শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
রাশিয়া-ইউত্রেন যুদ্ধ

রুশ ভূখন্ডে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা

কুরস্ক শহরের ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ইউক্রেনের সেনা অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছে মস্কো পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একে অপরকে দোষারোপ কিয়েভ-মস্কোর
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
রাশিয়ার কুরস্কে ইউক্রেনের সাঁজোয়া যান

ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল কুরস্কের ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে বলে জানিয়েছে মস্কো। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে রাশিয়ার কুরস্ক শহরে প্রবেশ করে ইউক্রেনীয় সেনারা। সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলটিতে ট্যাংকসহ অন্যান্য ভারী অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে তারা। কুরস্কের হামলাকে উসকানিমূলক হিসেবে দেখছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি, গার্ডিয়ান

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় রুশ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এটিই রাশিয়ার ভূখন্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের সবচেয়ে গভীর এবং সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য অনুপ্রবেশ। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এ ঘটনার মাধ্যমে রাশিয়ার শান্তিপূর্ণ জনগণকে ভয় দেখানোর জন্য কিয়েভকে অভিযুক্ত করেছেন। আকস্মিক হামলায় অপ্রস্তুত রাশিয়া তোলপিনো এবং ওবশচি কোলোদেজ গ্রামের কাছে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে। এই দুটি গ্রাম রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

কয়েক দিন আগে কুরস্কে ইউক্রেনের সেনা ঢুকে পড়ে বলে জানায় রাশিয়া। এরপর রাশিয়ার পক্ষ থেকে কুরস্কে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এই অঞ্চলের সীমান্ত এলাকা থেকে ৭৬ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া।

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার সন্ধ্যায় বলেছেন, রাশিয়া এই কুরস্ক থেকে প্রায় দুই হাজারবার সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেনে হামলা করেছে। তারই একটি ন্যায্য প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া গোলা, মর্টার, ড্রোনের মাধ্যমে আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণের একটি ন্যায্য প্রতিক্রিয়া দরকার ছিল।

ইউক্রেনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, হাজার হাজার সেনা এই অভিযানে নিয়োজিত রয়েছে। রুশ সীমান্ত রক্ষীদের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে যে ছোট অনুপ্রবেশের কথা বলা হয়েছিল, এই সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি।

রাশিয়ার কুরস্কের সঙ্গে ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলটি অবস্থিত। বার্তা সংস্থা 'এএফপি'র সাংবাদিক সেখানে ইউক্রেনের সেনাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্র দেখতে পেয়েছেন। সুমির এক বাসিন্দা বলেছেন, রাশিয়ায় তাদের সেনারা যে হামলা চালিয়েছে, এতে তিনি খুশি। কারণ, এতে করে রাশিয়ার মানুষ বুঝতে পারবে- যুদ্ধ আসলে কেমন।

কুরস্কের ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক গভর্নর আলেক্সেই স্মিরনভও বলেছেন, শনিবার গভীর রাতে কুরস্কের আঞ্চলিক রাজধানীর একটি বহুতল ভবনে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

উলেস্নখ্য, রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করতে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা কুরস্কে এখনো অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযানের ষষ্ঠ দিনে ইউক্রেনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, 'আমরা আক্রমণাত্মক অবস্থানে রয়েছি। আমাদের লক্ষ্য শত্রম্ন সেনাদের মোতায়েনকে বিস্তৃত করা ও সর্বাধিক ক্ষতিসাধন এবং রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করে তোলা। ইউক্রেনের ওই কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এই অভিযান তাদের মনোবল বাড়িয়েছে এবং ইউক্রেনীয় বাহিনী, রাষ্ট্র ও সমাজের মনোবল বৃদ্ধি করেছে। তিনি আরও বলেন, 'এটি প্রমাণ করছে, আমরা আক্রমণাত্মক এবং এগিয়ে যেতে পারি। মনে হচ্ছে রুশরা সমন্বয় ও প্রস্তুতির জটিলতায় ভুগছে।'

পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রে আগুন

একে অপরকে দোষারোপ

এদিকে, রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করছে কিয়েভ ও মস্কো। রোববার এই বিদু্যৎকেন্দ্রের কুলিং টাওয়ারে আগুন লাগে। অগ্নিকান্ডের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বিদু্যৎকেন্দ্রে রুশবাহিনী আগুন দিয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ক্রেমলিনে নিযুক্ত জাপোরিঝিয়ার গভর্নর ইয়েভগেনি বালিতস্কি বলেন, ইউক্রেনীয়দের বোমাবর্ষণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ইউরোপের বৃহত্তম এই পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রটি জাপোরিঝিয়া শহরে অবস্থিত। ইউক্রেনের এই অঞ্চল দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, রোববার স্থাপনাটি থেকে 'গাঢ় কালো ধোঁয়া' নির্গত হতে দেখা গেছে। তবে কোনো পারমাণবিক নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানা যায়নি বলে তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে