আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে গণপ্রত্যাবাসন
ট্রাম্প প্রশাসন (ক্ষমতায় এলে) দুটি কাজ করতে পারে। একটি হলো সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। আরেকটি হলো অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো। এটি করতে হলে, ট্রাম্পকে তার আগে ক্ষমতায় এসে যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা আবার কার্যকর করতে হবে। মূলত মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ ছাড়া তিনি ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তায় ব্যাপক অভিযান চালাতে পারেন। আটক করে অনিয়মিত অভিবাসীদের একটি ক্যাম্পে রাখতে পারেন এবং আইনের আশ্রয় নেওয়ার আগেই তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বিমানে উঠিয়ে দিতে পারেন। এ ছাড়া দেশটির ১২৫ বছরের পুরনো নিয়ম, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার যে অধিকার, সেটাও বাতিল করতে পারেন ট্রাম্প...
প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
আমেরিকায় আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় গণপ্রত্যাবাসনে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। 'এখনই গণ-প্রত্যাবাসন'- এক রিপাবলিকার ন্যাশনাল কনভেনশনে এমনটাই লেখা ছিল। এই বার্তা অবশ্য অভিবাসন বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রম্নতির প্রতিফলন। যদিও দলের অনেকেই এ ধরনের বার্তায় অপ্রস্তুত হয়েছেন। যেমন টেক্সাসের রিপাবলিকান কর্মী লাওরেন বি. পেলা। তিনি বলেন, কনভেশনে ট্রাম্পের গণপ্রত্যাবাসনের কথা এবং সেই সঙ্গে কিছু শব্দ, যেমন 'অবৈধ' এবং 'অনধিকার প্রবেশ' শুনে অস্বস্তি লাগছিল। তথ্যসূত্র : রয়টার্স
পেলা বলেন, 'ট্রাম্প আসলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা সব পরিবারকেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন না। গণপ্রত্যাবাসন বলতে তিনি অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর কথাই বলছেন।'
কিন্তু মনে হচ্ছে ট্রাম্প ও তার উপদেষ্টাদের পরিকল্পনা ভিন্ন। নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে গণপ্রত্যাবাসনের ইসু্যটিকে রেখে তারা হয়তো ১৯৫০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্টের নেওয়া প্রত্যাবাসন নীতিকে অনুসরণ করতে চান। 'অপারেশন ওয়েটব্যাক' শীর্ষক ওই নীতিকে অনেকে 'বর্ণবাদী দোষযুক্ত' বলে থাকেন। এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রত্যাবাসন করতে তিনি দেশটির ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তা নেবেন এবং প্রয়োজনে তিনি দেশটির সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেবেন।
আমেরিকায় মোট অভিবাসীর সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি। ধারণা করা হয়, এর একটা বড় অংশের দেশটিতে থাকার স্থায়ী আইনি কাগজ নেই।
অভিবাসীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প কী ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা অনুমান করা যায় তার এক সহকারী স্টেফান মিলারের কথায়। স্টেফান মিলার দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতায় গেলে হোয়াইট হাউসে একটি সিনিয়র পদে নিযুক্ত হতে পারেন তিনি। মিলারের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন (ক্ষমতায় এলে) দুটি কাজ করতে পারে। একটি হলো, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া। আরেকটি হলো অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো। এটি করতে হলে, ট্রাম্পকে তার আগে ক্ষমতায় এসে যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তা আবার কার্যকর করতে হবে। মূলত মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কিছু দেশের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ ছাড়া তিনি ন্যাশনাল গার্ডের সহায়তায় ব্যাপক অভিযান চালাতে পারেন। আটক করে অনিয়মিত অভিবাসীদের একটি ক্যাম্পে রাখতে পারেন এবং আইনের আশ্রয় নেওয়ার আগেই তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বিমানে উঠিয়ে দিতে পারেন। এ ছাড়া দেশটির ১২৫ বছরের পুরনো নিয়ম, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার যে অধিকার, সেটাও বাতিল করতে পারেন ট্রাম্প।
ডেমোক্রেটরা বলছে, অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্পের এই ভাবনা ও প্রচারণা ল্যাটিনো ভোটারদের কাছে টানতে পারে। দক্ষিণ টেক্সাসে একটি বড় অংশে ল্যাটিনো আমেরিকানদের বাস। সেখানকার ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি ভিসেন্তো গঞ্জালেজ বলেন, ভোটাররা সীমান্তে আরও ভালো ব্যবস্থাপনা দেখতে চান। উপযুক্ত নীতি অবলম্বন করে অনেক কিছুই করা যেতে পারে। তার কথায়, এর ফলে হয়তো সীমান্তে অভিবাসীদের আগমন কমে আসবে। কিন্তু গণপ্রত্যাবাসন ঘটনা হবে হৃদয় বিদারক।
এদিকে, হিসপানিক ভোটারদের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কম নয়। ২০০২ সালে সেই ভোটারদের ৩৫ ভাগ পেয়েছিলেন ট্রাম্প।
তারপরও অনেকেই এমন প্রচারণায় একমত নন। নিজেকে বহুজাতির হিসপানিক পরিচয় দেওয়া পেলা বলেন, বর্তমান সরকারের অনেক নীতিই নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়ক নয়। তিনি জানান, তার রিপাবলিকান সহকর্মীরা যখন এ বিষয়ে আলোচনা করে, বৈধ কাগজপত্র না থাকায় শিশুদের স্কুলে যেতে দেওয়া হবে না। সেটা বেশ কষ্টকর। তিনি বলেন, 'একজন হিসপানিকের কাছে এটা খুব অস্বস্তিকর একটি ইসু্য। আমার মনে হয়, আমাদের এই লোকগুলোকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।'
উইসকনসিনের 'হিস্পানিক চেম্বার অব কমার্স'র সিইও জর্জ ফ্রাঙ্কো বলেন, 'উইসকনসিনের দুগ্ধ ও কৃষি খাতে সবচেয়ে কঠিন কাজ করা ৭৫ হাজারের বেশি অভিবাসী যদি আগামীকাল চলে যায়, তাহলে অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতি থমকে যাবে।'
এদিকে, ডেমোক্রেটরা মনে করেন, ট্রাম্পের হুমকি এখন ল্যাটিনো ভোটারদের অনুপ্রাণিত করছে। ডেমোক্রেট কমলা হ্যারিসকে সমর্থনকারী একটি নেতৃস্থানীয় ভোটার নিবন্ধন সংস্থা ভোটো ল্যাটিনোর সিইও মারিয়া তেরেসা কুমার বলেছেন, 'গণনির্বাসন অনেককে উচ্চ সতর্কতার মধ্যে রেখেছে।'
হ্যারিসের সঙ্গে জোটবদ্ধ অন্যান্য গ্রম্নপের মতো, ভোটো ল্যাটিনো ডেমোক্রেটিক টিকিটের শীর্ষে উঠে আসার পর থেকে আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে দেখেছে। তেরেসা কুমার বলেছিলেন, বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না, এ কথা ঘোষণার পর থেকে সংস্থাটির প্রায় ৩৬ হাজার ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন।'
টেক্সাসের দক্ষিণ প্রান্তে ল্যাটিনো অধু্যষিত জেলায় ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি ভিসেন্তে গঞ্জালেজ বলেন, ভোটাররা সীমান্তে আরও ভালো ব্যবস্থাপনা দেখতে চান, কিন্তু একই সময়, অনেকেরই এমন বন্ধু বা পরিবারের সদস্য রয়েছেন, যাদের ঠিকমতো অভিবাসন নথিপত্র নেই। তার কথায়, 'ভালো নীতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও অনেক কিছু করা যেতে পারে, যা সীমান্ত পারাপার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। কিন্তু গণনির্বাসন মানুষের কাছে তীব্র যন্ত্রণার।'