রুশ ভূখন্ডে এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নেওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেনের সেনারা। ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক শুরুর পর এই প্রথম কিয়েভের সেনারা শত্রম্নভূমির অনেকখানি ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হয়েছে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনারা গত সপ্তাহে (৬ আগস্ট) হঠাৎ করেই ঢুকে পড়ে। এরপর সাত দিনে কুরস্কে ইউক্রেন আক্রমণাত্মক অভিযান চালিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন কমান্ডার ওলেক্সান্দর সিরস্কি। প্রথমে কুরস্কে ঢোকার পর ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়া ভূখন্ডের ১৮ মাইল এলাকায় অগ্রসর হয়। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা
ইউক্রেনের 'কমান্ডার ইন চিফ' বলছেন, তাদের বাহিনীর দখলে রয়েছে রাশিয়ার ভূখন্ডের এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। যদিও তাদের এই দাবি নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আমেরিকার যুদ্ধবিষয়ক একটি থিংকট্যাংক ইন্সটিটিউট বলেছে, তারা মনে করে না যে, এই পুরো এলাকা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার মাটিতে ইউক্রেনীয় সেনাদের এই অগ্রযাত্রা তাদের মনোবল বাড়ালেও এই যুদ্ধকৌশল নেওয়ার কারণে ইউক্রেন নতুন করে বিপদে পড়তে পারে।
ইউক্রেনের সেনারা কুরস্কে ঢোকার পর সেখানকার ২৮টি গ্রাম দখলে নিয়েছে বলে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠককালে সোমবার জানান সেখানকার ভারপ্রাপ্ত গভর্নর অ্যালেক্সেই শ্রিমভ। ১২ জন নিহত হওয়ার কথাও জানান তিনি। লড়াইয়ের মুখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। শ্রিমভ বলেছেন, রাশিয়ার নেতাকে ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনারা রাশিয়ার ভূখন্ডে ১২ কিলোমিটার এলাকায় অগ্রসর হয়েছে এবং ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। অঞ্চলটির গভর্নর বলেছেন, এখন পর্যন্ত এক লাখ ২১ হাজার লোককে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রায় দুই হাজার রাশিয়ান নাগরিক এ অঞ্চলের ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলকৃত এলাকায় রয়ে গেছে।
যুদ্ধ এখন রাশিয়ার ঘরে ফিরছে : জেলেনস্কি
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, 'রাশিয়া অন্যদের কাছে যুদ্ধ নিয়ে গেছে এবং এখন এটি তাদের ঘরেই ফিরছে।' সোমবার রাতে নিয়মিত ভাষণে তিনি এ কথা বলেছেন। জেলেনস্কি বলেছেন, 'রাশিয়ার সন্ত্রাসীরা যেখানে আছে, যেখান থেকে তারা হামলা চালায় সেখানেই তাদের ধ্বংস করা ন্যায্য।'
জেলেনস্কি বলেন, 'আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটি শান্তিকে কাছাকাছি আনার জন্য কতটা কার্যকর হতে পারে। পুতিন যদি এমন খারাপভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, তবে রাশিয়াকে অবশ্যই শান্তিতে বাধ্য করতে হবে।' তিনি জানান, কমান্ডার-ইন-চিফ ওলেক্সান্ডার সিরস্কি 'কুরস্ক অঞ্চলে অভিযান' সম্পর্কে তাকে অবহিত করেছেন এবং রাশিয়ান অঞ্চলের এক হাজার বর্গকিলোমিটার এখন ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গত সপ্তাহে সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণ শুরু করেছিল ইউক্রেন। প্রায় আড়াই বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর এই প্রথম শত্রম্নর ভূমিতে এত বৃহৎ আকারে পাল্টা অভিযান চালাচ্ছে কিয়েভ।
ইউক্রেনকে সমুচিত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি পুতিনের
তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন ইউক্রেনের এই আক্রমণকে বড় ধরনের উসকানি আখ্যা দিয়েছেন এবং শত্রম্নদের রাশিয়ার বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য রুশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এমন অবস্থায় রাশিয়ায় অনুপ্রবেশের দায়ে ইউক্রেনকে সমুচিত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
পুতিন আরও বলেছেন, ইউক্রেন এই কাজ করেছে রাশিয়ার মানুষ যাতে ক্ষুব্ধ হয় এবং তাদের স্থায়িত্বে যাতে আঘাত লাগে। তাছাড়া কিয়েভ সামরিক দিক থেকে রাশিয়াকে হারাতে চাইছে। কিন্তু তার ফল উল্টো হবে। দোনেৎস্কে রাশিয়ার অভিযান বহাল থাকবে। ইউক্রেন যে ভাবছে, এভাবে শান্তি আলোচনায় তারা সুবিধা পাবে, সেটা হবে না।
ইউক্রেনের এই আক্রমণে প্রথমে স্পষ্টতই অবাক হলেও মস্কো এই অনুপ্রবেশ দমন করার জন্য নিজস্ব সেনা মোতায়েন করে সামরিকভাবে পাল্টা আঘাত করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার বলেছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত বাহিনী কুরস্কে পৌঁছেছে। তবে কত সংখ্যক সেনা সেখানে দেশটি পাঠিয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়নি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া
ইউক্রেনের পুর্বাঞ্চলীয় পোকরোভস্কে গত ২৪ ঘণ্টায় রুশ হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। মঙ্গলবার ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত সপ্তাহের মধ্যে রণক্ষেত্রে গতদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক লড়াই হয়েছে। রণক্ষেত্রের নিয়মিত অগ্রগতির প্রতিবেদনে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, পোকরোভস্কে ৫২টি স্থানে লড়াই চলছে। বিগত সপ্তাহে হামলার সংখ্যা ছিল দিনে ২৮ থেকে ৪২টি। সেনাবাহিনী আরও বলেছে, মূলত এ অঞ্চলের কেন্দ্রস্থল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে হ্রোদিভকা ও ঝেলান্নে গ্রাম এবং এর আশপাশে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রমণ বেশি হয়েছিল।