলে 'উলেস্নখযোগ্য হামলা' চালাতে পারে। একই ধারণা পোষণ করে ইসরাইল।

গত ৩১ জুলাই হামাসপ্রধান হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, তেহরানে তিনি যে অতিথিশালায় অবস্থান করছিলেন, সেখানে স্বল্পপালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হানিয়া তেহরানে গিয়েছিলেন। তার নিহত হওয়ার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে বৈরুতে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর একজন শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করে ইসরাইল। পরপর এ দুই নেতাকে হত্যায় প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান ও তার মিত্র হিজবুলস্নাহ।

এদিকে ওই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলের পক্ষে নিজেদের সমর্থন দেখাতে দ্রম্নত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ডুবোজাহাজ ও বিমানবাহী রণতরি ওই অঞ্চলে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।

ইরানের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে বলেছেন, গত জুলাই মাসে হানিয়াকে হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়াকে অধিকার বলে মনে করে ইরান। ভবিষ্যতে ইসরাইলি আগ্রাসনকে নিরুৎসাহিত করতে এটাই সঠিক পথ। ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, গত সোমবার স্টারমারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন পেজেশকিয়ান।

প্রতিশোধ ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি ইসরাইলের

এদিকে, ইরানের হুমকির মুখে প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসরাইল। টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান যদি ইসরাইলে হামলা চালায়, তবে ইসরাইলও পাল্টা হামলা চালাবে ইরানে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের এ কথা জানিয়েছে ইসরাইল। ইরানের হামলায় যদি ক্ষয়ক্ষতি না হয়, তবু পাল্টা হামলা দিয়েই এর জবাব দিতে চায় ইসরাইল। এদিকে ইসরাইলকে রক্ষায় পরিপূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গোয়েন্দারা সতর্ক করে বলেছেন, শিগগিরই ইরান ও তার মদদপুষ্ট সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হামলা চালাতে পারে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, এ সপ্তাহের মধ্যেই হামলা ঘটনা ঘটতে পারে। ইসরাইলের পাল্টা হামলার ব্যাপক প্রস্তুতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এ সতর্কতা জারি করল।

হিজবুলস্নাহর হামলা

ইসরাইল দাবি করেছে, গতকাল লেবানন থেকে ইসরাইলে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। তাদের আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ওই হামলা প্রতিহত করেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী প্রতিবেশী লেবাননে টহল বাড়িয়েছে এবং প্রতিদিন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি হিজবুলস্নাহর আবাসস্থল লেবাননে বিমান টহল বৃদ্ধি এবং হুমকি অপসারণের লক্ষ্যে চলমান হামলার ঘোষণা দিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। মধ্যস্থতাকারীরা ইসরাইল ও হামাসকে বৃহস্পতিবার আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। ইসরাইল বলেছে, তারা হামাসকে আলোচনায় টেবিলে ফেরার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছে।

ইসরাইলকে আরও অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র

অন্যদিকে, ইসরাইলকে আরও দুই হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠীর চাপ সত্ত্বেও ইসরাইলকে অব্যাহত অস্ত্র সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। এতে প্রতিনিয়ত প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের। ১০ মাসের বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ উপত্যকায় হামলা চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন ফের যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা এল। গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল হামলা শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৯২৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯২ হাজার ২৪০ জন।

ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের দূত রিয়াদ মনসুর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) জরুরি বৈঠকে বলেছেন, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে ইসরাইল আপনাদের নিন্দাকে পাত্তা দেয় না।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ইউএনএসসিকে জানিয়েছে, গাজা শহরের একটি স্কুলে সাম্প্রতিক হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এ ধরনের হামলা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে।

এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের আরও বেশকিছু এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার আদেশ দিয়েছে ইসরাইল। কারণ সেখানে হামলা চালানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে